জিপিএ-৫ স্ট্রাইকারদের লাল কার্ডে বিব্রত শিক্ষামন্ত্রী!

আহমদ আল হুসাইন
Published : 29 Sept 2014, 10:15 AM
Updated : 29 Sept 2014, 10:15 AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-২০১৫ শিক্ষা বর্ষের 'ক'ইউনিটের ভর্তি পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই আলোচনা সমালোচনার শুরু। শিক্ষার মান নিয়েই প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে । বিশেষ করে 'খ'ইউনিটের ফলাফল এই আলোচনার লেলিহান শিখায় যেন একটু ঘি ঢেলে দেয়। 'খ'ইউনিটেরপাসেরহার৯.৫৫শতাংশ ।

কদিন ধরেই মিডিয়ার টপ চার্টে ঢাবির ভর্তি পরিক্ষা, শিক্ষার মান আর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। প্রশ্নপত্র ফাঁস বনাম ভরি ভরি জিপিএ-৫ খেলাটা চায়ের কাপ থেকে টক'শো পর্যন্ত গড়িয়েছে । ঘুম ভেঙ্গেছে শিক্ষামন্ত্রীর । টনকও নড়েছে। তিনি এবার একটু নড়েচড়েও বসেছেন।

আপনি কোচ। ফুটবল মাঠে আপনি আপনার টিমকে খেলতে নামিয়েছেন। খেলোয়াড়রা খুব একটা দক্ষ না এটা আপনিও জানেন। একেক জন কে একেক জায়গা থেকে হায়ার করেছেন। ঢাক ঢোল পিটিয়ে মেসি নেইমার তকমা দিয়ে আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের জার্সি পরিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। ৯০ মিনিটের খেলায় পাঁচ জন হলুদ কার্ড, দুই জন লাল কার্ড পেয়েছে। খেলা শেষে ফলাফল ১৫-০। আপনার দল চরম ভাবে হেরেছে । দোষ টা কার ? রেফারির ? মাঠের ? খেলার সময় ৯০ মিনিট ? খেলার পদ্ধতির ? না কোচের ? অবশ্যই এটা কোচের ব্যর্থতা। মাননীয় মন্ত্রি আপনি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একজন কোচের দায়িত্তেইআছেন।

ফেসবুক থেকে প্রশ্নপত্র নামিয়ে সোনার ছেলেরা জিপিএ-৫ স্ট্রাইকার বনে গেছে । ভর্তি পরিক্ষার মাঠে ঢাবি কর্তৃপক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করেছে। ফাউল করার অপরাধে কেউ লাল কার্ড বা হলুদ কার্ড পেয়ে থাকলে রেফারির কি ই বা করার থাকে। খেলা শেষে আপনি যদি রেফারির দোষ দেন, পদ্ধতির দোষ দেন, সময়ের দোষ দেন তাহলে এটা খুবই হাস্যকর ।

দীর্ঘ দিন ধরেই একই পদ্ধতিতে ভর্তি পরিক্ষা নিয়ে আসছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ । ছয় বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নাহিদ স্যার এতো দিন কেন ঢাবির ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নাই ঢাবির বর্তমান একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জানতে চাই। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই লেখা পড়া করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অনেক ভালই জানেন ।

গতকাল মিডিয়ার সামনে আপনি উস্মা প্রকাশ করেছেন । আপনি বলেছেন, 'ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা ত্রুটিপূর্ণ'। আপনার কথা মেনেই নিলাম। কিন্তু আপনি যে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষামন্ত্রী সেই শিক্ষা ব্যবস্থা কি ত্রুটিপূর্ণ না ? আপনি আরও বলেছেন, "আমরা চাই তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) দায়িত্বশীল হবেন। ছেলে-মেয়েদের হেস্তনেস্ত করতে ফেল বলে প্রচার করেছেন? শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলার জন্য এটা করল?" । শিক্ষা ব্যবস্থাকে মোটেও প্রশ্নের মুখে ফেলা হয় নি । বরং প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার একটা নিরেট ও স্বচ্ছ চিত্রই ফুটে ওঠেছে ঢাবির ভর্তি পরিক্ষায় । শিক্ষা ব্যবস্থার এই করুণ চিত্রই আপনার ছয় বছরের পাহাড়সম সাফল্য কে যেন হলুদ কার্ড দেখিয়েছে।

আমাদের প্রিয় ভিসি স্যার আ আ ম স আফেরিন সিদ্দিকি গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। উনি আমাদের প্রিয় স্যার, আমাদের অবিভাবক এবং সর্বোপরি উনি আপনাদের ই একজন ঘনিষ্ঠজন । ভিসি স্যার যদি বিএনপি জামাতপন্থী হতেন তাহলে মেনে নিতাম যে সরকার, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আপনাকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে দিতেই হয় তো ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ভর্তি পরিক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন করেছেন । অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে আপনাকে বিব্রত করতে চেয়েছেন । ব্যাপার টা তো আর এমন না । তাই বর্তমানে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় যে চিত্র ফুটে ওঠেছে এটাই শিক্ষা ব্যবস্থার আসল চিত্র ।

শিক্ষামন্ত্রী আপনি এও বলেছেন, "বাংলাদেশে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং বাণিজ্য হয়। কোন কোচিংয়ে কোচিং করলে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে (অবৈধ প্রক্রিয়ায়) ভর্তি হওয়া যাবে তাও শিক্ষার্থীরা জানে।" আপনি কি বুঝাতে চেয়েছে তা খুব স্পষ্ট । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হওয়াও যায় ( জানা মতে যায় না, তবে চেষ্টা করে অনেকেই ) তার নেপথ্যের নায়ক আপনাদের সোনার ছেলে ছাত্রলীগ । আপনারা আপনারাই তো । তাহলে ?

প্রশ্নপত্র এমন হলে হয় তো ভালই হত

১. বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী?

ক) ঢাকা  খ) গুলিস্তান  গ) ধোলাইখাল  ঘ) ভুরুঙ্গামারি

২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত?

ক) রংপুরে  খ) নারায়ণগঞ্জ  গ) বান্দরবানে   ঘ) ঢাকা ভার্সিটিতে

৩. কোন বুকে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়?

ক) টেক্সটবুকে  খ) চাঁদের বুকে  গ) ফেসবুকে  ঘ) উজবুকে

এর আগে মন্ত্রি মহোদয় বলেছিলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা অযৌক্তিক' । এবার বললেন, ' ভর্তি পক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ'। আগামিবার নতুন কিছু শোনার অপেক্ষায় থাকলাম ।

ঢাবি কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল প্রশ্নপত্র আগের দিন ফেসবুকে আপলোড করা । তাহলে ফেসবুক নির্ভর জেনারেশন ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করত । শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সন্মান টাও রক্ষা হত । বেশি নাম্বার দিয়ে জিপিএ-৫ স্ট্রাইকার বানিয়ে দেওয়ার মানেই হচ্ছে ওই শিক্ষার্থীকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ।পরিক্ষা পদ্ধতি আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোঠর সমালোচনা করার পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রির  উচিত জিপিএ-৫ স্ট্রাইকারদের এমন ভাবে গড়ে তোলা যেন তারা সব পরিস্থিতিকে ভালভাবে মোকাবেলা করার যোগ্যতা রাখে ।