আন্দোলন ও দক্ষ জনশক্তির সংকট

আলমগীর আলম
Published : 29 April 2018, 12:54 PM
Updated : 29 April 2018, 12:54 PM

কোটা নিয়ে দেশে একটি বিরাট আন্দোলন হয়ে গেল যা এখন থেমে আছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে। এই আন্দোলনের চরিত্রটা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছে একটা যুক্তিতে। সেটা হলো মেধাবীর সংখ্যা আনুপাতিক কম হওয়ার জন্য মানুষ ভেবেছে এটা অন্যায়, মেধাবীরা এগিয়ে আসুক, মেধাবীদের জায়গা হোক, সরকারী সকল স্থানে মেধাবীদের স্থান হোক ইত্যাদি।

এই আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যখন কোটা তুলে দেওয়ার জন্য বললেন, তখন আন্দোলন থামলেও নতুন আন্দোলনের পথ খোলা হলো বলেই মনে হচ্ছে, এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি কোটা সংস্কার। কিন্তু এই দাবিকে নানান মত নানান ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে একটি নতুন আন্দোলনের দ্বার উম্মোচন করে তা রাস্তায় নামার জন্য পথমুখ খুঁজছেন।

ইতোমধ্যে ১৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের একটি সংগঠন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা না কমানোর জন্য মিছিল করেছে সেই মিছিলে সরকারের একজন মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

আমাদের শিক্ষিত সমাজ, অশিক্ষিত সমাজ, আধা শিক্ষিত সমাজ সবাই সরকারি চাকরি চায়। কেন চায় এটার দিকে একটু দেখলে বোঝা যায় যে, আমাদের সমাজে সরকারি চাকরির একটি সামাজিক মর্যাদা আছে তা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কম। দ্বিতীয়ত চাকরির নিরাপত্তা, বেতন বেশি আর সবচেয়ে বেশি যুব সমাজকে আকৃষ্ট করে বোধহয়

এই সামাজিক ক্ষমতাটাই বেশি করে যুব সমাজের কাছে আকষর্ণের মূল জায়গা। সরকারি চাকরিতে যে নিরাপত্তার বলয় আছে তা বেসরকারি চাকরিতে নেই বলে মনে করে আমাদের যুব সমাজ। কিন্তু বাস্তবিক চিত্রটা অন্যখানে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনশক্তির চরম সংকট রয়েছে, সেই সাথে রয়েছে ইংরেজি ভাষা জ্ঞানের অভাব। পেশাদারিত্বের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস।

পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে যে, আমাদের দেশে ভারতের পাঁচ লাখ লোক কাজ করে।  তারা বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা বেতন হিসেবে বৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রীলংকা, চায়না, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনের মানুষ আমাদের দেশে কাজ করছে।

যেখানে লাখ লাখ যুবক বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে  শুধু শ্রমিক হিসেবে গায়ের রক্তশ্রম দেওয়ার জন্য, সস্তা শ্রম বেচার জন্য, সেখানে যারা উচ্চশিক্ষিত তাদের প্রধান পছন্দ সরকারি চাকরি। এখন যুব সমাজে চাকরির যে চাহিদা রয়েছে তা কি কোনো দিনও সরকার পূরণ করতে পারবে? বাস্তবিক অর্থে এর উত্তর – না।

মূল হচ্ছে আমাদের দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি প্রচুর। এই দক্ষতা পূরণে কী কী উইং খোলা আছে? বস্তুত আমাদের ঘাটতি তা এখানেই – মেডিকেলে পড়াশোনা করে প্রশাসনে যোগ দিতে হচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিচার বিভাগে যোগ দিচ্ছে, শিক্ষকতায় যোগ দিচ্ছে আবার ক্যাডার হয়ে পাশ করে নন ক্যাডারে যোগ দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অনেকে জানেই না তাকে কী হতে হবে? সে কী সে দক্ষ? সে পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে পশু সংরক্ষণের পদেও আবেদন করে, আবার ব্যাংকেও আবেদন করে।

আমরা এখনও এমন কোনো অবকাঠামো বানাতে পারিনি যা দক্ষ জনশক্তি তৈরী করায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কোটা কমানো  বা বাড়ানো মুখ্য নয়,  বিষয়টা হচ্ছে যদি দক্ষ হিসেবে আমাদের এই প্রজন্ম গড়ে উঠতো তখন শুধু চাকরির পেছনে ঘুরতো না।

আমাদের এমন শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন যেখানে শিক্ষার্থীরা সরকারি বা বেসরকারি চাকরির জন্য তৈরী হবে না, সে নিজেই এমন ভাবে তৈরী হবে যে চাকরিপ্রার্থী না হয়ে বরং সে চাকরি দেবে।  তাই সরকারের এই দিকটা নজর দিতে হবে যে, 'চাকরি করবো না চাকরি দেব'।

এই মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে পারলে যুব সমাজে অস্থিরতা কমবে। সেই সঙ্গে কমবে ক্ষমতাসীন দলের উপর মানসিক চাপ। এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে আগামী প্রজন্মের জন্য কাজের বলয় তৈরী করতে হবে।