৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার হরতাল

হাবিব
Published : 6 August 2014, 05:51 PM
Updated : 6 August 2014, 05:51 PM

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ, ২ উপ-পরিদর্শক ও ডিএসবি কনসন্টেবল মোতাল্লেবকে অপসারণ করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে। ঘোষনা দেন সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীর।

ঘুষ গ্রহন, মাদক বিক্রেতাদের সাথে আতাত, মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি, টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ, দু-জন এসআই ও একজন ডিএসবি পুলিশের অপসারনের দাবিতে বুধবার দুপুরে কয়েকহাজার লোক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। জনসাধারনের এ বিক্ষোভে সরকার দলীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছসেবকলীগ সহ বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নেতারা ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সমর্থন জানান এবং আন্দোলনে অংশ নেন। বিক্ষোভ শেষে শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশে বৃহস্পতিবার থেকে অপসারন না হওয়া পর্যন্ত- লাগাতার হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে।

উপজেলার ধনতলা গ্রামের মোঃ সোহেল রানা, তার অভিযোগে বলেন, ধনতলা গ্রামের মুখতিয়ার নামে এক ব্যক্তি মেয়েকে বিয়েতে খরচ করার জন্য স্থানীয় বিসম্বর নামে ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রির জন্য ১০ হাজার টাকা বায়না নেয়। জমি রেজেষ্ট্রি করার সময় টাকা চাইলে বিসম্বর কোন টাকা দিতে অস্বীকার করে। টাকার অভাবে মুখতিয়ারের মেয়ের বিয়ে ভেঙে যায়। হতদরিদ্র মুখতিয়ার স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে বিচার না পেয়ে থানায় অভিযোগ করতে আসলে অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল ইসলাম জিয়া অভিযোগ গ্রহণ না করে মুখতিয়ারকে থানা থেকে বরে করে দেন। কোথাও বিচার না পেয়ে ও অপমান সইতে না পের ওই রাতেই মুখতিয়ার গলায় দড়ি আত্মহত্যা করে। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

মাসখানেক পূর্বে উপজেলার গোয়ালিমল গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে আজহারুল ইসলামকে বাড়ি থেকে থেকে তুলে থানায় এনে তাকে ফেনসিডিল সহ আটক দেখিয়ে কোর্টে প্রেরন করে। শহিদুল ইসলামের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে ওসি। টাকা দিতে না পেরে আজহারুলকে ব্যাপক মারপিট করা হয়।

বড়বাড়ি ইউনিয়নের বেলবাড়ি পুকুর পাড়ে বসবাসরত ভূমিহীন আনোয়ার, শফিল উদ্দীন, আইনুল হক জানান, তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নাই। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ওই পুকুরপাড়টিতে তারা বসবাস করে আসছে। এলাকার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির লোলুপ দৃষ্টি পরে পুকুরটিতে। ভূমিহীনদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য গত ১৫ জুলাই রাতে রাতে থানার ওসি সহ পুলিশ পুকুরপাড়ে বসবাসকারী ৫ জনকে ধরে নিয়ে আসে। পুকুরপাড় থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নেবার জন্য চাপ দিলে আটককৃতরা বাড়িঘর সরাতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তাদেরকে থানা হাজতে আটকে রেখে সারারাত নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে ভূমিহীনদের স্বজনদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

দুওসুও লালাপুর দীঘল বসতি গ্রামের খলিলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, জমি জমা সংক্রানে-র জের ধরে তার বাড়িতে কিছুদিন আগে আাগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। থানায় অভিযোগ করার পরে মামলার তদন্ত- করা বাবদ ৩ হাজার টাকা এবং মামলার অভিযোগপত্র শক্তভাবে দেয়া হবে এভাবে বুঝিয়ে থানার উপ-পরিদর্শক আঃ রহিম খলিলুরের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। পরে আসামী পক্ষের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ নিয়ে মামলার অভিযুক্তদের রেহাই দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে। খলিল আঃ রহিমের কাছে এর কারন জানতে চাইলে তাকে অন্য একটি মামলা করলে সেখানে পুষিয়ে দেয়া হবে বলে জানান।

গত প্রায় ১ মাস আসে বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নে পুলিশ ফেনসিডিল ও মাদক বিক্রির দায়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ৯ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের বাদ দেয়া হয় এবং ৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয় বলে জানান, মমিনুল ইসলাম ভাষানী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ভারতীয় সীমান-ঘেষা। সন্ধার পরে বা রাতে লোকজন বাড়ি থেকে বের হলেই পুলিশ তাদের হয়রানি করে। এরকম ঘটনা এর আগে কখনো এ উপজেলায় ঘটেনি। থানার উপ-পরিদর্শক আঃ রহিম, উপ-পরিদর্শক লোকেশ কুমার ও একজন ডিএসবি কনস্টবেল আঃ মোতাল্লেব এ কাজে লিপ্ত রয়েছে। অফিসার ইনচার্জ এসব ঘটনার জন্য মূল দায়ী।

বালিয়াডাঙ্গী অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল ইসলাম জিয়া এ সব অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান। উপ-পরিদর্শক আঃ রহিম জানান, এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, লোকের মুখে মুখে মাদকের ফেরিওয়ালা বলে খ্যাত কথাটি তার বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেন থানার উপ-পরিদর্শক লোকেশ কুমার।