বিশ্বের ধর্মীয় স্বাধীনতা শীর্ষক প্রতিবেদন-২০১২ এবং বাংলাদেশ

আবদুল্লাহ-হারুন-জুয়েল
Published : 31 May 2012, 06:17 PM
Updated : 31 May 2012, 06:17 PM

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবগত করে প্রস্তাবনা পেশ করার জন্য গঠিত United States Commission on International Religious Freedom সম্প্রতি বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১২ প্রকাশ করেছে। লিওনার্দো এ. লিও এর নেতৃত্বে ২৪ জন বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও পর্যবেক্ষক নিয়ে গঠিত USCIR তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২৫টি দেশকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করেছে যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ। আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো প্রশ্নবিদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই।

প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়েছে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা সর্বত্র আলোচিত হলেও আলোকপাত করা হয়নি মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর। প্রতিবেদনে ২৫টি দেশের ১৬টি দেশকে Countries of Particular Concern এবং ৯টি দেশকে USCIRF Watch List Countries এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য প্রতি বছর প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতার অগ্রগতি ও অবগতির প্রেক্ষাপটে সে দেশের অবস্থান নির্ধারিত হয়।

যে সকল দেশে কোন নির্দিষ্ট বা বিশেষ ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হয়েছে সেই দেশগুলো CPC এর অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বার্মাসহ ১৬টি দেশ তালিকায় রয়েছে। Countries of Particular Concern (CPC)

পাকিস্তান সম্পর্কে বলা হয়েছে ব্লাসফেমি আইন প্রয়োগে ও আহমেদিয়া সম্প্রদায় দমনে উগ্রপন্থীরা বহুবার হামলা করেছে। সরকার উগ্রবাদীদের দমনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকার কোন প্রকার কার্যকর ব্যবস্থাই গ্রহণ করে নাই। এমনকি পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিষয় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বার্মা সম্পর্কে বলা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এখানে। সংখ্যালঘু মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের দমনে সেনাবাহিনী অত্যাচার, ধর্ষণ, গ্রেফতার, হত্যা ছাড়াও সরকারবিরোধী ইস্যুতে মানবতা লঙ্ঘন হয়েছে।

USCIRF's Watch List

যে সকল দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন সেই দেশগুলোকে ওয়াচ লিস্ট এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত, আফগানিস্তান, সোমালিয়াসহ ৯টি দেশ এ তালিকাভুক্ত। ভারতে হিন্দু উগ্রবাদীদের অসহিষ্ণুতার কথা বলা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর হামলার উল্লেখ করা হয়েছে। আফগানিস্তান সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা :

২০০৮ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা অনিশ্চিত থাকায় বাংলাদেশ USCIRF's Watch List এর তালিকাভুক্ত ছিল। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে Countries Closely Monitored এর অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়েছে ২০০৮ এর নির্বাচনের পর ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম হয়েছেন যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশকে USCIRF's Watch List তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের দমন-নিপীড়ন বন্ধ করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক নীতি অনুসরণের ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিরসনে সরকার কৌশলী ভূমিকা পালন করছে। সিংহভাগ মুসলমান শান্তিপ্রিয় অভিহিত করে বলা হয়েছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে ড: মুহম্মদ জাফর ইকবাল যথার্থই বলেছেন,২০০১ এর পর সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক নির্যাতন এবং উগ্রপন্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করতো। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সেই কলঙ্কমুক্ত হয়ে মুসলিম-প্রধান দেশের একটি মডেল হয়ে দাঁড়াচ্ছে এরচেয়ে গর্বের বিষয় আর কি হতে পারে! United States Commission on International Religious Freedom এর ৩৩১ পৃষ্ঠার বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যার প্রশংসা করা হয়েছে। "বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের কেন ভিসা দেয়া হয় না" – আমাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণেই যে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাম্বেসেডরকে এ প্রশ্ন করেছেন তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে ড: মুহম্মদ জাফর ইকবাল যথার্থই বলেছেন,

সেটা খুব দুঃখের একটা ব্যাপার হবে। যুদ্ধাপরাধীরা জেলখানা থেকে বের হয়ে আসবে, গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে রাজাকারেরা ঘুরে বেড়াবে, নতুন বাংলা ভাইদের জন্ম হবে—চিন্তা করেই আমার কেমন জানি গা গুলিয়ে আসে।