ধরুন, আপনি গ্রামের বাড়িতে গেছেন বেড়াতে। সেখানে বাড়ির পুরোনো মজা পুকুর খনন করাতে গিয়ে মাটির নিচে পেয়ে গেলেন একটি হাত ঘড়ির ধ্বংশাবশেষ। কে এই মজা পুকুরে এই হাত ঘড়িটি ফেলে গেলো!!! ব্যাপারটি তেমন গুরুত্ব না দিলেও শহরে নিয়ে এলেন ঘড়িটি। উপহার দিলেন সেই ভাঙ্গা ঘড়ির ফসিল পরিচিত এক বিজ্ঞানী বন্ধুকে। আপনার জন্য চমক অপেক্ষা করছিলো যখন আপনার বিজ্ঞানী বন্ধু ঘড়িটি পরীক্ষা করে জানালো এই ঘড়িটি দুই-হাজার বছরের পুরোনো!!!
এ কিভাবে সম্ভব ভেবে দেখুন তো, যেখানে এই হাত ঘড়িরই প্রচলনই শুরু হয়েছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ বছর পূর্বে!!!
ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক বৈকি!!!!???
হ্যাঁ এই রকমেরই একটি ঘটনা ঘটেছিলো ১৯০০সালে ক্রীট (Crete) এর উত্তরপশ্চিম Antikythera দ্বীপে। ঐ বছর আন্টিকিথেরা দ্বীপে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন উদ্ধারে খনন কার্য শেষে বহুসংখ্যক মার্বেল এবং ব্রোঞ্জ মূর্তির সাথে জাহাজে উঠে এলো একটি মেশিনারি কলকব্জা বিশেষ। যা দেখতে অনেকটা বড় ঘড়ির ভিতরের অংশের মত লাগছিলো, বাইরে থেকেই হুইল, লিভার, গিয়ার দেখা যাচ্ছিলো। উদ্ধারকৃত অনেক কিছুর সাথে সেটা সেদিন উঠে গিয়েছিলো জাহাজে।
মানুষের হাতে চলে আসার পর শুরু হয়ে গেলো গবেষণা। কি জিনিষটা? কিভাবে ওখানে গেলো? আর এই যন্ত্রাংশের বয়সই বা কতো???
যন্ত্রাংশটি আবিষ্কারের প্রায় ৭৫ বছর পর ব্রিট্রিশ সায়েন্টিস এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রফেসরা যন্ত্রাংশটির কার্বন পরীক্ষা করে এর বয়স নির্ধারণ করলেন। অবাক হবেন জেনে যে ঐ যন্ত্রাংশের বয়স ২০০০ বছরেরও বেশি!!! অর্থাৎ এর নির্মাণ সাল যীশুর জন্মেরও ৮৭ বৎসর পূর্বে।
এটি ৯৫% কপার এবং ৫% টিনের মিশ্রণে তৈরি। কপার আর টিনের মিশ্রণে একটি যন্ত্রাংশ তৈরি হবে যা সর্বপ্রকার মরিচা-রোধক হবে এই ধারনাই আমরা পেয়েছি কয়েকশ বছর পূর্বে!!!
বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন এই যন্ত্রটি তৎকালে জ্যোতিষবিদ্যার জন্য তৈরি হয়েছিলো এবং চন্দ্র-সূর্যসহ বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান এবং গ্রহের গতি-গমন-পূর্বাভাস দেয়ার জন্য ঐ যন্ত্র ব্যবহৃত হতো!!! ১৪০০ সালের পূর্বে কোনো ধরনের আধুনিক কলকব্জা বিশিষ্ট জ্যোতিষ ঘড়িই (Astronomical clock) বানানো হয়নি!!!
Antikythera দ্বীপে পাওয়া এই যন্ত্রটির নাম দুনিয়া জুড়ে The Antikythera Mechanism। এক্সরে তে দেখা গেলো ভিতরের কলকব্জা। ভিতরে যে ধরনের চাকা-চাকতি-গিয়ার ব্যবহার হয়েছে এর ব্যবহার ১৫০০সালের পূর্বে এই আধুনিক জগতের মানুষের কাছেই অজানা ছিলো!!!
অবাক করা এই যন্ত্রাংশ নিয়ে চলছে পরীক্ষার পর পরীক্ষা। কম্পিউটারের মাধ্যমে ভিতরের কলকব্জাসহ পুরো যন্ত্রাংশের জটিল গঠন প্রক্রিয়াটি যখন চোখের সামনে এলো তখন বিজ্ঞানীরা আরো হতবাক হয়ে গেলেন।
এই তো সেদিন ২০০৬সালে Cardiff University এর Professor Michael Edmunds এই যন্ত্রাংশ সম্পর্কে বললেনঃ
This device is just extraordinary, the only thing of its kind. The design is beautiful, the astronomy is exactly right. The way the mechanics are designed just makes your jaw drop. Whoever has done this has done it extremely carefully … in terms of historic and scarcity value, I have to regard this mechanism as being more valuable than the Mona Lisa.
বিজ্ঞানীদের তৈরী গঠন মডেলঃ
২০১২ সালে Freeth and Jones বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রকাশ করেন এই যন্ত্রের ভিতরের বিভিন্ন ধাতু চাকতি বিভিন্ন গ্রহের নির্দেশনা করে।
যেমনঃ
Moon (silver)
Mercury (turquoise)
Venus (lapis lazuli)
Sun (gold)
Mars (red onyx)
Jupiter (white crystal)
Saturn (obsidian).
নতুন দেখতে কেমন ছিলো Antikythera mechanism?
গবেষণা চলছেই। হাজার গবেষণায় হাজারো তথ্য বের হবে কিন্তু আমাদের প্রশ্ন একটাই, ২০০০বছর পূর্বে এই যন্ত্র কে ব্যবহার করেছিলো????? কিংবা কে করেছিলো এর আবিষ্কার????