ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর বন্ধ

আবদুল্লাহ আল মামুন
Published : 12 Feb 2011, 02:00 PM
Updated : 12 Feb 2011, 02:00 PM

ফেনীর দাগনভূঁঞায় ভাষা শহীদ সালামের গ্রামের 'আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি গত প্রায় ছয় মাস থেকে সম্পুর্ন বন্ধ। পরিত্যক্ত অবস্থায় থেকে গ্রন্থাগারের ভেতর ও বাইরে ময়লা আবর্জনায় একাকার হয়ে গেছে। ভবনের সামনের অংশে একটি বড় থাই জানালা ভেঙ্গে গেছে এবং ভবনের বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড গুলি সব নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর দেখাশোনার কোন লাইব্রেরিয়ান বা কেয়ারটেকার না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফেনী জেলা পরিষদের দাবি অচিরেই লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া হবে।

ফেনী জেলা পরিষদ ও এলাকাবাসী জানায়,ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার মাতুভূঁঞা ইউনিয়নে ভাষা শহীদ সালামের পৈত্রিক গ্রাম।আগে গ্রামের নাম ছিল লনপুর। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দাবির প্রেেিত ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রামের নাম 'সালাম নগর' করা হয়। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ সালামের বাড়ীর অদুরে নির্মান করা হয় 'ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর '। ২০০৮ সালের ২৬ মে স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ। তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ঠা আনোয়ারুল ইকবাল ও চীপ এ্যাডভাইজারের বিশেষ সহকারী মাহবুব জামিল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। উদ্বোধনের দিনই গ্রন্থাগারে কয়েক হাজার বই দেওয়া হয়েছিল।

গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধনের পর প্রথমে দৈনিক ১২০ টাকা মুজুরীতে সম্পূর্ন অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন কেয়ার টেকার নিয়োগ দেয় জেলা পরিষদ। তার কাজ ছিল শুধুমাত্র জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। অল্প বেতনের কারনে কিছুদিন পর সে চলে যায়। পরে একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেয়া হলেও সেও মাত্র কয়েক দিন পর চলে যায়। গত প্রায় ছয় মাস স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি দেখাশোনার আর কেউ নেই। মূলত উদ্বোধনের পর থেকেই আবদুস সালাম স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি আদৌ চালু ছিল না।

জেলা পরিষদ সুত্র জানায়, একজন কেয়ার টেকারের জন্য সরকার নিদ্ধারিত দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে মুজুরী ১২০ টাকা। একজন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ লাইব্রেরিয়ানের মাসিক বেতন সাকুল্যে চার হাজার টাকা। ফলে কেউ এ কাজে এগিয়ে আসতে চায় না। অথচ ফেনীতে একজন দিন মুজুর দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা মুজুরী পেয়ে থাকে।

ভাষা শহীদ আবদুস সালামের ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আবদুল করিম ও গ্রামের আশিতিপর বৃদ্ধ নুর আহম্মদসহ গ্রামের লোকজন অভিযোগ করেন, এত কম বেতনে বাইরের লোক নিয়োগ দিলে তারা থাকবে কেন? জেলা পরিষদতো গ্রামের কাউকে এ কাজে নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু তারা সেটা না করায় বর্তমানে স্মৃতি জাদুঘরটি সম্পূর্ন নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে।

ফেনী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম মৈনুর জানায়, ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর রনাবেন ও পরিচালনার জন্য সালাম পরিবারের একজনকে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তারা চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

——————————–
আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী
——————————–