Pseudocyesis: প্রসূতির পেট কেটে ডাক্তার জানালেন সন্তান নেই!

এনামুল হক
Published : 26 Oct 2014, 04:50 AM
Updated : 26 Oct 2014, 04:50 AM

একজন সন্তান সম্ভাবা মহিলা ডাক্তারের কাছে গেলেন। ছয়মাস যাবৎ তিনি গর্ভবতী। গাইনীর ঐ ডাক্তার গর্ভবতী মহিলাকে চেকআপ করে ভ্রু কুচকে বললেন একটি আলট্রাসনোগ্রাফি করে আসেন প্লিজ। পরদিন সনোগ্রাফি করে রিপোর্টসহ মহিলা ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললেন, "যা ভেবেছিলাম তাই। আপনি সন্তান সম্ভাবা না।" মহিলার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, "কি বলেন ডাক্তার আপা!! আমার পেট এতো বড়, বাচ্চার নড়াচড়া আমি নিয়মিত টের পাই, আমার মাসিক গত ছয় মাস যাবৎ বন্ধ!!! আপনি এইগুলা কি বলেন!!!"
ডাক্তার বললেন, আসলে আপনার ক্ষেত্রে যেটি হয়েছে তা হলো Pseudocyesis, মানবদেহের Endocraine সিস্টেমের গণ্ডগোল বা বড় ধরণের পরিবর্তনের জন্য এমন হয়।
ডাক্তার আরো কিছু বুঝানোর চেষ্টা করলেন, মহিলা মাথা নেড়ে না না করতে করতে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর পরবর্তী তিন বৎসরে ঐ মহিলা নিজেকে গর্ভবতী মনে করে একাধিক ডাক্তার দেখান, সনোগ্রাফি করান এবং কোনোটিতেই তার পেটে সন্তানের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

Pseudocyesis (সিউডোসাইসিস)!
শব্দটি বেশ কঠিন। সহজ করে অনেকেই একে False Pregnancy বলে থাকেন, বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় মেকি-গর্ভ। অর্থাৎ এমন ধরণের গর্ভবতী যিনি সন্তান সম্ভাবা না হয়েও পূর্ণ গর্ভের সকল লক্ষণ এবং উপসর্গ প্রকাশিত হবে এবং মানসিকভাবে ঐ মহিলা নিজেকে গর্ভবতী মনে করবেন।
অনেক ক্ষেত্রেই Pseudocyesis ব্যাপারটা মানসিক হলেও মূলত এই ধরণের অবস্থা হয় এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে বড় ধরণের পরিবর্তনের জন্য, এতে শরীরে বিশেষ ধরণের হরমোন ছড়িয়ে পড়ে এবং গর্ভের সব ধরণের লক্ষণ প্রকাশ পায়। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সকালে অবসন্ন বা অসুস্থতা, বমি, স্তন স্পর্শকাতর হয়ে যাওয়া, পেট বড় হওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক রোগী নিজের পেটে সন্তানের নড়াচড়া পর্যন্ত টের পান এমন কি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের প্রসব ব্যথাও হয়!! Pseudocyesis বা False Pregnancyএর ক্ষেত্রে পেট বড় বা মোটা হয়ে একজন মহিলাকে পূর্ণ সন্তান সম্ভাবা মনে হয়, এবং ব্যাপারটা এতোটাই নিখুঁতভাবে হয় যে সাধারণ মানুষ তো অবশ্যই প্রযুক্তির সাহায্য না নিলে অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তাররাই ধোঁকা খেয়ে যান।

ব্যাখ্যা:
চিকিৎসা বিজ্ঞানে Pseudocyesis বা False Pregnancy কে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যাপারটি যথেষ্ট জটিল, যে জটিল প্রক্রিয়ায় cortical, hypothalamic, endocrine, এবং psychogenic ফ্যাক্টর জড়িত, যার ফলে hypothalamo-pituitary-adrenal axis, constipation, weight gain ছাড়াও অন্যান্য উপসর্গগুলো পরিলক্ষিত হয়।

চিকিৎসা:
Pseudocyesis এর ক্ষেত্রে রোগীকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে মানসিক সাপোর্ট খুবই জরুরি। মাসিক নিয়মিত-করণের ব্যবস্থাসহ উপসর্গ-ভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি রোগীকে সনোগ্রাফি করার সময় টিভি স্ক্রিনে তার যে গর্ভ নেই সে সম্পর্কে নিশ্চিত করলে।

পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১৩ই অক্টোবর প্রসূতির পেট কেটে ডাক্তার জানিয়েছেন 'সন্তান নেই'। ফেইসবুক আর অনলাইন পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে চিকিৎসকদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার হয়েছে।

প্রসূতির পেট কেটে ডাক্তার জানায় 'সন্তান নেই' , http://www.bdmonitor.net/, 19 Oct, 2014
মূল ঘটনা ছিলো, তীব্র প্রসব ব্যথা নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে জুনিয়র ডাক্তাররা বাচ্চার নড়াচড়া ঠিকমতো বুঝতে পারছিলেন না, এদিকে রোগীর চিৎকার আর এটেন্ডেন্সদের চাপে তারা দ্রুত সিজারিয়ান সেকশনে নিয়ে যান রোগীকে। রোগীর সাথে পূর্বের কোনো আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট ছিলো না, প্রসব ব্যথার ঐ মূহুর্তে তা করার উপদেশ দেয়াও ছিলো অবাস্তব। যেহেতু রোগীর গর্ভের ইতিহাস এবং সকল লক্ষণ এবং উপসর্গ গর্ভের পক্ষে ছিলো তাই দ্রুত রোগীকে ওটি টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং পরবর্তী সকল ঘটনা অনলাইন পত্রিকা মারফত সবার জানা।
আমি নিশ্চিত, এরপর আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট ছাড়া কিংবা বাচ্চার হৃদস্পদন সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে আর কোনো রোগীকে ওটির টেবিলে নেয়া হবে না। জরুরী ক্ষেত্রে অনেকসময়ই চিকিৎসকেরা রোগীকে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেন। প্রতিমাসে হাসপাতালে কত শত সিজার হয়, একটি ঘটনা আমি ব্যতিক্রমই ধরে নেবো। ডাক্তার বাচ্চাকে মেরে লুকিয়ে ফেলবে এই ধরণের ধারনা করা ঠিক নয়।
তারপরও আপনাদের সন্দেহ দূর করার জন্য অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখবেন, যে ঘটনাটি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটেছে। সেই রকম ঘটনার অজস্র উদাহরণ রয়েছে সারা বিশ্বে।
আপনাদের সুবিধার্থে একটি লিংক দিতে পারি-

আশা করবো এই কলামটি পড়ার পর অনেকের অনেক প্রকার সন্দেহ দূর হবে।

***

ছবিসূত্র: http://www.vetnext.com