ইউজিসির ওয়েবসাইট আপডেট করার সময় কি নেই কর্তৃপক্ষের?

মোঃ মুজিব উল্লাহ
Published : 22 April 2012, 10:32 AM
Updated : 22 April 2012, 10:32 AM

একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠীই একটি দেশের উন্নয়নে সঠিক ও যথার্থ ভুমিকা রাখতে পারে। যে কোন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে। আমাদের বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখভাল করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইউজিসির অফিসিয়াল সাইট ভিজিট করে কেউ যদি ভেবে বসেন বাংলাদেশে কোন শিক্ষিত ও দক্ষ প্রযুক্তিবিদ নেই তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ঐদিকে বর্তমান সরকার তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর `ভিশন ২০২১` বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করেই বছর তিনেক আগে ক্ষমতায় এসেছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর একটি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সরকারি এমন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের বেহাল দশা দেখে সংশ্লিষ্টদের সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন জাগে।

অনেকে ভাবতে পারেন দেশে হাজারো সমস্যা বিদ্যমান। সরকারি অন্য সব সাইটগুলোরও মূমুর্ষূ অবস্থা। অন্যসব থাকতে এ নিয়ে লিখা কেন? আমি সবসময়ই মনে করি দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও এক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতি। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের শুরু থেকেই অনিয়ম, দূর্নীতি দেখে আসছে বলে পরবর্তি পর্যায়ে তাদের দ্বারা অন্য সব ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড সেহেতু এই একটি ক্ষেত্রকে সবার আগে মজবুত করা গেলেই বাকি সব কিছু ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। অন্তর্জালের সুবাধে বিশ্বের যে কোন লোক ইউজিসির সাইট ভিজিট করতে পারবেন। আর সেখানেই যদি কেউ দুর্দশার চিত্র দেখতে পান তাহলে বাংলাদেশ ও এর শিক্ষাব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে বিদেশীদের মনে কিরুপ ধারণা সৃষ্টি হবে তা সহজে অনুমেয়। এ সকল চিন্তা ভাবনা থেকেই এ বিষয়ের দিকে আমার দৃষ্টিপাত।

ইউজিসির সাইট নিয়ে বলার আগে আসুন ইউজিসি সম্পর্কে কিছু জেনে নিই। ১৯৭৩ সালে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রপতির একটি আদেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যান্ট কমিশন (UGC) বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।

ইউজিসির ফাংশন এবং ক্রিয়াকলাপ:
১। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা নিরুপণ।
২। সরকার থেকে তহবিল সংগ্রহ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য প্রাপ্ত তহবিল থেকে বণ্টন করা।
৩। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন পরিকল্পনা পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা।
৪। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধান করা।
৫। নতুন বিশ্ববিদ্যালসমূহের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন।
৬। বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে পরিসংখ্যানগত তথ্য সংগ্রহ করা, ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
৭। UGC বাংলাদেশে উচ্চতর শিক্ষায় গবেষণা, পুরস্কার, বৃত্তি এর প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এবং শীর্ষস্থানীয় গবেষণার জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের Ph.D. ও ফেলোশিপের জন্য অনুদান সরবরাহ করে। এছাড়াও, মৌলিক গবেষণা জন্য পুরস্কার দেয়া, সেমিনার , কর্মশালা আয়োজন সহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এছাড়াও ইউজিসি আরো নানারকম কাজ করে।

ইউজিসি কমিশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সরকারের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এ.কে. আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ জন বিশিষ্ট ও দেশবরণ্য শিক্ষাবিদ আছেন।

ইউজিসির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক পর্যন্ত প্রশাসনিক বিভাগে ১৬ জন (২ জন ছুটিতে), অর্থ ব্যবস্থা ও হিসাব বিভাগে ৬ জন, রিসার্চ সাপোর্ট ও প্রকাশনা বিভাগে ১০ জন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে ৪ জন, তথ্য ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণ বিভাগে ৫ জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে ৪ জন এবং অন্য আরেকটি বিভাগে ১ জন কর্মরত আছেন। তবে এ পরিসংখ্যান সর্বশেষ কবে আপডেট হয়েছে তার কোন তথ্য নেই।

ইউজিসি বুলেটিন প্রতি তিনমাসে একবার প্রকাশিত হয়। অথচ ওয়েবসাইটে জুন ২০১১ এর পরের কোন সংখ্যা নেই! পলিসি মেনুর অন্তভূর্ক্ত Act ক্যাটাগরিতে "UGC act will be uploaded very soon." লেখাটি বেশদিন থেকে শোভা পাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় অনিয়ম চোখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মেনুর আওতাভুক্ত ক্যাটাগরিগুলোতে। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিসংখ্যানগত তথ্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। আপডেটবিহীন অপূর্ণাঙ্গ,ভুলে ভরা তথ্যগুলো নিশ্চয়ই ইউজিসির সুনাম বৃদ্ধি করে না বরং পাঠকদের মনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করে। কোন পেজে সর্বশেষ আপডেটের তারিখ উল্লেখ করলে অন্তত কিছুটা ধারণা পাওয়া যেত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, ক্যাম্পাসের ঠিকানা, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের নাম, নতুন খোলা বিভাগসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বর্তমান বাস্তব তথ্যের সাথে এ সাইটে উল্লেখিত তথ্যের মিল নেই। ঠিক এমনিভাবে স্কলারশিপস, স্ট্যাটিসটিকস, পাবলিকেশন্স মেনুতেও অজস্র ভুল ও আপডেটবিহীন তথ্য, উপাত্ত চোখে পড়ে। অথচ প্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে এ রকম হ-য-ব-র-ল চিত্র থাকার কথা নয়। সবগুলোর কথা লিখতে গেলে লেখা অনেক বিশাল হবে নিশ্চিতকরেই বলা যায়। উন্নত বিশ্বের একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বাদ দিয়ে যদি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর ইউজিসি ও সমমানের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবপেজের দিকে তাকাই সহজেই আমাদের দৈন্যদশা উপলব্ধি করতে সক্ষম হব।

"৫.
মামায় কেনা সনদ দিয়ে অযোগ্যরাই নীতিনির্ধারক
শিক্ষাক্ষেত্রেই দূর্নীতির আখড়া, রক্ষকই ভক্ষক।" (ভাইরাস কাব্য/মোঃ মুজিব উল্লাহ)

কিছুদিন আগের লেখা এ কাব্য কী সত্যই থেকে যাবে? বর্তমান সরকারের "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার বুলি বাস্তবে রুপদান করতে না পারলে মুখ থুবড়ে পড়বে "ভিশন 2021"। আমাদের দেশও অনেক পিছিয়ে যাবে। ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিয়ে অচিরেই পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করি। না হলে আমার লেখাটাই যে সত্য বলে প্রতিপন্ন হবে!

তথ্যসূত্র:
১। উইকিপিডিয়া
২। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সরকারি ওয়েবসাইট
৩। ইউজিসির অফিসিয়াল সাইট
৪। বিভিন্ন বাংলাদেশী পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট
৫। ভার্সিটিএডমিশনডটকমসহ অন্তর্জালের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নেওয়া।

মোঃ মুজিব উল্লাহ: mdmujib_ullah@yahoo.com

(পুনশ্চ: লেখাটাকে আরো বড় করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, বাংলালায়ন নেটওয়ার্কের সংযোগ ঘণ্টায় ১৫-২০ বার বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।)