উপুড় করে দে মা, লুটেপুটে খাই

আমীন কাদীর
Published : 30 July 2012, 04:31 PM
Updated : 30 July 2012, 04:31 PM

ফেসবুকে কেউ একজন বরিশালের দেড়শ' বছর পুরনো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বেল ইসলামিয়া হোস্টেলের ছবি পোস্ট করেছিলেন। তার নিচে একটি মন্তব্য মনটা ভিজিয়ে দিল। মন্তব্যটি হল—ভাই, ছবিটা লুকিয়ে রাখেন; ছাত্রলীগের আগুন দান কর্মীরা এর দিকে নজর দিলে খবর আছে।

সত্যিই ছাত্রলীগ এখন আর ছাত্রলীগ নেই—এ দলটি এখন আগুনদান লীগে পরিণত হয়েছে। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এদের তাণ্ডব-নৈরাজ্য সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সৈয়দ মোদাচ্ছিরের কথিত দুই টাকা টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে লাখ-লাখ কোটি-কোটি টাকার চান্দাবাজি-পাণ্ডাবাজি-ডাণ্ডাবাজি করে এরা ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। এদের মাতৃ-সরকার মহাজোট তাদের জন্য সবকিছু উপুড় করে দিয়েছে, আর তারা জিহ্বায় চেটেপুটে খেয়েছে সবকিছু। এখন তাদের মনে লুটেপুটে খেয়েও সুখ নেই। তারা তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জ্বালাতে-পোড়াতে আগুনের মশাল হাতে ছুটে বেড়াচ্ছে।

সিলেটের ১২০ বছর পুরনো মুরারীচাঁদ কলেজ। এমসি কলেজ নামে সারা ভারতবর্ষে মশহুর। আসাম-বেঙ্গলের সেরার সেরা কলেজ। এটির ছাত্রাবাস আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করেছে সোনার ছেলেরা। ঐতিহ্যের অপূর্ব নিদর্শন তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ক্ষমতার মদমত্ততা তাদের কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এ ঘটনা তারই নজির। লেজের আগুন দিয়ে লঙ্কাপুরী পুড়িয়ে ছাড়খাড় করেছিল হনুমান। শেখ হাসিনার স্নেহধন্য সোনার ছেলেরাও আগুন নিয়ে খেলতে নেমেছে, তা বলাই বাহুল্য। নির্বিকার চিত্তে তারা ছাই করল বিশাল একটি প্রতিষ্ঠানকে। বোঝাই যাচ্ছে, লুটপাটের জমানার শেষ দিনগুলোতে তাদের বিবমিষায় পেয়ে বসেছে। তাই তাদের এই দানবীয় আচরণ। এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না। প্রতিপক্ষকে তাই আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করতে তারা তত্পর। শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে এমসি কলেজে গিয়ে কাঁদলেন। অর্থমন্ত্রী খুব চোটপাট করলেন। কিন্তু তাদের দৌড় ওই শিশুর কান্না আর চোটপাট বকাবাজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের দুই পয়সা দিয়েই বা পুছছে কে? কে দেয় এই অর্থমন্ত্রীকে পাত্তা! রাজশাহী ভার্সিটিতে পদ্মাসেতু চাদা কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধনে একটি লাশ পোড়ায় খুব গোস্বা করলেন তিনি! ছাত্রলীগের এই সোনার ছেলেদের গৌরবময় কর্মসূচিতে উত্সাহ না দিয়ে উল্টা তিনি বকলেন, এগুলো চাঁদাবাজ। এদেরকে পেটানো উচিত।

কে কাকে পেটায়? কে দেয় কার পাকা ধানে মই? আর কেই বা দেয় অর্থমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীর স্মৃতিধন্য ছাত্রাবাসে আগুন।
এ সবকিছুই ছাত্রলীগের অতুলনীয় কীর্তি। আর তাদের পেছনে মহা শক্তিদাত্রী হিসেবে আছেন যিনি, তার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়েই সবকিছু চলছে, হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মাঝেমধ্যে কিছু বেফাঁস কথা বলে লোক হাসাচ্ছেন। মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হলেও তার কথা শুনে মাঝেমধ্যে মনে হয় তিনি এই গ্রহে এই বাংলাদেশে থাকেন না। অনেকে বলে থাকেন, তার এইসব কথাবার্তা আসলে বুদ্ধিজীবী মার্কা মশকরা। তিনি এইসব চটকদার কথা বলেই খালাস। কতজনকে তিনি পেটাবেন! এটা কি মোদাচ্ছের মার্কা স্নেহের পিটুনি! প্রতিদিনই রাবি'র চাঁদাবাজি মার্কা শত ঘটনা ঘটছে।

১৭ ও ১৮ জুলাইয়ের পত্রিকায় নজর দিলেই ঢের প্রমাণ মিলবে। ১৪৩টি নৌবন্দরের ইজারা দেয়া হয়েছে কোনোরকম টেন্ডার ছাড়াই। কোনো নিয়মনীতির বালাই নেই। সব ভাগ করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা। এদের জন্য কোনো আইনকানুন নেই। এরা সবাই আউট অব ল। ১৬ জুলাই মাওয়া ঘাটের ইজারা শুধু আওয়ামী লীগের মধ্যে বিলিয়েও শান্তি নেই। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সেখানে নিজেরাই তুমুল ফাইট করেছে। ওসিকে পিটিয়েছে। আহত হয়েছে ১৫-১৬ জন।

এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রী ক'জনকেই বা চাঁদাবাজ বলবেন, ক'জনকেই বা পেটাবেন। তার চারপাশেই তো হাজার হাজার লাখো চাঁদাবাজ। হাজারও আগুনবাজ। মহাজোটের এই জতুগৃহে, যেখানে সরকারের হাতে সারাদেশ এরই মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলছে, পুড়ছে—তিনি সেখানে অথর্ব বকাবাজ ছাড়া আর কিছুই নন। তাকেই অর্থমন্ত্রকের সঙ সাজিয়ে তার সামনেই সারাদেশকে উপুড় করে দেয়া হয়েছে। আর লুটেপুটে খাচ্ছে তারই কথিত চান্দাবাজ-ডাণ্ডাবাজ-পার্সেন্টিজবাজ চক্র।