ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে ঘূর্নিঝড় আতংকে

অচিন্ত্য মজুমদার
Published : 10 June 2012, 02:21 PM
Updated : 10 June 2012, 02:21 PM

ভোলা জেলার দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে একদিকে সাগর ও তিনদিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। এই দ্বীপটির জন্ম কত সালে ইতিহাসবিদদের কাছে জানা নেই তারপরও তারা ধারনা করছেন এই দ্বীপ উপজেলাটি ভোলা জেলার জন্মেরও শত বছরের পুরনো। এখানে প্রথমে পূর্তগীজ জলদস্যুরা আস্তনা গড়ে। পরে সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নোয়াখালী, তজুমুদ্দিন, দৌলতখান, চরফ্যাসন, বাউফলের নদীভাঙ্গা মানুষ মনপুরা এসে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৯৭০ সাল থেকে ২০১১ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় মনপুরা উপজেলায় বর্তমানে দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। তিনদিকে মেঘনাবেষ্টিত আর একদিকে সাগর থাকায় মনপুরা রয়েছে দূর্যোগ ঝুকিতে। কিন্তু আজ পর্যপ্ত এখানে প্রযাপ্ত ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান না হওয়ায় সেখানকার লক্ষাধিক লোক রয়েছে আতংকে। সেখানকার ২৮টি জড়াজির্ন ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে র্দূযোগকালীন ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারলেও লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নেয়ার স্থান না থাকায় আতংকে রয়েছে স্থানীয়রা।

এক পরিসংখ্যানে জানাগেছে, ১৯৭০ সালে মনপুরা জনসংখ্যা ছিল ১০হাজার। ২০১২ সাল পর্যন্ত ৪২বছরে জনসংখ্যা বেড়ে দেড় লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় ও জলোশ্বাসে মনপুরা উপজেলা ১০ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়ে ছিল। এসব নিহতদের পরিবার আজো স্বজন হারানো ব্যাথা ভুলতে পারেনি।

সেই ভংকর জলোশ্বাসে অল্পতে বেঁচে যাওয়া হাজিরহাট ইউনিয়নের সাবেক মহিলা সদস্য মফিজা বেগম জানান, সেদিন তাকেও পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ১১ দিন পরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিদেশী জাহাজ তাকে জীবিত উদ্ধার করে চট্রগ্রাম বন্দরে রেখে যায়।

১৯৭০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত মনপুরায় মাত্র ৩৮টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। এর মধ্যে রেডক্রিসেন্ট নির্মান করেছে ৭টি, কারিতাস নির্মান করেছে ১৩টি যার মধ্যে একটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সুইজ মিশন নির্মান করেছে ২টি, ডিজাস্টার নির্মান করেছে ২টি, বিশ্বব্যাংক নির্মান করেছে ১টি। আর বর্তমান সরকার নির্মান করেছে স্কুল কাম ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ১০টি। এ বছর বিশ্বব্যাংকের আরো ২টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান করার কথা রয়েছে যার ১টি হবে বিচ্ছিন্ন কলাতলীচরে ও অপরটি দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নে। পুরোনো ২৮ টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ভাঙ্গা যা মানুষের আশ্রয় নেওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের ১০টি, হাসপাতালের ৫টি, থানার ৩টি, পশু হাসপাতালের ১টি, টিএন্ডটির ২টি, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রসা মিলিয়ে সর্বমোট ৮টি দোতলা ভবন রয়েছে। সর্বোপরী ২৮টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে (৫০০*২৮) ১৪ হাজার মানুষ র্দূযোগকালীন আশ্রয় নিতে পারবে। পাশাপাশি উপজেলার ১০টি ভবনে ১৩ হাজার, হাসপাতালের ৫টি ভবনে ৭ হাজার, থানার ৩টি ভবনে ৩ হাজার ৬শত, পশু হাসপাতালের ১টি ভবনে ২ হাজার, টিএন্ডটির ২টি ভবনে ২ হাজার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রসার ৮টি ভবনে প্রায় ১০ হাজারসহ সর্বোমোট র্দূযোগকালীন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। কিন্তু অবশিষ্ট লক্ষাধিক মানুষ দূর্যোগকালীন আশ্রয় নিতে না পারায় প্রাণহানীর আশংকার আতংকে রয়েছে স্থানীয়রা।

অন্যদিকে, মনপুরায় রেডক্রিসেন্টের কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে দূর্যোগকালীন আগাম খবর না পাওয়ার আশংকা করছে স্থানীয়রা। এব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে স্থানীয় সচেতন মহল।