সাম্প্রদায়িকতার খাঁচায় বন্দি ভারতের মুসলমান

আহমদ আল হুসাইন
Published : 19 Oct 2015, 05:01 AM
Updated : 19 Oct 2015, 05:01 AM

ভারতের বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক সাম্প্রদায়িকতার এক সেকেলে বায়স্কোপ প্রদর্শন করে যাচ্ছে। মুসলমানদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা রকম বাঁধা বিপত্তির সৃষ্টি করছে তাদের ই দলের নেতার । এত দিন ধরে জেনে আসছিলাম ভারত নাকি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একটি  অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র । কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা একটু ভিন্ন রকম । ১৯৪৭ আর ২০১৫ এর মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। বিজেপি নেতারা ২০১৫ কে সম্ভাবত সাম্প্রদায়িকতার খাঁচায় বন্দি করতে চাচ্ছেন।

গত কয়েকদিন আগে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর প্রদেশের দাদরি গ্রামে গরুর মাংস রাখার অভিযোগ তুলে মোহাম্মদ আখলাক নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে আর পাথর ছুড়ে হত্যা করে ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুরা।  হামলায় গুরুতর আহত হয় আখলাকের ২২ বছর বয়সী ছেলে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভাগ্য ভাল যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নিয়েছিলো বলে সে চিকিৎসা নিতে পারছে ।

ওই দাদরি গ্রামেই পরিবার নিয়ে বাস করে আসছিলেন খামার কর্মী আখলাক। তার ১৮ বছর বয়সী মেয়ে সাজিদা জানিয়েছে, সোমবার রাতে গ্রামের ১শ'রও বেশি মানুষ তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ।

কি রকম একটা ভয়ংকর ব্যাপার। কতটা নির্মম নির্দয় আর নৃশংসতার দৃষ্টান্ত রাখল ভারতের উগ্রপন্থি হিন্দুরা। ভারতের কট্টরপন্থী বর্বর হিন্দুদের পক্ষেই এমন পাশবিতা দেখানো সম্ভব। গো মাংশ খাওয়ার অভিযোগে নয় গো মাংশ খাওয়ার অভিযোগে নির্বিচারে একজন মুসলিম কে পিটিয়ে হত্যা করল তারা।
গরুর মাংস খাওয়ায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা

এই অমানবিক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার হুমকি। মুসলমানদের উপর নির্যাতনের উস্কানি দিল এক বিজেপি নেতা হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লাল খাট্টার ।তিনি মুসলিমদের হুঁশিয়ার করে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, 'মুসলিমরা ভারতে থাকতে পারেন, তবে তাদের গো-মাংস খাওয়া ত্যাগ করতে হবে।'
ভারতে থাকতে হলে ছাড়তে হবে গো-মাংস

কি অদ্ভুত অসাম্প্রদায়িকতা ! মানুষের খাবারের তালিকায় কী থাকবে, কী থাকবে না সেটাও ভারতের সরকার ঠিক করে দিতে চাইছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে প্রশ্ন তোলার আওয়াজটা খুব ক্ষীণ । কারণ ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু । তাই প্রশ্ন তোলার আওয়াজটা খুব ক্ষীণ হওয়াই স্বাভাবিক । অনেকে বলতে পারেন ভারতের সরকার তো এটা করছে না। কিন্তু হ্যা, সরকার করছে না । বিজেপি নেতারা কি সরকারের বাইরে !
গরুর মাংস শুধু মুসলিমরাই খায় না৷সব ধর্মের মানুষই গরুর মাংস খায়৷বাংলাদেশে আমাদের অনেক হিন্দু ধর্মের বন্ধুরাও  এখন গরুর মাংস খায়৷

কোন ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা মোটেও উচিত নয়। তবে একটা ব্যাপার জানতে ইচ্ছে করে যে গরু আবার মানুষের মা হয় কি করে । গরু যদি মা (দেবতা) ই হয় তাহলে ভারতের সব হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গরুর সন্তান অর্থাৎ ষাড়,বলদ,গাভী৷ তাছাড়া হিন্দুরা গরুর মাংশ তথা মায়ের মাংশ খায় না বা  খেতে বারণ । কিন্তু এই মা (গরু ) কে সীমান্ত দিয়ে পাচার করে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে একটুও দ্বিধা বোধ করে না। ব্যাপারটা হয় তো কিছু টা এরকম যে মায়ের মাংশ খাওয়া যাবে না তবে মাকে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যাবে । গরুর মাংশ খাওয়া, গরু জবাই করা নিষিদ্ধ হলে গরু ব্যাবসা সীমান্ত দিয়ে বা অন্য ভাবে গরু ব্যাবসা নিষিদ্ধ নয় কেন ? নিজেদের স্বার্থে ধর্মের এমন ব্যবহার সত্যি ই খুব লজ্জার ।

ভারতে মুসলমানদের ধর্মীয় কাজে বাঁধা সৃষ্টি করা হলেও বাংলাদেশে ব্যাতিক্রম।  হিন্দু ধর্মালম্বিদের ধর্মীয় কাজে কোন রকমের বাঁধা বিপত্তি তো দুরের কথা বরং তাদের সাথে কাধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করা হয় । ধর্মীয় কাজে মুসলমানদের থেকেও হিন্দুরা বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকেন। মসজিদের সামনে মন্দির, মণ্ডপ । দল মত জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই হিন্দু ধর্মালম্বিদের সহ অন্যান্য ধর্মালম্বিদের যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকেন। অদূর ভবিষ্যতেও আমাদের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

ভারত যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে তাতে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সুযোগ নিতে পারে কুচক্রী কোন মহল। সেদিকেও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে  আমরা আশা করবো ভারত সাম্প্রদায়িকতার বাইরে এসে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ্বাসী হবে।