আপনাদের উদ্দেশ্যে কলামঃ একটি গল্প এবং কিছু পরামর্শ

এনামুল হক
Published : 22 Feb 2012, 10:25 AM
Updated : 22 Feb 2012, 10:25 AM

আপনাদের আজ আমার বন্ধু জামালের জীবনের ছোটবেলার একটি গল্প শোনাবো।
গল্পটি ছোট, পড়বেন দয়াকরে।

তখন জামাল ক্লাস থ্রি বা ফোর এ পড়ে, বয়স ছিলো, ৮ কিনবা ১০বছর। একই সীমানায় প্রাচীরে চারটি বাড়ি, চারটি পরিবার বাস করতো। ১০-১২জন ভাইবোন, সবাই প্রায় সমবয়সী, খেলাধুলা আর ছোটাছুটিতে সারাটা দিন ব্যস্ত থাকতো।

ঘনিষ্ট আত্মীয়া তার একমাত্র মেয়ে নিয়ে সীমানার মধ্যেই একটি বাড়িতে বাস করতেন। টাকার গরম আর আভিজাত্যের অহংবোধের বেড়াজালে সারাক্ষন ডুবে থাকতেন তিনি। বাকী সব পরিবারের তেমন ভালো অবস্থা ছিলো না, তাই তার এক মাত্র মেয়েকে অন্য বাড়ীর সব ছেলে মেয়েদের সাথে মিশতে দিতেন না। জামালের ওই আত্মীয়ার বেশি যাতায়াত ছিলো তার মায়ের দিকের লোকজনের সাথে। তার বোনের ছেলে মেয়ে আসতো নিয়মিত এবং তার মেয়েটি তাদের সাথেই খেলাধুলা করতো। সেই সময়ই তাদের ঘরে ছিলো রঙ্গিন টেলিভিশন আর ভি,সি,আর। জামালরা যেখানে সাদাকালো টিভিতে রাতের নাটক দেখার জন্য কান্নাকাটি করতো, তখন ওই আত্মীয়ার ঘরে চলতো 'যিসকি বিবি মোটি —- মেরে আংগিনেমে তোমারা কিয়া কাম হায়—-'

জামালের আত্মীয়া ঐ ছোট বোনটি এতো কড়া শাসনের পরও লুকিয়ে তাদের সাথে খেলতে আসতো। কি যে খুশি হতো সে তখন তা লিখে বুঝানো যাবে না। তখন সে সবাইকে তার মায়ের দিকের কলেজে পড়ূয়া এক ভাইয়ের কিছু "অদ্ভুত" আদরের কথা শোনাতো। সবাই হা করে সেই "অদ্ভুত" গল্প শোনতো ।।

আজ ২৩-২৪বছর পর সেই অদ্ভুত গল্পের মর্মটা একটু ভালো করেই বোঝতে পারে জামাল । বোঝতে পারে অদ্ভুত সেই আদরের ইংরেজি একটি সুন্দর নামকরন আছে – CHILD SEXUAL ABUSE.

এই পোস্টটি যারা পড়ছেন, তাদের অনেকের ছোট ছেলে মেয়ে আছে, ছোট ভাই-বোন আছে। উপরের গল্পটি জামালের বোনের ক্ষেত্রে সত্যি হয়েছিলো। আমাদের ক্ষেত্রে হয়তো হয়নি, কিন্তু আমাদের কোমলমতি ছেলে-মেয়ে বা ভাই-বোনের ক্ষেত্রে সত্যি হতে কতক্ষন??

আমি জানি আপনারা সবাই খুবই সচেতন, নিজের সন্তান ভাইবোন সবার প্রতি কড়া নজর। কাদের সাথে মিশছে তা খুব খেয়াল রাখেন । কিন্তু একটি কথা মনে রাখবেন ABUSE ব্যাপারটা অপরিচিতদের বেলায় নয় বরঞ্চ নিকঠ আত্মীয়দের বেলায় বেশি ঘটে। ছোট বড়, কিনবা অনেক বড় অনেক বয়স বেশি আত্মীয় বলে কিছু নেই, এমন মানুষগুলো এই সব ব্যাপারটা ঘটাবে তা আপনি বিশ্বাসও করতে পারবেন না। বিশ্বাস সবাইকেই করি কিন্তু নজর রাখি আমাদের সন্তানদের উপর ।

কিছু পরামর্শ যা আপনারা জানেনঃ

১। আমাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রাখি, তাদের কথা-গল্প শুনি, তাদের সময় দেই, যাতে যেকোন ব্যাপারে তারা আমাদের সাথে আলোচনা বা শেয়ার করতে পারে।
২। মেয়েদের ক্ষেত্রে যেমন তেমনি ছেলেদের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকি, ছোট ছেলেরাও ছোট মেয়েদের মতো ABUSE হতে পারে।
৩। তাদের কাছে আপনার না দেয়া কোনো খেলনা, চকোলেট বা উপহার সামগ্রী দেখলে, এই ব্যাপারে সতর্কতার সহিত খোঁজ খবর নিন, কোথা থেকে এলো, কে দিলো।
৪। ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতে নার্সের বা অভিবাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। শিক্ষকের ক্ষেত্রে একা কোনো নিরিবিলি কোন কক্ষ না দিয়ে কিছু লোকজন আসা যাওয়া করে বা নজর রাখা যায় এমন কক্ষ নির্বাচন করুন।
৫। যে কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটলে আপনার সন্তানকে তা শেয়ার করতে বলুন।
৬। কে কি বিষয়ে আলাপ করে, কে কার মোবাইলে কি দেখিয়েছে এইসব ব্যাপারে সন্তানের কাছ থেকে সতর্কভাবে জানুন।
৭। আপনার সন্তানের আগ্রহ, আচরন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট বিশ্লেশন করুন, মা-বাবা দুজনে মিলে, দেখুন কোথাও অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে কি না। কিছু পেলে তার কারন খোঁজে দেখুন।
৮। সর্বোপরি, নিজের সন্তান, ছোট ভাই-বোনকে সময় দিন, তাদের বুঝতে চেষ্টা করুন।

পরিশেষে বলি, একটি গাছ ছোটবেলায় যত যত্নে রাখবেন, বড় হয়ে ততো সুস্থ সবল হবে, ততো ভালো ফল দেবে।

(এই পোষ্টটি আতংকিত করা কিনবা ভীতি প্রদর্শন বা সমালোচনার জন্য নয়, সচেতনতার জন্য। উপরে ব্যবহৃত গল্পটি সম্পুর্ন সত্য ঘটনা অবলম্বনে)