আজ ১৪ ডিসেম্বর "শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস"। বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের একবারে শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালায় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। ওরা আরো মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওরা বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের এসব বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। এই মেধাহীন ও পঙ্গু জাতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে পার করেছে ৪১ টি বছর। সেই সকল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে সেই স্থানে "শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ" নির্মিত হয়।
আজ যখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন তখনও দিবসটি শুধু রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দল ও সংগঠন পৃথকভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। আমরা আজ এত বেশি মেধাহীন ও পঙ্গু জাতিতে পরিণত হয়েছি যে, আমাদের এই বিজয়ের মাসে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র হরতাল ও অবরোধ করার সাহস পায়। আর আমরা ঘরে বসে তামাশা দেখি, কতটা গাড়ী পুড়লো, কতজন পুলিশ মার খেল!! আবার আমরা অনেকে নিজের চ্যানেলের কাটতির জন্য সেসব কর্মকান্ড ভিডিও করি!!! আমাদের এক পুলিশ ভাই মার খায় আর অন্য ভাই চেয়ে চেয়ে দেখে!! এতে অবশ্য আমাদের পুলিশ ভাইদের কিছুটা প্রাপ্তিও যোগ হচ্ছে, যাদের কাছে এতদিন সাধারণ মানুষ অসহায় ছিল তারা আজ স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের কাছে ঠিক তেমনি অসহায়, যা দেখে নির্যাতিত মানুষের মনে তারা (পুলিশ)একটু হলেও স্থান করে নিতে পেরছে।
আজ যারা এই নেক্কার জনক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে তাদের অধিকাংশ বয়সে তরুন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে কেন স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে বাঁচার উঠেপড়ে লেগেছে? যে বয়সে তাদের স্বপ্ন দেখার কথা দেশের বড় বড় শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক হয়ে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করবে এবং বাংলাদেশটাকে বিশ্বের দরবারে একটি উন্নত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবে। সেই বয়সে তারা আনুগত্য মেনে নিয়েছে সেই সব মানুষের, যারা রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী তৈরি করে একাত্তরে এই দেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক হত্যা করেছে!!
আজ যখন এই বাংলাদেশের সব মানুষ দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী ইসলামী ছাত্রশিবির নামে এই সংগঠনের হতভাগ্য তরুণদের পথে নামিয়ে দিয়েছে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য। বর্তমানে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও তাদের প্রতিহত করতে কেন অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে? ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হারানোর মাত্র ২ দিন পর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আমাদের এই দেশ স্বাধীন হয় এবং আমাদের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটে। আমরা পাই স্বাধীন একটি দেশ এবং স্বাধীন একটি পতাকা। আজ সেই রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর মাথার উপর পাকিস্তানি অপশক্তি না থাকার পরও কেন যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বর্তমান সরকারের ৪ বছরের বেশি সময় লাগবে? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার শেষ করে দেশ ও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করুন।
তথ্য সূত্র: লিংক