আমাদের চোখ, হাত, পা খোলা, শুধু কনুইয়ে বরশি গাঁথা!

হাবিব
Published : 13 August 2014, 07:55 PM
Updated : 13 August 2014, 07:55 PM

সংবাদটি লিখলাম ঠিক এভাবে, মোটর শ্রমিককে মারপিটের কারনে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল চলছে। গত কয়েকদিন আগে ভাড়া নিয়ে বিতন্ডার পরে এক কলেজ শিক্ষক মোটর থেকে নেমে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মারপিট করে মোটরের কন্ট্রাকটর আর হেলপার কে। এ ঘটনায় কলেজ শিক্ষকসহ অজ্ঞাত আরো ২০/২৫ জনের নামে আদালতে মামলা হয়। মামলায় বুধবার কলেজ শিক্ষক আদালত থেকে জামিন পায়।


এতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই কলেজ শিক্ষকের জামিন বাতিল ও গ্রেপ্তারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকেন। তারা শহরের সমস্থ প্রবেশদ্বারে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করেন। শহরে আসা বা শহর থেকে বাহিরে নিজ গন্তব্যে যাওয়া সাধারন মানুষ দারুন ভোগান্তি তে পরে। পুলিশ তাদের কোন কর্মকান্ডকে বাধা দিতে পারছে না।

এখন আমার প্রশ্ন হলো-আমার চোখ, মুখ, হাত ও পা বাধা নেই, তারপরো এটা কি সত্যিকার সংবাদ হলো ? আমি মনে করছি এটা একটা পক্ষপাত মূলক সংবাদ হলো। তারপরো আমি এবং আমরা এরকম সংবাদ লিখি আর পত্রিকা টেলিভিশন তা প্রচার করে।

কিন্তু যদি সংবাদটি এভাবে লিখতাম যে, একজন কলেজ শিক্ষক একটি মোটরে করে কলেজে আসছিলেন। পথে মোটরের কন্ট্রাকটর ওই কলেজ শিক্ষকের কাছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া চেয়েছিল। কলেজ শিক্ষক কন্ট্রাকটর এর এ অযৌক্তিক দাবি না মানায় তাকে মোটরের ভেতরে অপমান করা হয়। অশিক্ষিত ওই কন্ট্রাকটর অশোভন আচরন করে আসছিল। মোটরটি ষ্টেন্ডে আসার পরে যাত্রীরা কন্ট্রাকটর এর এমন অশোভন আচরন করার কারনে তাকে ও মোটরের হেলপার কে মোটর থেকে নামিয়ে কিল ঘুষি মারে। এ সময় ওই কলেজ শিক্ষকও অপমান করার কারনে তাদের চর থাপ্পর মারে।

এ ঘটনায় মোটর শ্রমিকরা ওই কলেজ শিক্ষক সহ আরো ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। আদালত ওই মামলায় শিক্ষককে জামিন দেন।

কলেজ শিক্ষক জামিন পাবার পরে শ্রমিকরা জামিন বাতিল এবং কলেজ শিক্ষককে গ্রেপ্তারের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকে। আদালতের আইনজীবিদের মতে, আদালতের সিদ্ধান্তের পরে এমন আন্দোলন আদালত অবমাননার সামিল।

পুলিশ সাধারন যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে জনসাধারনের চলাচলে বাধা প্রদান করছিল শ্রমিকরা। এমন অবৈধভাবে যাত্রীদের চলাচলে বাধাদান করা একটি গুরুতর অপরাধ বলে আইনজীবিরা বলেন।

পুলিশ শ্রমিকদের এমন অবৈধ কাজ দেখছিল কিন্তু কোন প্রতিকার করেনি। বিভিন্ন সূত্র জানায়, পুলিশ প্রতিটি পরিবহনে নির্দিষ্ট পরিমান অবৈধ চাদা আদায় করে থাকে। এ কারনে শ্রমিকদের এমন অন্যায় আচরনেও পুলিশ নিরব দর্শক ছিল। পুলিশের এমন কার্যকলাপে জনসাধারন শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
শ্রমিকরা জানায়, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে, স্থানীয় জনগন জানান, কন্ট্রাকটর আর হেলপার কে মারপিট করা ঠিক হয়নি, তবে একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহারের কারনে এ মারপিট উচিত শিক্ষা ।

আদালতের বিবেচনায় মামলাটি জামিনযোগ্য বলেই কলেজ শিক্ষক জামিন পেয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবে সমাধান হবে বলে মনে করেন আইনজীবিগন।

পুলিশ জনসাধারনের নিরাপত্তা দিতে না পারলেও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব করতে ব্যার্থ পুলিশ এবং শ্রমিকদের এমন অন্যায় আন্দোলন পুলিশের সামনেই হচ্ছে, তাহলে জনগন এখন কি করবে ? ছোটখাটো যে কোন বিষয়ে সাধারন মানুষ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কাছে বার বার জিম্মি হচ্ছে।

সংবাদটি অনেক ছোট করেও লেখা যেতো। তবে এরকম বাস্তব সংবাদ লিখলে কি সংবাদপত্র বা টেলিভিশন তা প্রচার করবে ? করবে না। কারন, বাংলাদেশের পরিবহন শ্রমিক আর মালিক ইউনিয়ন সরকারের ভেতরে আর একটা সরকার। প্রায় সময় সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অন্যায় দাবি মেনে নেয়। আর এর নেপথ্যে রয়েছে ওই পরিবহন থেকে সাধারন পুলিশ থেকে শুরু করে মন্ত্রনালয় পর্যন্ত অবৈধ টাকা পায়।

তাই বলছি, এমন সত্য সংবাদ আমরা দেখছি, বুঝছি কিন্তু লিখতে পারছি না । তাহলে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে কি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই ? স্বাধীনতা আছে, আমাদের চোখ খোলা, হাত, পা খোলা কিন্তু দু-হাতের কনুই এ বরশি গাথা আছে, আর বরশির সুতাটি আছে, মালিক নামক শোষকদের কাছে। এমন সত্য লিখলে বরশি তে টান পড়বে !!!!!