পদ্মা, সোহেল ও আবুল হোসেন

আশরাফুজ্জামান আশরাফ
Published : 25 July 2012, 08:35 AM
Updated : 25 July 2012, 08:35 AM

ঢাকা থেকে আমাদের বাড়ি যেতে হয় বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতুর উপর দিয়ে। এই যমুনা সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় মনে মনে চিন্তা করি বাংলাদেশে এর প্রায় দেড়গুণ বড় আর একটা সেতু হচ্ছে পদ্মা নদীর উপর সেটা দেখতে কতই না সুন্দর হবে আর কত না উপকারে আসবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। এই যমুনা সেতু আমাদের উত্তর আঞ্চলের মানুষের জীবনে বড় রকমের বৈচিত্র এনেছে। আমাদের ঢাকাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। পদ্মা সেতু যে আমাদের খুবই দরকার। ২০১০ সালেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ ভাগ বাড়িয়ে দেবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য পদ্মা সেতু জিডিপি বাড়াবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তিন কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে এই সেতুর দ্বারা। জিডিপি বাড়লে উপকৃত হবে পুরো দেশ, দেশের ১৬ কোটি মানুষ। পদ্মা সেতু যে আমাদের দরকার, সেটা আমরা ১৬ কোটি মানুষ খুব ভালোভাবে জানি, বিশ্বব্যাংকও জানে।

আমাদের দেশে সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হয় না সে কথা ৯৯% লোকও বিশ্বাস করবেনা। ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রভৃতি কাজে প্রথাগত দুর্নীতি হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে এসে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখে খুব রেগে যান। এবং তিনি বলেন, 'নো করাপশন, নো করাপশন, নো করাপশন।' সরকারের দিক থেকে টুঁ শব্দটি হলো না। ভাবখানা এমন যে, করাপশনের কথা কইল তো কী হইল? এগুলো তো আমরা অহরহ করে থাকি। বিশ্বব্যাংক অর্থ বরাদ্দ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। কারণ, তারা দুর্নীতির অভিপ্রায়ের প্রমাণ পেয়েছে এবং সেটা উচ্চপর্যায়ে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর বিশ্বব্যাংক যে চারটি শর্ত দিয়েছিল এরমধ্যে দায়িত্বরত মন্ত্রীকে সরকারি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার শর্তও ছিল। কিন্তু সরকার শর্ত পালন করেনি এমন অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি বাতিলের পর আমাদের সরকার বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি খুজতে শুরু করল। তারা যেভাবে কথা বার্তা বলতে লাগল যেন বিশ্বব্যাংকের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ বর্তমানে পদ্মা সেতু ছাড়া যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩৪টি প্রকল্প চলমান আছে। এই বিশ্বব্যাংকের সমালোচনায় নেত্রীত্ত্ব দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের সরকার কতখানি দুরদর্শী।

নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেছেন, 'বাংলাদেশ তার নিজস্ব সম্পদ থেকে এ রকম তিনটি সেতু তৈরি করতে পারে'। তিনি আরও বলেছেন, 'দেশের অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকাসহ অন্যান্য উৎস ব্যবহার করা যেতে পারে'। আমাদের যদি এতই সম্পদ ও উৎস থাকে কেন আজ বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ করতেই আবুল হোসেনের পদত্যাগ করা হলো। ভন্ডামির একটা সীমা থাকা দরকার।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের ঘোষণা দেয়ার পরপরই শুরু হয় পদ্মা সেতুর নাম ভাঙ্গিয়ে এই ফ্রি স্টাইল চাঁদাবাজি, রাস্তায় নেমে পড়ে আওয়ামি লীগের সোনার ছেলেরা। দেখে মনে হয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে চাঁদাবাজির উদ্বোধন করলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল হত্যার নেপথ্যেও সেই চাঁদাবাজির ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী এই অদুরদর্শী সিদ্ধান্ত না দিলে সোহেলকে হারাতে হত না আমাদের। আজ হোক কাল হোক পদ্মা সেতু হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা কি সোহেলকে ফিরে পাবো কোন দিন?

শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কাছে নতি স্বীকার করলো সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, 'দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়া গেলেও বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন'। তিনি আরও বলেন, 'আশা করছি, পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এখন আর অসুবিধা হবে না'। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের অনেক সম্পদ আছে যেগুলো দিয়ে তিনটা নয় একটা পদ্মা সেতু করতে চাই। বিশ্বব্যাংকে চলে গেছে যাক, আমাদের জনদরদী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে হারাতে চাই না!!!

জনাব আবুল হোসেন বলেন, 'পদ্মা সেতুর বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আমি যাঁদের শ্রদ্ধা করি, তাঁরা বিভিন্ন সময় আমাকে বলেছেন, তদন্ত চলাকালে আমার মন্ত্রী পদে থাকা উচিত নয়'। জনাব আবুল আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হতে এত বেশী সময় নিয়েছেন যে, দেশ ও জাতী অনেকটা পিছিয়ে গেছে। আপনি ডিজিটাল সরকারের একজন বাঘা মন্ত্রী ছিলেন আপনার কার্যক্রম ডিজিটাল হওয়া উচিত ছিল।

জনাব সৈয়দ আবুল হোসেন আপনি আবারও মন্ত্রিসভায় ফিরে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এবং বলেছেন, 'দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন'। আপনাকে আবারও যদি মন্ত্রিসভায় ফিরে আনা হয় তা হবে ডিজিটাল সরকারের এনালগ সিদ্ধান্ত।