এ লজ্জা রাখি কোথায়?

হাবিব
Published : 25 Oct 2011, 04:00 PM
Updated : 25 Oct 2011, 04:00 PM

সামনেই আসছে বিজয়ের মাস। ভুলতে পারিনা শুকুরউল্লার কাহিনী। পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়নি আজো কেন শুকুর উল্লাহ আত্মহত্যা করলো ? মনে পড়ে শুকুর উল্লাহকে-সালাম তোমাকে শুকুর উল্লাহ। আমার মাথা আজ লজ্জায় হেট হয়ে যায় তোমার কথা ভাবতে গেলেই-ক্ষমা করো শুকুরউল্লাহ-
১৯৭১ সালে কিছুতেই হার মানেননি শুকুরউল্লাহ। কখনো সম্মুখ আবার কখনো গেরিলা যুদ্ধ। মরনপন সে লড়াই। শত্রুকে পরাজিত করে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর শুকুরউল্লাহদের দীর্ঘ ৯ মাসের ত্যাগের ফসল এই স্বাধীন বাংলাদেশ। শুকুরউল্লাহরা আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতা, লাল সবুজ খচিত সবুজ একটি পতাকা। বিনিময়ে কি পেয়েছে তারা ?

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের রাজারপাট ডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শুকুর উল্লাহ (৭০) গলায় রশি দিয়ে দিয়ে ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ আত্মহত্যা করেছেন ! লাল সবুজ পতাকায় আচ্ছাদিত শুকুর উল্লাহকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হলো।

কিন্তু কেন আত্মহত্যা করলেন শুকুরউল্লাহ ? '৭১ এর অদম্য, অপরাজিত, জীবনবাজী রাখা এ সৈনিক কেন জীবনে পরাজয় মেনে নিলেন-যা জানা গেলো তা বড়ই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক।

যুদ্ধ শেষ হলো। স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। শুকুর উল্লাহ সম্মানী পেতে থাকেন ৯ শ টাকা। ২ ছেলে ১ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে অভাবের সংসার। ভ্যান রিক্সা চালিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ ও সংসারের খরচ জোগান দিতে হিমশিম খান তিনি। ছেলে দুটিকে অবশেষে হোটেলের কাজে লাগিয়ে দেন। আলসার ও কিডনির রোগে কিছুদিন আগে অসুস' হয়ে পড়েন তিনি। পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকেন অনেকদিন। সেখানে তোর কিডনি রোগের চিকিৎসা হয় না। তারপরও হাসপাতালের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকেন। একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় বিছানায় শুয়ে থাকেন। এভাবে আর কতদিন। রোগ নিয়েই চলে আসেন বাড়িতে। সেখানে অভাব। ছেলেদের উপার্জিত টাকাতে সংসারও চলে না তার ওপর ওষুধ খরচ। নিজেকে সংসারে বোঝা মনে করলেন শুকুরউল্লাহ। হতাশা আচ্ছন্ন করেছে সারাক্ষন। স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানালেন, শুকুরউল্লাহ শুধুই কাঁদতেন। চোখের কোন তার শুকাতো না কখনো। তারপরও তিনি কোন অভিযোগ করেননি। অসুখের শরীরেও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে উপোস থাকতে হয়েছে শুকুরউল্লাহকে। এমন জীবন আর বেশিদিন মানতে পারলেন না তিনি। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ৩০ মার্চ রাতে বাড়ির পাশে একটি গাছে গলায় রশি দিলেন তিনি ?স্ত্রী ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, মারা যাবার পর তিনি এ অফিস ওঅফিস ছুটছেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে কোন সাহায্য সহযোগিতার জন্য। কিন' সারা পাননি। বললেন, বাবু হামার কাথা পেপারত (পত্রিকায়) আগোত (আগে) লিখা হইছিল (হয়েছিল)। কোনহ (কোন) কাম (কাজ) হয়নি। সরকারটা কি মোক বাচে থাকপার (থাকার) ব্যবস'া করে দিবেনি? পঞ্চগড় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক মোঃ আব্দুল কাদের জানান, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে শুকুরউল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা বেগমের ভাতা এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন তার ভাতাটা তাড়াতাড়ি চালু হয়।

৩১ মার্চ যথারীতি কাফন পড়িয়ে তার ওপর লাল সবুজের পতাকায় আচ্ছাদিত করে জানানো হয় সম্মান। রাইফেল নিচু করে শ্রদ্ধা আর সালাম আর বিহগলের করুন সুর বাজানো হয়। জীবদ্দশায় কারো কোন সুর করুন হলো না শুকুরউল্লাহর প্রতি ? স্বাধীন একটি দেশ, একটি পতাকা দানকারী ওই দানশিল অদম্য শুকুরউল্লাহ জীবনের ভার সইতে না পেরে শেষ পর্যন- আত্মহত্যা করলেন। স্বাধীনতা ভোগকারী এই আমরা, রাষ্ট্র এত বড় দানের প্রতিদানকারী শুকুরউল্লাহদের কি দিতে পারলাম। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এখন বেঁচে থাকার জন্য পথে পথে ছুটছে ! এ লজ্জা রাখি কোথায় ?