শিক্ষার স্বার্থে ঢাবি ক্যাম্পাসে মেট্রো রেলের রুট বন্ধ করতেই হবে

আহমদ আল হুসাইন
Published : 9 Jan 2016, 06:42 PM
Updated : 9 Jan 2016, 06:42 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল পথ তৈরির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনি উনার মত যুক্তি দেখিয়েছেন। রেলের ইতিহাসের গল্প শুনিয়েছেন। এমন সৃজনশীল গল্প আপনার নতুন নয়। আপনি পারেনও। বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙে আওয়ামী লীগের অফিস বানাতেও আপনি কুন্ঠাবোধ করবেন না এটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় উচ্ছেদ করে দিচ্ছেন না এটাই আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাই লোক দেখানো উন্নয়ন। এই উন্নয়নের বায়স্কোপ প্রদর্শনে দেশের একমাত্র প্রাচীন ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হলে গণতন্ত্রের চেতনা ব্যবসায়ীদের আসলে কিছুই করার নেই। উনাদের চাই উন্নয়ন। উন্নয়নের সিনেমা দেখিয়ে বোকা জনগণকে আশ্বস্ত করতে উনারা খুব বেশি ব্যস্ত।

শিক্ষাই নাকি জাতির মেরুদণ্ড । প্রবাদটি কে কবে বলেছিলেন জানি না। তবে মনে প্রাণে সবাই এটা বিশ্বাস করেন। কিন্তু প্রবাদ তো প্রবাদই। ২০১৬ সালের এই উন্নয়নশীল ও তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশে ‘ক্ষমতাই জাতির একমাত্র মেরুদণ্ড’ বলাই মনে হয় শ্রেয় । নির্বাচনবিহীন গণতন্ত্রের এই আজব দেশে ক্ষতটা প্রেমের কাছে দেশ প্রেম আর শিক্ষা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না ।

ঢাবির যে বিশাল জায়গা ছিল সময়ের প্রয়োজনে তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোনো সরকারকেই ঢাবির এই দখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আর এখন আরেক দানব সরকার এসে ঢাবির গায়ে বিষাক্ত নখর বসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে মেট্রো রেল স্থাপন করে শিক্ষার সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রের নীল নকশা করছে। দেশপ্রেমিক সরকার কখনো এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ।

ক্ষমতালোভী ভিসি মহোদয় বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসলে নিজ আসনে টিকে থাকার লোভে আর অন্যান্য সুবিধা পাওয়ায় আশায় মুখ বন্ধ করে এখনো অবনত মস্তকে সরকারের পায়ে সেজদায় পরে আছেন। তাই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হলে উনাদের কিছু যায় আসে না । একটু বাড়তি সুবিধার কাছে উনারা সত্যিই পরাজিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রো রেল হলে ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পরিবেশ ব্যাহত হবে। যানজট সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, রাস্তাগুলো সংকুচিত হয়ে যাবে। বিশেষ করে রাজু ভাস্কর্য, জাতীয় তিন নেতার মাজার, ঐতিহাসিক ঢাকা গেট, দোয়েল চত্বর এবং কার্জন হল হুমকিতে পড়বে। সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়বে।

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে এমন রুট যারা নির্ধারণ করেছেন আর বিনা নির্বাচনে ক্ষতটায় আসা একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর যাই হোক দেশ প্রেম আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। লেখা পড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ থাকবে না বলেই শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে। দুই দিন পরে বলবেন যারা আন্দোলন করছে তারা জামায়াত-শিবির। কিন্তু একটা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্টে যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা কোন ফ্লেবারের আওয়ামী লীগ ?

উনি হয় তো '৫২, '৫৪, '৬৯ আর '৭১ এ ঢাবি শিক্ষার্থীদের অবদান আর দেশের জন্য তাদের আত্মত্যাগের কথা ভুলে গেছেন। পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়েছে। নিজেদের ক্যাম্পাস আর শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষায় যে কারো হটকারী সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়ার অদম্য মনোবল এখনো আমাদের আছে। উন্নয়নে আমাদের সমর্থন আছে তবে পাকিস্তানিদের মত শোষণের আচরণ করলে তা রুখে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।