তারেক রহমান, থামলে ভাল লাগে

আফরোজ
Published : 18 Dec 2014, 10:54 AM
Updated : 18 Dec 2014, 10:54 AM

ভারতের গত সাধারন নির্বাচনের সময় কংগ্রেস তাদের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে। রাহুল দলের বর্ষীয়ান রাজনীতিকদের এড়িয়ে একদল তরুনদের নিয়ে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করেন এবং তার ফলাফল হিসাবে কংগ্রেস বিরোধীদল হওয়ার জন্য যত আসন পাওয়া দরকার, তাও পেতে পারেনি।এমনকি প্রাথমিক ভাবে সোনিয়া গান্ধী (দু'টা সফল নির্বাচনের কান্ডারী) ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ছিলেন না । শেষে জরিপে খারাপ ফলাফলের পূর্বাভাস পেয়ে দু'জনেকেই মাঠে নামতে হয়। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। রাহুলের সহকর্মী তরুনরা সবাই পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করা মেধাবী একদল টগবগে তরুন ছিলেন। এদের মেধা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ ছিল না। ঐ তরুনদের যা অভাব ছিল, তা হচ্ছে "রাজনৈতিক প্রজ্ঞা"। সম্ভবত রান্না ও রাজনীতি এমন দু'টা পেশা; যা বই পড়ে আয়ত্ত্ব করা যায় না। পুথিবদ্ধ জ্ঞান হয়ত সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু রাজনীতি ও রান্না-বান্না আসলে চর্চার বিষয়। অনেকদিনের চর্চা আর সাথে পুথিগত বিদ্যার সমন্বয়েই উৎকর্ষ সাধিত হয়।

এতকিছু বলার কারণ হচ্ছে আমাদের "দেশনায়ক" জনাব তারেক রহমানের সাম্প্রতিক কীর্তিকলাপ। পরদেশে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থেকে বিলাসী জীবনযাপন করে দেশনায়ক উপাধি পাওয়ার বিরল কৃতিত্ব হয়ত ওনার আগে আর কেউ দেখাতে পারে নাই। খালেদা জিয়ার ২য় জমানার সময় ওনি হাওয়া ভবনকে ঘিরে একদল অপরিনামদর্শী তরুনদল নিয়ে একটা বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা এতই শক্তিশালী ছিল যে সাইফুর রহমানের মত লোককেও তারেকের পাশে দাড়ানোর জন্য রীতিমত কসরত করতে দেখা যেত। সেই দৌর্দন্ড প্রতাপশালী তারেক রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোমর ভেঙ্গে মুচলেকা দিয়ে লন্ডন পাড়ি জমান। বিএনপি ও তারেক রহমানের শুভাকাংখীরা ভাবছিলেন যে তারেক এবার দেশে ফিরবেন অনেক পরিবর্তিত হয়ে; আমার এক নিকটাত্মীয় বোনের মতে "খাঁটি সোনা" হয়ে দেশে ফিরবেন ও বিএনপির হাল ধরবেন। কিন্তু ওনারা ভূলে গিয়েছিলেন যে আগুনে পুড়ে খাঁটি হয় সোনা আর তারেক রহমান সোনা নন, তামা।

হাওয়া ভবনের আদলেই উনি লন্ডনে নিজের চারপাশে একদল তরুনের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। মেধাবি তরুনদের নিয়ে উপদেষ্ঠা পরিষদ গঠন করেছেন। এদের মধ্যে যেমন আছেন নামজাদা আইনজীবি, আছেন পাশ্চাত্যের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তোখর মেধাবী গবেষক; তেমনি আছেন কিছু জালিয়াত। তাদেরই একজন কয়েকদিন আগে জালিয়াতির অভিযোগে লন্ডনে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ওনি ঐসব চাটুকারদের নিয়ে প্রায়শই গাজাখুরি গল্প বলার আসর বসান। অনেকটা স্বপনে পাওয়া মহৌষদের মত কয়েকদিন পর পর সুললিত কন্ঠে চিৎকার করেন। আর চাটুকাররা "মারহাবা" "মারহাবা" "মারহাবা" বলে সাবাশি দিতে থাকে। কিন্তু জনাব তারেক রহমানকে ঘিরে থাকা অর্বাচীন তরুন চাটুকারের দল ওনাকে বুঝতেই দিচ্ছেনা যে এতে তার ও তার দল বিএনপির কত ক্ষতি হচ্ছে। কেউ যদি সাহস করে বলতে পারত, "থামলে ভালো লাগে"; তাহলে তারেক ও তার দলের অনেক লাভ হত। কিন্তু যারা তাকে দিয়ে এইসব করাচ্ছে বা বলাচ্ছে; তারা খুব ভালো করেই জানে কি চাচ্ছে তারা। গত উপজেলা নির্বাচনে বগুড়াতে জামাতের প্রার্থীদের জয়জয়কার দেখেও যদি তারেকের বোধোদয় না হয়, তাহলে বিএনপির সমূহ বিপদ। তারেকের এইসব অসংলগ্ন কথায় আদতে লাভ হচ্ছে জামাতের। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিথ্যাচারে এমনকি বিএনপির অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিব্রত। যারা ভাবছিলেন তারেক খাঁটি সোনা হয়ে ফিরবে, তারাও হতাশ। আর এই হতাশা চলতে থাকলে, আওয়ামী লীগ বিরোধী একটা বড় অংশ যারা প্রগতিশীল; তারাও আওয়ামী লীগ বিরোধীতার একমাত্র বিকল্প হিসাবে জামাতকে বেছে নিতে বাধ্য হবে। আর ক্রমেই বিএনপি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হয়ে ম্যা ম্যা করবে আর তারেক রাজনীতিতে অপাংত্বেয় হয়ে উঠবে।

তাই প্রগতীশীল বাংলাদেশের স্বার্থে, আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপির মত একটা মধ্যম পন্থার বিকল্প রাজনৈতিক দল থাকা দরকার। বিএনপি না থাকলে বামরা যে সে শুন্যস্থান পূর্ণ করবে, তা অলীক কল্পনা মাত্র। বাংলাদেশের বাম দলগুলো পিং পং বলের মত একবার আঃলীগ ও বিএনপির পকেটে ঘোরাঘুরি করতে করতে কোনমতে নাম সর্বস্ব হয়ে শুধু জোটের কলেবর বাড়াচ্ছে। এছাড়া আর যা বিকল্প আছে, তা গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের জন্য সহায়ক নয়।

তাই গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বার্থে, তারেক রহমানের এইসব প্রলাপ বকা বন্ধ করতে হবে অথবা বিএনপির রাজনীতির হাল অন্য কারো হাতে ছেড়ে দিয়ে চাটুকার সভায় মনোরঞ্জন করা চালিয়ে যেতে হবে।এতে সরকারেরও করণীয় আছে। বিএনপিকে জামাত থেকে বের করে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। যদি এর কোনটা না হয়, তাহলে বাংলাদেশের পাকিস্তানীকরণ কোন অবস্থাতেই ঠেকানো যাবেনা। সাম্প্রতিক পেশোয়ারের ঘটনা আমাদের আবার চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে পাকিস্তান একটা ব্যার্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

afrojurkhan@gmail.com