ভোলার চরাঞ্চলে চলছে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব

অচিন্ত্য মজুমদার
Published : 24 Jan 2012, 04:37 PM
Updated : 24 Jan 2012, 04:37 PM

ভোলার উপকুলে শীত মৌসুমে মেঘনা তেঁতুলিয়া আর সাগর মোহনার বিভিন্ন চরাঞ্চলে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব চলছে।

একটি চক্র লোক- চোখের আড়ালে বিষ মিশ্রিত খাবার দিয়ে নিবিঘ্নে পাখি নিধন করছে। পরে ওই সব পাখির মাংস বিভিন্ন হাট কাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

২৪ জানুয়ারী মঙ্গলবার সরেজমিনে লালমোহনের কচুয়ার চরে গিয়ে দেখা যায়, বিষ প্রয়োগে অসংখ্য অতিথি সৈকত পাখি মেরে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। চরের বিস্তীর্ন এলাকায় এভাবে পাখি নিধন করে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করার পাশপাশি বিষযুক্ত পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি এ সকল পাখির মাংস বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে বলে চরবাসী জানায়। তবে এতে করে মানুষের মৃত্যু ঝুকি তৈরী হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

স্থানীয়রা জানান, চরাঞ্চল থেকে নিধনকৃত পাখি বস্তায় ভরে শহরাঞ্চলেও আনা হচ্ছে। গত বছরের ন্যায় এবারও যেন পাখি নিধনের মহোৎসব চলছে এমন অভিযোগ করেন দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কলেজ শিক্ষক মাকসুদুর রহমান, এসএম বাকের খান।

তারা জানান, ভেলুমিয়া দক্ষিণ পাশে টেরগা চরে বিষ দিয়ে পাখি মারা হচ্ছে , তা পরে বিক্রি করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে পাখি নিধন চলত জাল টানিয়ে বা গুলি করে। কিন্তু এবার পাখিদের বিষ মেশানো ধান ছিটিয়ে দিয়ে পাখি নিধন করা হচ্ছে।

একই অভিযোগ করেন পাখি নিয়ে গবেষনা করেন এমন দু'জন, লালমোহনের কবি রিপন শান, সংবাদকর্মী জসিম জনি।

ভোলাসহ উপকূলীয় যে সব চরে পাখিদের ব্যবপক অবস্থান রয়েছে এগুলো হচ্ছে বঙ্গপোসাগরের কোল ঘেষা ভোলার মনপুরার চর নিজাম, ঢালচর, চরফ্যাশনের চর শাহজালাল, চর শাজাহান, কুকরির পশ্চিম চর, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, লালমোহনের কচুয়ার চর, মেঘনার মাঝের চর, শিবপুর চর, হাতিয়ার চর-বারি, নিঝুম দ্বীপ, দমার-চর, টেগরারচর।

এসব চরের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার বাগমারা চর, টেংরার চর, শিবপুর চর, মাঝের চর, বোরহানউদ্দিন উপজেলার মধ্যবর্তী তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ের পাতাবুনিয়ার চর, টেগরা চর, ইউনুছ চর, লালমোহনের কচুয়ার চর, চরফ্যাশনের চর পাতিলা এলাকায় ধানের সঙ্গে বিষ প্রয়োগ করে তা ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওই খাবার খেয়ে আগত অতিথি পাখি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তা জাল দিয়ে আটকে নিধন করা হচ্ছে। চরের মধ্যেই পাখি জবাই করে বস্তায় ভরে পরে বিভিন্ন বাজারে বিক্র করা হয়।

বাঘমারা চরে নিধনকৃত পাখি ভেলু মিয়া হয়ে কখনও কখনও জেলা শহরেও বিক্রি করতে আনা হচ্ছে। পাখি নিধন আইনী দ্বন্ডনীয় হলেও গ্রামের প্রভাবশলীদের সেল্টারে একটি চক্র ওই আইন মানছে না।

গত ১৩ জানুয়ারী থেকে ২০ জানুয়ারী পর্যন্ত বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ৯ পর্যবেক্ষকের একটি দল পাখি শুমারির লক্ষ্যে ট্রলার নিয়ে ৮দিন ভোলায় অবস্থান করেন। ওই দলের কাছেও স্থানীয়রা পাখি নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়।

ওই দলের সাথে থাকা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পাখি পর্যবেক্ষক ইনাম আল হক বলেন, মূলত শীত মৌসুমে আসা এসকল অতিথি পাখিরা কাঁদা-মাটি থেকে বিভিন্ন পোঁকা-মাকড় খেয়ে থাকে। ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের ফসলে কিটনাশক ব্যাবহারের এ সকল পাখিদের বিচরনক্ষেত্রগুলো রয়েছে চরম হুমকির মুখে। ওই সব ফসলের পোঁকা-মাকড় খেয়ে বহু পাখি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে।

জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান, বিষযুক্ত খাবার দিয়ে পাখি মারা বা নিস্তেজ করা যেমনি অপরাধ তেমনি ওই পাখির মাংস কোন প্রকারে শরীরের জন্য উপযুক্ত নয়। ওই বিষ শরীরেও ছড়াতে পারে।

ভোলা সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফরিদ আহম্মেদ জানান, এ ধরনের পাখির মাংস খেলে মৃত্যু হতে পারে। ওই ধরনের মাংস না খাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

জেলা প্রশাসক মোঃ মেসবাহুল ইসলাম জানান, পাখি নিধনকারী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদের পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি স্থানীয়দের প্রতি অনুরোধ জানান।