আমার বোনগুলো বাঁচতে চায়

আশরাফুজ্জামান আশরাফ
Published : 4 April 2014, 03:20 PM
Updated : 4 April 2014, 03:20 PM

মাদক আমাদের সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই মাদক নষ্টকরে দিচ্ছে আমাদের যুব সমাজকে। আজ যেদিকে তাকাই সেদিকে দেখি মাদকের ভয়াবহতা। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় মাদক নিয়ে কোননা কোন খবর থাকে। এসব খবর কী মাদকের প্রচারের বিজ্ঞাপন নাকি সমাজ সচেতন মূলক?

আজ পত্রিকারপাতা খুলে দেখি আমাদের সেনাবাহিনীর এক মেজর মাদকসহ আটক এবং আর এক পত্রিকায় দেখি মাদকের টাকা দিতে নাচাওয়ায় স্ত্রীকে বালিশ চাপাদিয়ে হত্যা। প্রথম খবরটি দেখে মনেহলো মাদক পাচারকারী যতই শক্তিশালী হোক না কেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা-বাহিনী তাদের পাকড়াও করবে। কিন্তু এই বাহিনীর অনেক সদস্য মাদকাসক্ত বা মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। যা আমরা পত্রিকারপাতা খুললে প্রায় প্রতিদিনেই দেখতে পাই।

দ্বিতীয় ঘটনাটি আমার মনেরভীতর ব্যাপক দাগ কেটেছে। আমাদের সমাজের অনেক বোনের স্বামী মাদকাসক্ত। কিন্তু আমাদের অঞ্চলের বোনের স্বামীরা একটু ব্যতিক্রম। অনেক বোনেরা তার স্বামীর সাথে বসবাস করে আমাদের রংপুর শহরে। কিন্তু সেই বোনের স্বামীটি প্রায়ই আমাদের এলাকায় যাতায়াত করে। তাদের এই যাতায়াতের কারণ শ্বশুর বাড়ির প্রতি ভালোবাসার টান সেটা আসলে নয় এসব জামাই আসে মাদকের টানে। সে সাথে নিয়ে আসে এক কেজি গরুর মাংস অথবা এক কেজি মিষ্টি। এসব নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সে জানায় মিষ্টি ও গরুর মাংস খেলে নেশা কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়। এসব বোনের স্বামীরা প্রায় দিনে বোনদের মারধর করে মাদকের টাকার জন্য। এই মাদক সেবনের জন্য আসা ছেলেদের পাতানো প্রেমের জালে আটকা পড়ে থেমে যাচ্ছে অনেক কিশোরীর কিশোর জীবন।

আমাদের অঞ্চলে হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। আমাদের মিঠাপুকুরের শুকুরেরহাট, মোসলেমবাজার, তালিমগঞ্জ, শালবন, রাঙ্গামাটি ও ফকিরহাটে প্রতিদিন অবাধে বিক্রয় হয় ফেন্সিডিল নামে এক ভয়াবহ মাদক। প্রতিদিন বিকাল বেলা আমাদের বাজারের সামনে দাড়ালে আমরা অনেক গতি সম্পন্ন মোটরসাইকেলের বহর দেখতে পাই। প্রতিটি মোটরসাইকেলের যাত্রী দুই, তিন এমনকি চারজনও হয়ে থাকে। তাদের মোটরসাইকেলগুলো গিয়ে থামে উপরে উল্লেখিত যে কোন একটি স্থানে। তারা মাতাল হয়ে ফেরার পথে প্রায়ই ঘটে থাকে সড়ক দূর্ঘটনা।

আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের অনেক বন্ধু এখন মাদকাসক্ত। যারা নিয়মিত এই ফেন্সিডিল খেয়ে থাকে। আমার অনেক বন্ধু আছে যারা তার পেশার জন্য এলাকার বাহিরে অবস্থান করে তারাও বাড়িতে এলে নিয়মিতভাবে এই মাদক সেবন করে। আমার সরকারী চাকুরিজীবী অনেক বন্ধু নেশার টাকা যোগাতে একবারে নিষ্শ।

আমাদের এলাকায় প্রায় সব বড়দলের সহযোগী সংগঠনের নেতারা মাদকাসক্ত। তাদের পদ বা পদবী দেখে মনে হয় যে যত বড় নেশাখোর সে তত বড় নেতা। নেতা ও নেশা যেন অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। নেশা জোরে নেতা আর নেশার জোরে ক্ষমতা এই যদি হয় আমাদের অবস্থা তাহলে কেমনে হবে আমাদের এই মাদক থেকে মুক্তি?

আমাদের মিঠাপুকুর, রংপুর-এর পূর্ববর্তী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম. আবু হুরায়রার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই ফেন্সিডিলের ব্যবসায় অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ এসেছিল কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় আবার ছেলে-মেয়ের সামনে মাদকাসক্ত স্বামীর বালিশে চাপাপড়ে মরবে কোন বোন!!! কিন্তু আমার বোনগুলো বাঁচতে চায়।