জনগণই পারি ভারতের দাদাগিরি রুখতে

আলমগীর আলম
Published : 13 April 2017, 04:41 AM
Updated : 13 April 2017, 04:41 AM

প্রতিটি স্থানে আলোচিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে মানুষ হিসাব মেলাতে চায় যে, ভারতের সাথে আমাদের কতটুকু সমতা ন্যায় ভিত্তিতে চাওয়াপাওয়ার হিসাব মিলেছে সরকার কতটুকু আদায় করতে পেরেছে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের মনভাব জানে দীর্ঘ পথচলায় আমাদের পাশে কেমন এবং কোন স্বার্থে তাদের পেয়েছে ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব কখনই এতো তুঙ্গে ছিলোনা যেমনটি এখন আছে, সরকারের অকুন্ঠ সমর্থণ আর নানান উপায়ে উদারিকরণের কারণে দিল্লী আর ঢাকার মধ্যে অনেক মধুর সম্পর্ক অতিবাহিত হচ্ছে

এই জন্য বাংলাদেশের মানুষের সরকারের কাছে চায় ভারতের সাথে আমাদের ন্যায় সমতা ভিত্তিতে সমঝোতা আর বন্টন হোক। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে অমিমাংসিত বিষয়গুলোর জট খুলুক। বিগত দিনে ছিটমহল সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের মানুষ সরকারের পাশে থেকেছে, মানুষ সমাধান চায় সকল অমিমাংসিত বিষয়গুলো

এবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের মানুষের উচ্চাশা ছিলো তিস্তা চুক্তি নিয়ে, আর প্রতিরক্ষা বিষয়ে ছিল সর্তক দৃষ্টি সাধারণ মানুষ প্রতিরক্ষা চুক্তি বিষয়ে কোন উচ্চকন্ঠে কিছু বলেনি কারণ সম্বন্ধে জ্ঞান কম টেকনিক্যাল বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা কম হওয়ায় মানুষের আগ্রহ শেষ পযর্ন্ত তিস্তাতে এসে দাড়ায়। আর সেটা তিস্তাই ফাঁকা বাকি ৩৬ টি বিষয়েই ভারতের অর্জন মানুষ চায় তার দেশ কিছু অজর্ন করুক, সরকারের কাছ থেকে বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ পেয়েছি, রেল সংযোগ পেয়েছি, খুলনার মানুষ ট্রেনে যাবে ভোগান্তি ছাড়াই ভারতে ইত্যাদি

আর দিল্লী সকল কিছু তাদের করে নিলেও তিস্তার ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জিকে ভিলেন রূপে সামনে এনে বলা হলো তিনি মানলে তিস্তা হবে, আর মমতা তার দেশের মানুষের স্বার্থের কথা, ভোটের কথা চিন্তা করে সাফ বলে দিলে "তিস্তায় জল কোথায়, জল দেব, অন্য পাঁচটি নদীর ব্যপারে কথা বলতে পারি" এমন কথা শুনে আমাদের মন ভেঙ্গে যায়, এতো কিছু দিলাম অথচ আমরা আমাদের ন্যয্যতা পেলাম না।

অথচ আমরা আজ কথা তুলি নাসকল অমিমাংসিত বিষয়গুলো সামনে আনি না।

() গঙ্গা ব্যারজে প্রকল্প অনিশ্চয়তা

() আন্তঃনদী সংযোগ নিয়ে কোন কথা নেই

() সীমান্ত হত্যা বন্ধের কোন সুরাহা নেই

() মাদক চোরাচালান রোধের বিষয়ে দৃশ্যমান কর্মকান্ড নেই

() বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কোন অগ্রগতি নেই ইত্যাদি

অথচ যেভাবেই বলি না কেন অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে (সরকারী ভাষায়) তার মধ্যে রয়েছে-

. নৌ চলাচলের জন্য যে প্রকল্প তা আমাদের প্রয়োজনের চাইতে ভারতের প্রয়োজনেই করা হয়েছে, তাদের বড় বড় চালান এপার থেকে ওপারে নৌ ট্রানজিটের মাধ্যেমে যাবে তার জন্য খনন দরকার অবশ্যই আমাদের নদী খনন দরকার হাজার হাজার মাইল নদী খনন দরকার, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন গুলোকে সেলফে রেখে ভারতের জাহাজ যাতে কোন বাধা ছাড়াই চলতে পারে সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে

. কৌশলগত স্থাপনায় ভারতকে জড়িত করা হয়েছে , তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার নিয়ে আর একটি হয়েছে স্যাটেলাইট প্রকল্প নিয়ে। যে কোন দেশের জন্য তার পারমাণবিক স্থাপনা এবং স্যাটেলাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয় এরকম স্পর্শকাতর কৌশলগত বিষয় নিজেদের মধ্যে রাখা, কিন্তু আমরা সেটা করলাম না ভারতের মত দেশকে এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে জন্য কোনোভাবেই ভালো হবে না

. ভারতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। যে কোন পেশায় পেশাগত প্রশিক্ষণ এর গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু আমাদের বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেবার মত ব্যবস্থা কি আমাদের দেশে নেই? না থাকলে সেটা করার ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করেছি না কেন? আমাদের বিচার বিভাগের মূল সমস্যা হলো এর উপর সরকারগুলোর নগ্ন হস্তক্ষেপ। সেটা বন্ধ করে বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন করা উচিত সবার আগে

বাংলাদেশে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে অর্থায়ন, খুলনাকলকাতা রুটে মোটরযান যাত্রী চলাচল, বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তজুড়ে বর্ডার হাট স্থাপন এর মত কিছু চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এই চুক্তিগুলো দুই দেশের জন্যই ভালো ফল নিয়ে আসবে। আসলে দিন শেষে আমাদের উপর ভর করে নানান ফয়দা ভারতের ঘরেই আলোকিত করে

আমরা দীর্ঘদিন থেকে জানছি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর যাচ্ছেন, যেহেতু ৩৬ টি চুক্তি স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সেহেতু বলা চলে এটা দীর্ঘদিনে আলোচনা, খসড়ার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চুক্তি স্মারকে রূপ নিয়েছে তবে কেন আমাদের জনমানুষের সাধারণ দাবীগুলো আমাদের সরকারের মাথা থেকে আসে নাই কিংবা আদাই করার কৌশল কাজ করে নাই?

এমন প্রশ্ন সামনে রেখে একটি সাধারণ কথা বলতে চাই, শুধু দেশপ্রেমের পরিক্ষায় জয়ী হওয়ার জন্য ভারত বিমুখ হওয়া প্রয়োজন বিনা প্রয়োজনে ভারত ভ্রমণ ত্যাগ করি, ভারতীয় কাপড়পোশাক বর্জন করি, ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কমাই, প্রয়োজনে ত্যাগ করি, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারতমুখী ফ্যাশানে না ভুগী। এতেই ভারতের দাদাগিরি একদম নিষ্প্রভ হয়ে যাবে বিভিন্ন কারণে শুধু বাংলাদেশের মানুষ ভারতে না গেলেই হোটেল ভাড়া চারভাগের একভাগ হয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন পণ্যে ৭০% ছাড় দিয়েও বিক্রি করতে পারে না। তাদের অর্থনৈতিক শক্তিতে আমরা একটু ধাক্কা দিলেই দিন শেষে আমরাই উপকৃত হবো। ভারতপ্রীতি আমাদের দিনে দিনে পিছোনেই ঠেলবে যতদিন ভারতীয়দের মানসিকতা পরিবর্তন না ঘটবে। আমরা জনগণই পারি ভারতের দাদাগিরি রুখতে