হাসপাতালের অতিরিক্ত ফি: ধনী হওয়ার সহজ পদ্ধতি

ঘৃতকুমারী
Published : 11 August 2014, 05:29 PM
Updated : 11 August 2014, 05:29 PM

শিরোনাম দেখেই অনেকের মধ্যে কৌতুহল জাগতে পারে যে দেখাই যাক না পদ্ধতিটা কী । আবার পড়া শেষে অনেকে হয়ত এটা চিন্তাও করতে পারেন । তবে আজ যাই লিখছি সবটাই আমার অভিক্ষতা থেকে নেওয়া । দেখেন পড়া শেষে আপনারা ও আমার সাথে একমত হতে পারেন কিনা ।

মূল কথায় আসি । গতকাল আমি আমার অসুস্থ ফুফুকে নিয়ে গেলাম গাজীপুর তারগাছের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে । ডাক্তার প্রাথমিক চেক আপ শেষে ইসিজি ও ব্যাডের কিছু টেস্ট করাতে বললেন । তাই গেলাম প্যাথলজি রুম এ টেস্ট করার জন্য কিন্তু টেস্ট করার জন্য কাউন্টার থেকে বিল করিনি তাই প্যাথলজি রুম থেকে অনেকটা দমকের সুরে আমাদের বের করে দিলেন প্যাথলজির ওয়াড বয় কিন্তু সে ভাবতেই পারেনাই যে আমি তাকে উল্টা দমক দিয়ে সাবধান করে দিবো । এই ওয়ার্ড বয়  ১০ জনের মধ্যে ৯ জনকেই ধমক দিতো । যাই হোক, কাউন্টার থেকে বিল করে টেস্ট করার পর টেস্ট শেষ করে বাড়ি আসলাম । আর আগামীকাল তথা আজকের অপেক্ষায় রইলাম ।

আজ সকালে যখন ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখালাম তিনি বললেন আপনার পেশেন্ট এর শরীরে রক্ত লাগবে। দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করেন, তারপর অন্য চিকিৎসা । আসল নাটক শুরু এখান থেকে । আমি আমার বন্ধুকে দ্রুত আসতে বলি রক্ত দেয়ার জন্য ততক্ষণে ডাক্তার এর রেফারেন্সে আমি ফুফুকে হাসপাতালে ভর্তি করালাম। যেহেতু শুধু রক্ত দিবে, তাই জেনারেল এই গেলাম। কিন্তু যাওয়ার পর  দূর্গন্ধ আর নোংরা পরিবেশে আমার মাথা নষ্ট । অথচ বাইরে থেকে এই হাসপাতাল দেখে কেউই এই রকম চিন্তা করতে পারবে না। যাই হোক, গেলাম বন্ধুকে নিয়ে রক্ত দিতে। নতুন ওয়ার্ড বয় বললো, কাউন্টার থেকে ডোনার টেস্ট ফি জমা দিয়ে আসেন । কাউন্টারে টাকা না দিয়ে অন্য ওয়ার্ড বয় এর কাছে জানতে চাইলাম, আমি যেই গ্রুপ খুজছি, সেই রক্তের ব্যাগের দাম কত । সে আমাকে জানালো রক্তের সকল টেস্ট সহ দাম পরবে ১০০০ টাকা ।

গেলাম কাউন্টারে। ডোনার ফি চাইলো ৬৫০ টাকা। আমি জানতে চাইলাম যে, ডোনার আমি নিজে দিচ্ছি তারপরও এত কেন? কাউন্টারের চশমা পরা মহিলা আমাকে বলে, এইটা আমাদের নিয়ম, করলে করেন, না হইলে যান গা । কী করবো! যেহেতু রক্ত দিতেই হবে তাই নিজের সকল রাগ চেপে বিল দিয়ে ওয়ার্ড বয়কে দিতেই সে বললো, একটা ব্যাগ আনবেন হাসপাতাল ফার্মেসি থেকে। কারন বাইরেরগুলো নাকি ভাল না ।যাই হোক, নিয়ে আসার পর রক্ত ক্রস করার জন্য সময় নিল ১৫ মিনিট । এই কথা শুনে তো আমার চান্দি গরম। কারন, তিন মাস আগে যখন আমি রক্ত দেই, উত্তরা হাই কেয়ার হাসপাতালের প্যাথলজির একজন আমাকে জানায় রক্ত দাতার সাথে রক্ত গ্রহীতার সকল প্রকার টেস্ট ও ম্যাচিং করাতে সময় লাগবে ১ যন্টা । আমি যখন ওয়ার্ড বয়কে এই কথা বলি, তখন সে আমাকে যানায় যে, এখন বড় ম্যাডাম আছে, সময় লাগবোনা । আসলেই কী তাই না সবটুকুই প্রতারনা?

সব কিছু শেষে যখন রক্ত নিতে যাব, তখন সে ওয়ার্ড বয় বলে রিপোর্ট নিতে ১০০ টাকা লাগবে। যার জন্য কাউন্টারে বিল বানাতে হবে না। সব কিছু নিয়ে যখন রক্ত দিতে গেলাম, গিয়ে দেখি একজন নার্সও নাই। কারন জানতে চাইলে বলে, বড় স্যার আসছে, সকল নার্স ওনার সাথে। অথচ পাশের বেডের অসুস্থ মহিলাটি যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে । এই হচ্ছে তাদের সেবা।

যাই হোক, বড় ডাক্তার আমার ফুফুকে দেখে একগাদা টেস্ট দিলো যেখানে আগের ডাক্তার বলেছিল সবকিছু পরে আগে রক্ত দিন । রক্ত দেয়া শেষে শুরু হল নতুন তামাশা । একজন নার্স বলে আপনারা তো আজ যেতে পারবেন না, বড় ডাক্তার এর অনুমতি ছাড়া । কথা শেষ করে যখন চলে আসবো তখন অন্য একজন বলে, ঠিক আছে চলেন বিল করতে হবে । বিল দিলো এই রকম- বেড ভাড়া ৪০০, ডাক্তার ফি ৩০০, সার্ভিস চার্জ ৩০০ । আমি লজ্জা পেয়ে আর কিছু না বলে বিল দিয়ে চলে আসলাম ।

আশা করি যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝে গেছেন কী করে অল্প শ্রমে ধনী হওয়া যায় । আপনার কিছুই করতে হবে না, শুধু একটা প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়াগনষ্টিক দিয়ে দিন, দেখবেন কিভাবে খুব অল্প সময়ে আর একটি হাসপাতাল দেয়ার টাকা হয়ে গেছে ।

[বিঃদ্র – ডোনার ফি উত্তরায় ১০০০, ধানমন্ডিতে ১৬০০ পর্যন্ত নিয়ে থাকে খবর নিয়ে জানলাম ।]

[ আর হাসপাতালের কথা ভেবে ছবি দিলাম না যদিও খুব সুন্দর করে ছবি তুলেছিলাম ]

ভুল হলে দয়া করে ক্ষমা করবেন।