মালের দৃষ্টি অন্তর্বাসে

হাবিব
Published : 7 June 2015, 07:08 PM
Updated : 7 June 2015, 07:08 PM

দিনের অধিকাংশ সময় নির্ভর করতে হয় রেডিও'র ওপর ! তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এটা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও, এটাই সত্যি যে, সতীন স্বভাবের জঙ্গী ভাইয়েরা আমাকে সেই যুগের সাথে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, তবে মোবাইল ফোনের ভাঙা ভাঙা তরঙ্গ পাওয়া যায়। এই ক'দিনে পাট শাকের ঝোল দিয়ে রুটি খাবার অনেকটা অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেছি। এই গরমেও্এখানকার প্রায় সবাই ঘরে, বারান্দায়, গাছের নিচে মাচায়, পাখার বাতাসের সাথে বেশ ঘুমিয়ে পরে। আমি পারছিলাম না। কিন্তু না ঘুমিয়ে কতদিন। রাত জেগে থাকলেও দিনে তো ঘুমাতেই হয়। আর এভাবেই এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, লোমকুপ দিয়ে পানির মতই ঘাম বের হলেও, পাখার বাতাসে, অথবা গাছের নিচে মাচায় দিব্যিসে ঘুমাতে পারি আমি।

বিনোদন বলতে একমাত্র রেডিও। সাংবাদিকদের দোষ একটাই, যেখানেই থাকা হউক, সেখানেই যেন খবরের উৎস খুঁজে ফিরে। আমার বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হয় না, যদিও প্রায়ই ঘুমের মধ্যে চমকে উঠি, মাথায় চাপাতির কোপ খাওয়ার যন্ত্রনা আর চিৎকারে। মাথা চেপে ধরেই বুঝে যাই, না এখনো আমাদের উগ্র ভাই সাহেবরা চাপাতি ঠেকাতে পারেনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চাপাতি ভাই সাহেবরা নিশ্চিত হয়েছে যে, আমি শহরে নেই, উপজেলার বাড়িতেও নেই। তারপরেও থানার অস্ত্র লুটের অন্যতম আসামী, অস্ত্র, বোমা সহ হাতেনাতে ধরা পড়া চাপাতি ভাই সাহেবগন উপজেলার বাড়ীর আশপাশেই অকারনে পান চিবোয় আর দিনভর আড্ডা দেয়, হয়তো অনেকেই বিষয়টা না বুঝলেও, তারা আমার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছে এটা নিশ্চিত হয়েছি।

বাংলাদেশ বেতারের বদৌলতে শুনলাম, বেশ মনযোগ দিয়েই শুনলাম, মাননীয় অর্থ মন্ত্রী আব্দুল মাল আল মুহিত সাহেবের বাংলিশ উচ্চারনের বাজেট বক্তব্য। বক্তব্য শুনে অবাক হই নাই, কারণ, এখনো বাংলাদেশের দেশ শাসনে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়া মানেই অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা, এটা সর্বজন বিদীত।

শিক্ষাখাতে বেশ ভালো টাকাই বরাদ্দ, তবে সেখানে শিক্ষার জন্য তথ্য প্রযুক্তি খাতে ভালো অংক বরাদ্দ রয়েছে। আবার আলাদাভাবেও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। থাকাটাও স্বাভাবিক। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের নামে দোয়েল কম্পিউটারের কথা কেউ কখনো ভুলে যাবে বলে মনে হয় না। সমগ্র বাজেট জুড়ে, ২০১৮ সালের মধ্যে দারিদ্রতা নামক শব্দটি মুছে ফেলার পরিকল্পনা প্রতিষ্ফুটিত হয়েছে। এতে আমরা বাহবা বাহবা বলে হয়তো তালহীন নৃত্যে মেতে উঠতেই পারি। কারণ, খাবার কিনতে বা জোগাড় করতে ব্যর্থ দরিদ্ররা বাড়ি-ঘর বিক্রি করে, কেউ চোর, ছিনতাইকারী, কালোবাজারী অথবা কেউ বিএসএফ'র বন্ধুকের নল উপেক্ষা করে কাটাতারের বেড়া পার হয়ে দেশান্তরী, অথবা গাদাগাদি করে নৌকায় ঢেউয়ের তোয়াক্কা না করে পরিবার নিয়ে সলিল সমাধি, অথবা শরনার্থী অথবা, ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের রক্ত মাংস খেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়াস দিয়ে দেশান্তর। দরিদ্ররা পালিয়ে গেলেই দারিদ্রতা মুক্ত বলে ঘোষনা খুব সহজ হয়ে যায়, যেখানে কথার সাথে কাজে মিল বা সাফল্য এসেছে বলে, ঢাক-ঢোল আর বর্ণাঢ্য র্র্যালি করে জানান দেয়া যায়, আমরা পেরেছি, আমরাই পেরেছি।
এসব চিন্তার মাঝে, দিন মজুর আলাউদ্দীনের কথায় খানিকটা ভিন্ন চিন্তা যুক্ত হলো। আলাউদ্দীন, গাছের ছায়ায় মাচায় বসে বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে আপন মনে বলতে লাগলো, ৭ টাকা দামের বিড়ি এখন ৯ টাকা প্যাকেট। সিগারেটের দাম বাড়েনি। এত জুলুম ক্যানহে বাহে ? বিষয়টি ভাববার-সরকার তামাক নিয়ন্ত্রনে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন, তাতে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়নি-এটা একটা নমুনা। আলাউদ্দীনকে বললাম বিড়িটা না খাইলেই হয়, কিন্তু তার সাফ কথা, কাঁদাত (কাঁদার মধ্যে) রোপা নাগাবার (লাগাবার) সময় ভাত না হইলেও বিড়িডা নাগিবেই ! নতুন ভাবনায়, বাজেট চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লাম। সেখানে দেখা গেলো, আমার মাননীয় মাল সাহেব, শহুরে প্রায় সকল প্রসাধনির কর খুব একটা বসাননি, ন্যুনতম কর করেছেন ৪ হাজার টাকা, আগের করদাতাদের ফাইল আপডেট করার উদ্যোগ নাই, কৃষকের জন্য যা বরাদ্দ তা লুটপাটের আর একটি নিদর্শন-বিষয়গুলি আমরা হয়তো দেখে বা শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু কিছুতেই মাথায় ঢুকলো না, মাল সাহেব অন্তর্বাসের দাম কমিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছেন ? নাকি বাহারী অন্তর্বাস তৈরীর কারখানা দিয়ে সারা দেশটাকেই অন্তর্বাস বা ৯০ ভাগ উলঙ্গ বানাতে চান?

হায় অভাগা দেশ, প্রগতিশীলরা বুর্জুয়ার খাতায়, বিকৃত মানসকিতায় জন্ম নেয়া দল বিলুপ্তির পথে, মাঝে দেশ, শহর, গ্রাম'র চারপাশে শফি হুজুরের আস্তানা প্রতিদিন বাড়ছে, অথচ মাল সাহেবের নজর সেই অন্তর্বাসেই নিবদ্ধ !!! হয়তো শিঘ্রই কোন এক যুদ্ধ বেধে যাবে, চিন্তাশীল/প্রতিক্রীয়াশীল আর মৌলবাদের মধ্যে, আর মাঝখানে মাল সাহেবদের দৃষ্টি সেই অন্তর্বাসেই নিবদ্ধ থেকে হয়তো, দুবাই, আরব-আমিরাত বা অন্য কোন স্বর্গরাজ্যের প্রাসাদে। সবুজ বাংলা, চাপাতির ঘায়ে রক্তাক্ত হলেও, সেই রঙ্গ মহলের বাসিন্দা মাল সাহেবদের দৃষ্টি তখনো নিবদ্ধ অন্তর্বাসে। রক্তের লাল লাল ছোপ, হোলি চলছে বলে হয়তো চালিয়ে দিবেন। বলবেন, আমরা এখন অতি আধুনিক। হায় অন্তর্বাস, যার উগ্র ঘামের তীব্রতায় মাল সাহেবদের নাক ব্যস্ত, সফী সাহেবরা চোখ টিপ টিপ করে বরবেন, মা বইনেরা, আপনারা এখন অন্তর্বাস পরিহান ছাড়া কেহ চলাচল করিবেন না, কারন আমাদের যখন তখন পৌরষত্বের প্রমাণ দিয়ে ফেলবেন।