বাড়ছে প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ

আলমগীর আলম
Published : 17 July 2017, 09:00 PM
Updated : 17 July 2017, 09:00 PM

বাংলাদেশের জনবহুলতার কারনে দেশের একটি বড় সংখ্যক মানুষ বিদেমে কাজ করে, দেশে শ্রম নিশ্চিত না করার জন্য আমাদের সাধারণ মানুষ ভিটাবাড়ি বণ্দক বিক্রি করে বিদেশে শ্রম খাটার জন্য প্রতিনিয়ত যাচ্ছে, বিদেশের মাটিতে কাজের পরিবেন এবং ঝুকি পূর্ণ কর্মপরিবেশের কারণে প্রতিদিন গড়ে দশটি লাশ আসছে, বিশেষ করে এই লাশের ডেড সার্টিফিকেটে লেখা থাকে ব্রেণ হ্যামারেজ এবং হার্ট এট্যাক। তাছাড়া দূর্ঘটনাও রয়েছে কিন্তু বেশি মারা যাচ্ছে ব্রেণ হ্যামারেজ এবং হার্ট এট্যাকে।

গতবছর ৩৬৫০ জন শ্রমিকের লাশ এসেছে কিন্তু এবছর প্রথম পাঁচ মাসেই ৩৬০০ টি লাশ এসেছে গেছে যা গতবছরের তুলনায় পাঁচগুন। প্রবাসী কল্যাণ থেকে যে তখ্য উপাত্ত পাওয়া যায় তার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, সৌদিআরব এবং মালেশিয়ায়ই বেশি শ্রমিক মারা যাচ্ছে যারা অবৈধ হিসেবে রয়েছেন এর কারণ কি ?

কারণ গুলোর মধ্যে আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে একটা বড় অংশ অবৈধ পথে বিদেশে যায়, আবার কারো মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলেও বিদেশ থেকে আসতে চায়না। যার দরুণ অবৈধ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকে। অবৈধ শ্রমিকদের কদর আছে সেসব দেশে, বিশেষ করে ডে লেবার হিসেবে র্নিমাণ শ্রমিক হিসেবে কদর বেশি কারণ অবৈধদের কোন ইনসুরেন্স নেই, তাই সমস্যা কম, খাওয়া থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা করতে হয়ে নিয়োগকারীর। দিনের হিসাব দিনেই শেষ এই চুক্তিতে শ্রম দিচ্ছে আমাদের অর্থনীতি সচলকারীরা।

যেহেতু তাদের কোন নিয়োগকর্তা নেই সেহেতু থাকার জন্য কেতান ব্যবস্থা নেই তাই নিজেরাই একটা থাকার মতে ব্যবস্থা হরে নেয় শ্রম খাটা মানুষ একটি ঘরে ঠাশাঠাশি করে যেখানে ৪ জনের থাকার ব্যবস্থা সেখঅনে থাকছে বিশজন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাবারের মান নিম্ন, কোন ধরণের খাদ্যবিধি না মেনেই শুধু ভাত ডাল আম ফার্মের মুরগি খেয়ে দিন কাটাতে পারলেই হয় এমন খাবার গ্রহন করে জীবনযাপন করতে থাকে।

এই পরিবেশের থাকার প্রধান কারণ দেশে একটা বড় টাকার ঋণ, পরিবারের খরচ মিটাতে গিয়ে নিজের উপর শারিরিক অত্যাচারটাকে নিজের দায়িত্ব ভেবে দিন যাপন করতে থাকেন। বিদেশে যেতে যে পরিমাণে টাকা খরচ হয় তা তুলতে কম করে হলেও দুই থেকে আড়াই বছর লাগে তার পর আসে নিজের কিছু সঞ্চয়, তাই হাড় খাটুনি শ্রম দিতে থাকে, নিজের স্বাস্থের কথা বিবেচনা না করে দিনরাত শ্রম দিতে থাকে, তার ভিতর নিরুপায়তা কাজ করতে থাকে।

দিনে দিনে এভাবে অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে এবং পুষ্টি শৃংখ্লা না থাকায় দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে শরীরে নানান রোগ ব্যথি বাধিয়ে দেয় আমাদের অর্থনীতি সচলকারীরা। তাদের যেহেতু কোন স্বাস্থ্য বিমা থাকেনা সেহেতু তাদের চিকিৎসা করার কোন সুযোগ ও থাকে না দ্বিতীয়ত ধরা পড়ার ভয়ে তারা কর্মএলাকার বাহিরে বেড় হন না। এছাড়া প্রচুর মানসিক চাপে থাকে তারা প্রথমত দেশের ঋণ ও পরিবার, বিদেশে ধরা পরার ভয়, কাজ হারাবার ভয়, বেকার হওয়ার ভয় ইত্যাদি কারণে প্রচুর মানসিক চাপে পড়ে দিনে দিনে শরীরকে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি ফেলে দেয় যা থেকে আর বেড় হওয়ার মত কোন উপায় না পেয়ে শেষে হৃদক্রিয়া বন্ধ কিংবা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে মারা পরেন।

এই সব কম বয়সী যুবক তরুন মরে গিয়ে তাদের পরিবারকেও চরম বিপদে ফেলে দেন, এক তোর্ ঋণের বোঝা তার উপর পরিবারে হয়তো কোন আয় রোজগারের কেহ না থাকায় পরিবারটি একদম খাদের কিনারায় অনিশ্চিত গন্তব্যে পড়ে যায়, তখন পরিবারটি ঋণ পরিশোধের অপারগতায় ভিটাবাড়ি দিয়ে ঋণ শোধ দেন নয়তো এলাকা থেকে পালিয়ে যান।

এখানে সমাজ বা রাষ্ট্রে কি করণীয় আছে ? প্রথমত অবৈধ ভাবে শ্রম খাটতে যেতে না দেওয়া, দ্বিতীয়ত সরকারের ঘোষিত কম মূল্যে বিদেশ যাওয়া নিশ্চিত করা। সমাজের কাজ হলো প্রতিটি মানুষকে দক্ষ করে তোলার জন্য তাগিদ দেওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তর বলয় তৈরী করা।

সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বলতে দেশের ভিতরেই কর্মসংস্থান তৈরী করা যার কাজটি সমাজকেই করতে হবে সরকার হবে শুধুমাত্র সহায়ক। তবেই দেশে বিদেশ থেকে লাশ কমবে।

(দ্বিতীয় ধাপে বিদেশ ফেরতরা দেশে ফিরে আবার বেকার হয়ে যাচ্ছে।)