ইবোলা ভাইরাস ব্যাধি: আতংক নয়, চাই সচেতনতা

এনামুল হক
Published : 3 August 2014, 05:02 AM
Updated : 3 August 2014, 05:02 AM

ইবোলা (Ebola) ভাইরাস রোগঃ
আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশে ইবোলা ভাইরাস রোগ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। সেই সব দেশের সরকার এই রোগ প্রতিরোধে জরুরী অবস্থা জারি করেছে। কী এই ইবোলা ভাইরাস ব্যাধি?

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি বিশ্বে Ebola virus disease (EVD) or Ebola hemorrhagic fever (EHF) নামে পরিচিত। ইবোলার পাঁচটির প্রজাতির মধ্যে তিনটি মানব দেহের জন্য বেশি মারাত্মক। সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে জায়ার ইবোলা ভাইরাস (Zaire Ebola Virus)

এই রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও আমরা খুব বেশি জানি না। তবে ধারণা করা হয় Ebola Virus এ আক্রান্ত পশু থেকে এই রোগ সর্ব প্রথম মানব দেহে সংক্রমিত হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি ইবোলা একটি নদীর নাম যা বর্তমান কঙ্গোতে অবস্থিত (পূর্বে তা জায়ারের অংশ ছিলো) এবং এই রোগের প্রথম ভাইরাস সনাক্ত হয় ১৯৭৬ সালে।

ভ্যাকসিন এবং ঔষধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার অত্যন্ত বেশি। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই রোগ মহামারি আকারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে এবং কেড়ে নিয়েছে হাজারো মানুষের প্রাণ। ২০১৪ সালে এই রোগ আফ্রিকার Guinea, Sierra Leone এবং Liberia মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে এবং শুধুমাত্র গত জুলাই মাসেই ১৩২০জন আক্রান্ত হয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত ১২০১জন চিহ্নিত রোগীর মধ্যে ৬৭২জনেরই মৃত্যু হয়েছে। (জুলাই-২৩,২০১৪ পর্যন্ত)

রোগের লক্ষণ:
ইবোলা ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হলে সর্বোচ্চ ১৪-২১দিনের মধ্যে নিন্ম লিখিত লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হতে পারে:
*সাধারণ সর্দি জ্বরের সাথে অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, বুকে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা।
*গলা শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া ।
*সর্দি-কাশি, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা
*বমি ভাব, এবং বমি হওয়া।
*পাতলা পায়খানা
ফুসফুস থেকে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতাসহ কিডনি এবং লিভার এর সমস্যা এবং বমির সাথে রক্ত যাওয়া, পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে পড়া এবং শরীরের রক্তচাপ করে দ্রুত একাধিক অঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ সময় রোগী "কমা"তে হলে যেতে পারে। এ সময় রক্ত পরীক্ষা করে ম্যালেরিয়া, হ্যাপাটাইটিস, কলেরা বা অন্য কোনো রোগের জীবাণুর কারণে রোগী অসুস্থ কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

রোগ নির্ণয়:
ইবোলা ভাইরাস রোগের সাথে viral hemorrhagic fevers, falciparum malaria, typhoid fever, shigellosis, rickettsial diseases যেমন- typhus, cholera, gram-negative septicemia, borreliosis সহ অনেক রোগের উপসর্গের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায় তাই রোগ নির্ণয় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে রোগীর রোগ ইতিহাস (medical history) নেয়া খুবই জরুরী, বিশেষ করে শেষ কবে কোথায় ভ্রমণ করেছে, কার বা কোন পশুর সংস্পর্শে এসেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীর রক্ত পরীক্ষায় (blood or serum) ebolavirus antigen বা genomic বা subgenomic RNAs পাওয়া যায়। এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতিতে এ রোগ ল্যাবটরিতে রোগ নির্ণয় করা যায় তবে তার কোনোটিই সহজলভ্য নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজলভ্য এবং বহনযোগ্য পরীক্ষা পদ্ধতি হলো RT-PCR (antigen-capture ELISA)।

চিকিৎসা:
ইবোলা ভাইরাস রোগের কোনো প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে Supportive Treatment দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হয়। যেমন বমি, প্রচণ্ড ঘাম বা ডায়েরিয়ারজনিত শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে রোগীর জন্য স্যালাইনের ব্যবস্থা করতে হয়, জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য তামমাত্রানাশক, ব্যথার জন্য বেদনানাশক, বমি বন্ধের জন্য বমির ঔষধ, রক্তক্ষরণ রোধের ঔষধ সহ উপসর্গ মোতাবেক ঔষধ দেয়া হয়।
তথ্য মতে এই রোগে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি (৫০%-৯০%)। রোগ নিরাময় Supportive Treatment এর উপর নির্ভর করে। লক্ষণ এবং উপসর্গ অনুযায়ী অনুযায়ী রোগীকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিলে অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

সংক্রমনঃ
প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি বিধায় এই রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। জীবিত বা মৃতই হোক আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে নির্গত যেকোনো তরল এর সংস্পর্শে এলে সুস্থ ব্যক্তি ইবোলা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হতে পারে! রোগীর শরীর থেকে নির্গত তরল যেমন ঘাম, বমি, ডায়রিয়া, রক্ত বা প্রশ্রাব বা এ জাতীয় তরলের সংস্পর্শে এলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে। যৌন-ক্রিয়ায়ও এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।

প্রতিরোধ পরামর্শ:
আক্রান্ত বা মহামারিপ্রবন এলাকা এড়িয়ে চলা, ভ্রমণ না করা। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। আক্রান্ত ব্যক্তির নিকঠবর্তী হলে কোনো অবস্থাতেই তার শরীর থেকে নির্গত কোনো তরলে স্পর্শ করবেন না।

আশার কথা হচ্ছে আমাদের দেশ এখনও এই রোগের প্রকোপের বাইরে। তবে আফ্রিকায় আমাদের অনেক প্রবাসী ভাই কাজ করেন। বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড-পোর্ট এবং সীপোর্ট ইমিগ্রেশনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা উচিত। সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত মহামারি প্রবণ এলাকা থেকে আগত সকল যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। এক্ষেত্রে সহজ পন্থা হলো ঐসব মহামারি প্রবণ এলাকা থেকে আগত যাত্রীদের বহনকারী বিমান বা জাহাজকে জানিয়ে দেয়া হেলথ সার্টিফিকেট নিশ্চিত করার জন্য।