(পূর্ব প্রকাশের পর)
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের যাত্রাপথটা সবসময়ই কণ্টকাকীর্ণ। এশিয়া কাপে টাইগারদের অসাধারণ সাফল্য লাভের পর আমরা যখন ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি ঠিক তখনই ভিলেন রুপে আবির্ভূত ক্ষমতার লোভে মত্ত ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেণ্ট আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যাপকভাবে বিতর্কিত এ প্রভাবশালীর নানা ভুল সিদ্ধান্তে ক্রিকেট অঙ্গনে বারবার এসেছে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া। সবকিছু সামলে উঠে যখন সামনের দিকে এগোবার পালা তখন আবারও মহাখলনায়কের মঞ্চে প্রবেশ! মৃত্যুপুরী পাকিস্তান সফরে এ মাসের শেষ দিকে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল! বোর্ড সভাপতি যেখানে ঘরোয়া লীগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধান করতে পারছেন না সেখানে পাকিস্তানে ঝুঁকি নিয়ে দল পাঠাতে অনড়। ক্রিকেটভক্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই এখন শেষ ভরসা। তিনি সমর্থক ও ক্রিকেটারদের প্রাণের দাবির প্রতি সহমত জ্ঞাপন করে এ সফর বাতিল করবেন এ প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
যখন টাইগাররা একটি কোচিং স্টাফের অধীনে নিজেদেরকে চমৎকারভাবে মানিয়ে নিয়েছে ঠিক তখনই জাতীয় দলের কোচ স্টুয়ার্ট ল এর পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দলীয় স্পিরিটে একটি বড় আঘাত। তবে পেশাদারিত্বের এ সময়ে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে না। উনার এ সিদ্ধান্তে ক্রিকেটারসহ প্রায় সবাই অবাক হয়েছেন। এরই মাঝে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমির দায়িত্ব পাওয়া এ কোচ পারিবারিক কারণে চলে যাচ্ছেন বলে জানালেও কেমন যেন রহস্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নেপথ্যের আড়ালে কী পাকিস্তান সফর ও বোর্ড সভাপতির সম্পৃক্ততা আছে? সে যাই হোক হোয়াটমোর, সিডন্সের পরে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আজকের অবস্থানে পৌঁছতে সাহায্য করেছেন। তিনি এ কৃতিত্বের পূর্ণ দাবিদার। পরিসংখ্যান সবসময়ই যে সঠিক তথ্য দেয় না বাংলাদেশে তার কোচিংকালীন সময়ই এর বড় প্রমাণ। এশিয়া কাপের ইতিহাস গড়া সাফল্য লাভ ছাড়া তার সময়ে আর তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য না থাকলেও তিনিই তো দ্বন্দ্বের উর্দ্ধে রেখে পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথেছিলেন। টাইগারদের ক্রান্তিকালে হাল ধরে একটি সম্ভাবনাময় অবস্থানে রেখে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। তার অসামান্য অবদানের কথা এদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকুক বা নাই থাকুক তবে ক্রিকেটারদের ও সমর্থকদের হৃদয়ে যে থাকবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সময়ের সাথে সমকালীন ঘটনার আলোকে আলোচনার বিষয়বস্তুও পরিবর্তিত হয়ে যায়। তবুও ফিরে আসি ধারাবাহিকতায়। টি টুয়েণ্টি দল নিয়ে পরিসংখ্যানের আলোকে আমার গত পর্বের লেখায় কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। এবার দৃষ্টি দিই কেমন হতে পারে আমাদের টি টুয়েণ্টি স্কোয়ার্ড। শ্রীলংকায় যেহেতু খেলা হবে উইকেট হবে ফ্ল্যাট ব্যাটিং ঊইকেট ও স্পিনাররা একটু বেশি সুবিধা পেতে পারেন পেসারদের চেয়ে। চার-ছক্কায় ভরপুর এ ফরম্যাটে মিনি অলরাউণ্ডারদের কদর একটু বেশী। তাই ১৪ জনের দলে ৫ ব্যাটসম্যান, ১ জন উইকেটরক্ষক, ৩ জন অলরাউণ্ডার, ৩ জন পেসার ও ২ জন স্পিনার দেখা যেতে পারে। আর আমাদের দলের বোলিং শক্তিতো স্পিন নির্ভর!
স্বাভাবিকভাবেই দল নির্বাচনে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, এশিয়া কাপ, বিপিএল, ঘরোয়া প্রিমিয়ার লীগ, অতীত অভিজ্ঞতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় আসবে। যে সকল বাংলাদেশী খেলোয়াড় এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি টুয়েণ্টি খেলেছেন তাদের মধ্যে রান সংগ্রাহকের তালিকায় মোহাম্মদ আশরাফুল ২৮৯ রান করে শীর্ষে, আফতাব আহমেদ ২২৮ রান, সাকিব আল হাসান ২১৪ রান, তামিম ইকবাল ২০৪ রান ও নাজিম ঊদ্দিন ১৭৮ রান করে সেরা পাঁচে আছেন। এবারের বিপিএলে ১১ ইনিংসে সাকিব ৪০ গড়ে ২৮৬ রান, আশরাফুল ১১ ইনিংসে ২৮.৬৬ গড়ে ২৫৮ রান, জুনায়েদ সিদ্দিকী ১১ ইনিংসে ২৬.৪৪ গড়ে ২৩৮ রান, মুশফিক ৯ ইনিংসে ৩৯ গড়ে ২৩৪ রান, নাসির ৭ ইনিংসে ৩০.৩৩ গড়ে ১৮২ রান করে সেরা পাঁচ বাংলাদেশী রান সংগ্রাহক ছিলেন। সাফল্যময় এশিয়া কাপে (৫০ ওভারের ম্যাচ) তামিম ৪ ইনিংসে ৬৩.২৫ গড়ে ২৫৩ রান, সাকিব ৪ ইনিংসে ৫৯.২৫ গড়ে ২৩৭ রান ও নাসির ৪ ইনিংসে ৫৫.০০ গড়ে ১৬৫ রান করেন। পরিসংখ্যান ও অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে দলে ওপেনার হিসেবে তামিম ইকবালের স্থান প্রায় নিশ্চিত। তার সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে থাকা নাজিম, জুনায়েদ, ইমরুল, নাফিসদের মধ্যে এশিয়া কাপে খেলায় ও বামহাতি ডানহাতি কম্বিনেশনের কারণে নাজিম এগিয়ে আছেন। অন্যথায় জুনায়েদ সিদ্দিকী দলে স্থান পাওয়ার দাবিদার। আন্তর্জাতিক টি টুয়েণ্টিতে ১৫৯.৫২ স্ট্রাইক রেটে (বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ; কমপক্ষে ১৪ রান) ১৩৪ রান ও বিপিএলের চমৎকার পারফরম্যান্স, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটেই খেলার অভিজ্ঞতা তাকে ইমরুলের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। ২০১১ সালে ওয়ানডেতে ভালো খেললেও সাম্প্রতিক সময়ে ইমরুলের ব্যর্থতায় দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। নাফিসের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ। তবে দলে তিন ওপেনার নিলে সেক্ষেত্রে হিসাব নিকাশ পরিবর্তিতও হতে পারে।
(চলবে)
মোঃ মুজিব উল্লাহ: mdmujib_ullah@yahoo.com