পুরুষতান্ত্রিক স্বপ্ন… ভার্জিন শরীর!

এনামুল হক
Published : 23 Nov 2014, 07:40 AM
Updated : 23 Nov 2014, 07:40 AM

পুরুষদের আড্ডায় প্রেম, ছ্যাকা, স্বপ্ন, বিয়ে, রগরগে জোকস, হেঁড়ে গলায় গান… থাকবে না, তা তো হয় না। এমনি এক মধ্যরাতের আড্ডায় পুকুর ঘাটে ১০-১২জন বন্ধু মিলে মশগুল ছিলাম।

অবিবাহিত এক বন্ধুকে হঠাৎ জিজ্ঞাস করলাম, বিয়ে করছিস কবে?
উত্তরে সে জানিয়েছিলো, দেখি…নিজের পায়ে একটু খাড়া হতে দে… তারপর। তাছাড়া এ জমানায় সতি একজন মেয়ে পাওয়াও দুষ্কর।
(আড্ডায় তর্ক জমানোর একটি চমৎকার বিষয় পেয়ে যাই)

আমি বলি, সতি বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছিস? Virgin?

বন্ধু আমার ফাঁদে পা দিয়ে বলে, Virgin তো অবশ্যই, বয়ফ্রেন্ড নেই, ভালো চরিত্র …।

আমি বলি, বন্ধু তুই নিজে তো Virgin না। অতীতে তোর একাধিক গার্ল-ফ্রেন্ডের খবর আমাদেরই নখর দর্পে। আর আমাদের না জানিয়ে কি কি করেছিস খোদাই জানে!!! তাহলে তুই Virgin, সতি মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিস যে!

বন্ধু সরল স্বীকারোক্তিতে বলে, আরে অভিজ্ঞতা আর টাইম পাসের জন্য ঐসব ছিলো, বিয়ে অন্য ব্যাপার। সারা জীবন একটি মেয়ের সাথে সংসার করবো, তার শরীরে অন্য পুরুষের হাত ছিলো ভাবতেই ঘেন্না লাগে…।

বন্ধুকে ভোর অবধি কি পরিমাণ তুলো-ধুনো করেছি সে গল্প অন্য দিন।

অন্য একটি ব্যতিক্রম ধর্মী অভিজ্ঞতা বলি, ২০০৮সালের ঘটনা। আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু রাত ১১টার দিকে জরুরি ফোন দিয়ে নিয়ে গেলেন এক প্রবাসীর বাসায়। ঐ প্রবাসী একদিন আগেই বিয়ে করেছেন। ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছি, তখনও জানি না আমাকে আমন্ত্রণের হেতু। জিজ্ঞাস করার পর, আমার সম বয়সী সেই প্রবাসী ব্যক্তি আমতা আমতা করে আমায় জানালেন, আমাকে তার নব-বিবাহিতা স্ত্রীর Virginity পরীক্ষা করতে হবে। তার কাছে অজ্ঞাত স্থান থেকে একাধিক ফোন এসেছে, এই মেয়ের সাথে বিয়ের পূর্বে পরপুরুষের শারীরিক সম্পর্ক ছিলো। স্ত্রী কান্না কাটি করলেও, Virginit'র পরীক্ষা দিতে রাজী আছে। আমি অবাক হয়ে সেই লোকের পানে তাকিয়ে থাকি… কী বলে পাগল!

ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অনৈতিক জানিয়ে, হাতজোড় করে বেরিয়ে আসার সময় জানিয়েছিলাম, অজানা একটি ফোন কলকে বিশ্বাস করছেন, অথচ নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর… যার সঙ্গে আজীবন সংসার করবেন, তার প্রতি এতো অবিশ্বাস! পরবর্তীতে জেনেছি, সেই প্রবাসীর বিয়ের পূর্বে একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিলো, তাই নারীদের প্রতি এতো অবিশ্বাস!

নববিবাহিত অনেক পরিচিতজন ফোন করে জিজ্ঞাস করেন, প্রথম সঙ্গমে তো রক্তপাত হলো না, তাহলে কি তার স্ত্রী ভার্জিন না!

নারীদের প্রতি পুরুষদের কিংবা পুরুষদের প্রতি নারীদের আকর্ষণ থাকবে প্রাকৃতিক কারণেই। সামাজিক কারণে আমাদের নারীরা লজ্জাশীলা এবং নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার গুরুত্ব তারা কম দেন। তবে আমাদের পুরুষ-শাসিত সমাজে পুরুষরা নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার অনেক গুরুত্ব দেন। বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে এখানের অধিকাংশ পুরুষই লালায়িত। বিয়ের আগে সেক্স এডভেঞ্চার আর বিয়ের পর মাঝে মধ্যে ঘরের ডাল ভাত রেখে বাইরে পোলাও বিরিয়ানি খাওয়া তাদের কাছে দোষের কিছু নয়! অথচ একই কর্ম যদি নিজের স্ত্রী করে তবে পরদিনই তাদের ভাগ্যে জুটবে কলঙ্কিনী উপাধি।

নিয়মিত বা অনিয়মিত নারীর সঙ্গ পাওয়া লক্ষ পুরুষ নিজের বিয়ের আগে বের হোন সতিচ্ছেদ্যের সন্ধানে। হাত চালিয়ে বিশেষ অঙ্গে 'কড়' পড়ে যাওয়া পুরুষ নিয়ত খুঁজেন সতি নারী। অবাক করার মত একটি ব্যাপার হলো, যে পুরুষ বিয়ে করেননি তিনিও একটি ভার্জিন মেয়ের সঙ্গ চান অভিজ্ঞতা হিসেবে বিয়ের পূর্বেই, বিয়ের জন্যও খুঁজেন ভার্জিন মেয়ে, বিয়ের পর 'বিরিয়ানি' মিশনেও চান ভার্জিন মেয়ে!

যৌনতার ক্ষেত্রে পুরুষদের ধ্যানে, জ্ঞানে শুধুই ভার্জিন! এতো ভার্জিন সাপ্লাই দিতে তো ভার্জিন বানানোর কারখানা লাগবে!
আমি নিশ্চিত এই দেশে Hymenorrhaphy বা hymenoplasty (hymen reconstruction surgery- সতিচ্ছেদ্য পুনরুদ্ধার সার্জারি) একটি জনপ্রিয় অপারেশন হত, যদি সুযোগ সুবিধা থাকতো।

"মনে রাখবেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষের সাইকোলজি নিয়ে কথা বলছি, মেয়েদের অবাধ যৌনাচারের সার্টিফিকেট দিতে বসিনি।"

বিয়ের পূর্বে কারো নারী সঙ্গ থাকলে কনের খুঁজে সে যদি ভার্জিন মেয়ে খুঁজে সেটা খুবই অনৈতিক। ভার্জিন খুঁজেই, এমন কি মেয়েটার সাথে অন্য ছেলের মানসিক সম্পর্ক থাকলেও অধিকাংশ পুরুষরা মেনে নিতে পারেন না, সারা জীবন নিজের স্ত্রীকে সন্দেহের চোখে দেখেন। কী অসুস্থ মানসিকতা! অথচ কোনো মেয়ের তার বিবাহিত পুরুষ নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার নেই! বিয়ের পূর্বে কয়জন নারীকে নাচালো, কয়জন নারীর সাথে ঘুমালো… এইসব প্রশ্ন করলে সংসার আর করা হবে না। আর আমাদের সমাজের অনেক নারী যেনো মেনেই নিয়েছেন, বিয়ের আগে পুরুষদের ঐসব 'একটু' বদ-অভ্যাস থাকেই। সবই বয়সের দোষ!

নিজের যদি দোষ থাকে তবে নিজের সহধর্মীনীর দোষ খোজার অধিকার রহিত হয়। নিজের স্ত্রীর কবে কার সাথে সামান্য মানসিক প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো সেটা নিয়ে মন খারাপ করে বিবাহিত জীবনের আনন্দ মাটি করার মানে হয় না। বিয়ের পর স্ত্রী আপনার প্রতি কতোটা বিশ্বাসী আর আপনি তার প্রতি কতোটা বিশ্বাসী সেটা বেশি জরুরি। আর বিশ্বাসটা একপক্ষীয় কখনোই নয়। বিশ্বাসী হোন, বিশ্বাসী পাবেন।