চারিত্রিক সনদ এবং জমির সাহেবের সরল ভাবনা

এনামুল হক
Published : 23 August 2012, 09:15 AM
Updated : 23 August 2012, 09:15 AM

অনেককাল আগে শোনা পুরোনো একটি গল্প শোনাই আপনাদের। অনেকেই জানেন।
বিয়ের কথাবার্তার একপর্যায়ে ছেলে পক্ষকে কনে পক্ষ জিজ্ঞেস করে ছেলে কি করেন? উত্তর আসে- মাঝে মধ্যে একটু পেঁয়াজ খায়, অন্যত্যায় সবকিছু ঠিক আছে…
"মাঝে মধ্যে পেঁয়াজ খায়!!!"
"আরে সবসময় খায় না…যখন একটু ঝলসানো মাংস খায় তখন পেয়াজ খায়…"
"ও …আচ্ছা…" পাত্রী পক্ষের সরল জিজ্ঞাসু অভিব্যক্তি চোখে।
"আরে সবসময় তো আর ঝলসানো মাংস খায় না, যখন দু-এক পেগ মদ খায় তখন একটু সাথে একটু মাংস খায়…"
"ছেলে মদ খায়…???!!!" পাত্রী পক্ষের চোখ কপালে।
"আরে ছেলে ভালো, সবসময় কি আর মদ খায়!! মাঝে মধ্যে যখন নাচনে ওয়ালীর কাছে যায় তখন একটু মদ খায়…"
"নাচনেওয়ালীর কাছেও যায়!!!"
"আরে সবসময় কি আর যায়!!! যখন চুরি ডাকাতি করে, একটু টাকা পয়সা হাতে আসে তখনই তো যায়, অন্যত্যায় ছেলে ভালো। আপনারা খবর নিয়ে দেখতে পারেন…"

এতো গেলো গল্পের কথা, বছর সাতেক আগে শোনা একটি সত্যিকার গল্প শোনুন-
এমনি এক বিয়ের সম্বন্ধ আলোচনায় জিজ্ঞেস,
"তা, ছেলে কি করে ভাইজান?"
ছেলে দল করে… পাত্র পক্ষের উত্তর।
দল করে???!!!— কনে পক্ষ একটু চমকে যায়।
"জ্বী, ভাইজান ছাত্রদল করে, অমুক ভাইয়ের ডানহাত। খবর নিয়ে দেখতে পারেন…এই শহরে যত টেন্ডা…পর্যন্ত সব তার আঙ্গুলের ঈশারায়ই হয়"
(বর্তমানে পাত্র হয়তো ছাত্রলীগ করতো, আর তমুক ভাইয়ের ডানহাত তো)

শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আজাদ স্যারের একটি প্রবচন মনে পড়ে গেলো, সেটা শোনানোর লোভ সামলাতে পারছি না-
"এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি গুণ্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুণ্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁদের সালাম দেয়, মুদিদোকানদার খুশি হয়ে বাকি দেয়, বাসার মেয়েরা নির্ভয়ে একলা পথে বেরোতে পারে, এবং বাসায় একটি মন্ত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।"

জমির সাহেব প্রথম শ্রেনীর সরকারী গেজেটেড কর্মকর্তা। তার কাছে অনেক পরিচিত/অপরিচিত লোকজন চারিত্রিক সনদ নিয়ে আসে। উপজেলায় কাজ করার সময় স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য একজন ওয়ার্ড কমিশনার পদপার্থী চারিত্রিক সনদ নিতে এসেছিলেন, যিনি মদ্যপ অবস্থায় তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে মাত্র মাসখানেক আগে, যার বিরুদ্ধে একটি মেডিকেল রিপোর্ট (গ্রাভিয়াস ইনজুরি নোট) তদানন্তিন ছিলো তখন একটি মারামারির কেইচে।
জমির উদ্দিন তালুকদার বিরাট অশান্তিতে পড়ে গেলেন।
তিনি গবেষক মানুষ। নতুন একটি পদ্ধতি নিয়ে ভাবছেন, ভাবছেন সরকারের কাছে প্রস্তাব করবেন কিছু মানুষের চারিত্রিক সনদ বা প্রশংসাপত্র প্রথমশ্রেনীর কর্মকর্তা কর্তৃক দস্তখত করানোর পদ্ধতি বাতিল করে, নতুন আইনে বিশেষজ্ঞ দ্বারা তাদের সনদ তৈয়ার প্রয়োজন, বিয়ে চাকরী, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কাজে।
ধরেন একটি একটি সনদের একপাশে সাইন করলেন ক্লিন-৩-টন, আরেক পাশে দস্তখত করলেন
হো-মো তারসাদ চাচা, মাঝেখানে দস্তখতের জন্য একটি অপশন রাখা যেতে পারে যেখানে প্রয়োজনে সাক্ষর দেবেন মৌ-দুধের মাছি কিংবা কালোবিড়াল।
জমির সাহেব ভাবছেন মিসির আলী সাহেবের সাথে একটু দেখা করে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন। কারণ গতবছর এক মহিলা ওয়ার্ড কমিশনার তার কাছ থেকে চারিত্রিক সনদ নিয়েছিলেন, যিনি কিছুদিন পর রমজান মাসের রাতে রেকটিফাইড স্পিরিট খেয়ে আরও ৭জনের সাথে মৃত অবস্থায় তারই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন। কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষ চিনে ফেলার টেকনিকটা যদি মিসির আলী সাহেব তাকে শিখিয়ে দিতেন তাহলে ব্যাপারটা তার কাছে সহজতর হত।

(এখানে ব্যবহৃত প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক, কোনো জীবিত-মৃত বা অর্ধমৃত-গুম কারও সাথে তার যোগসাজস খুঁজতে যাওয়া বিকৃত মস্তিষ্কের দূর্গন্ধযুক্ত কল্পনা হিসেবে ধরে নেয়া হবে)