৩৬ বছর আগে ৩রা নভেম্বরে শকুনের দল লাল-সবুজের পতাকা খামছে ধরেছিল জাতিকে নেতৃত্বহীন করবে বলে। উদ্দেশ্য সফল, শকুনের দল নির্বিঘ্নে, দাপটের সাথে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে আর যখন ইচ্ছা ছিঁড়ে খাচ্ছে আমাদের। শকুনের দল নিশ্চিন্ত কারণ এমন কেউ নেই, যে তাদেরকে বাধা দেওয়ার সাহস যোগাবে।
অনেকেই আফসোস করে বলে, "আমাদের দুর্ভাগ্য এই বাংলার মাটিতে একজন তাজউদ্দীন আহমদ এর মত রাজনীতিবিদ আমরা আর পাইনি, হইতো আর পাবও না।"
কেন পেলাম না?
অবশ্যই পেতাম। কিন্তু আমাদের দেশটা বড়ই বিচিত্র। ছোটকালে বাংলা বই এর সাথে আরও কিছু বই পড়তাম, যারা ইহা চাপিয়েছিলেন তাদের উদ্দেশ্য হল আমাদের সাহিত্যপ্রেমিক করে তোলা, এরা বোধহয় কোনভাবেই চান নাই যে আমারা দেশপ্রেমিক হয়ে উঠি। এরা যদি চাইতেন আমরা দেশপ্রেমিক হয়ে উঠি তবে 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়' বা এধরণের কিছু বই আমাদের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হত। আজকে ব্লগে একটা লেখা দেখলাম 'একাত্তরের সেনাপতি', এরকম কিছু যদি ছোটকাল থেকে পড়ে আসতাম তবে অবশ্যই আমরা ভাল কিছু পেতাম। কিন্তু এসব আমাদের পড়তে দেওয়া হয়নি, আমরা পড়েছি আরবিতে কথা বলার জন্য বই। আমরা সবাই বলতে পারি, "কাইফা হালুকা ইয়া হাবিবা" কিন্তু আমরা কয়জন বলতে পারি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম কি? কয়জন ছোটবেলা থেকে গোলাম আযম, নিজামী নাম শুনে থুতু মারতে পারি?
আমারা নিজেদের পাঠ্যসূচির বাইরের জিনিষ পইড়া বুঝি যে রাজাকার কি জিনিষ, কেন তাদেরকে দেখলে থুতু মারতে হবে। অনেকে ছাগল তো বোঝেও না, উল্টা এদের পক্ষে কথা বলা শুরু করে দেই। আমরা সম্রাট আকবর, বখতিয়ার উদ্দিন ইখতিয়ার খলজির কথা জানি ছোট বেলা থেকে কিন্তু তাজউদ্দীন আহমেদ কিংবা সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথা জানি না। আমাদের সামনে তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়, যাতে আমরা জিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা শুরু করে দেই।
আমরা ইতিহাস বিকৃতি করতে না চাইলেও হয়ে যায় কারণ জাতি হিসাবে আমারা শুনেই একটা ঘটনা জানতে পছন্দ করি, খুব একটা কষ্ট করে নিজে গিয়ে দেখে আসি না আসলে কি হইছে। আর এই সু্যোগটাই শকুনেরা নিয়েছে, আর আমাদের মহানায়কেরা রয়ে গেছে আড়ালে। সামনে শকুনের উদাহারণ থাকলে বড়জোর কাক হওয়া যায় আমরা তাই হইছি। সামনে একটা বাঘের উদাহারণ থাকলে না আমরা বাঘ হতাম।