বিশ্বব্যাংকের করা দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ না দিলে নাকি পদত্যাগ করবেন না প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। ভারত সফর শেষে তিনি খুব বড়গলায় কথাগুলো বললেন। কমিশনবাজি-লুটবাজির কারণে দেশ যখন ডুবছে; তারপরও এদের ভণ্ড অহমের শেষ নেই। কোথায় কোচ দিয়ে দুর্নীতির আফ্রিকান মাগুর ধরার কথা; সেখানে মাগুরই এখন কোচ ধাওয়াচ্ছে। নাকে খত ও হাত-পা ধরে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে যা একটু লাইনে এনেছিলেন, মসিউর ঠিকই তাতে বাগড়া দিলেন।
অর্থায়ন আবার চালু করার জন্য বিশ্বব্যাংক চারটি শর্ত দিয়েছিল। এর তিনটি বাস্তবায়ন করা হলেও বাকি রয়েছে অর্থ উপদেষ্টার পদত্যাগ। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা ছিল। কিন্তু ভারত সফরের পর জিনসেং খেয়ে চাঙা। কে জানে—বিশ্বব্যাংক নয়, মালয়েশিয়া নয়, মহাচীনও নয়—এবার ভারতের কোনো কোম্পানির টাকাতেই হতে পারে পদ্মা সেতু। দিন যত যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হতে হতে গণধিক্কৃত দানবে পরিণত হতে চলেছে। দলটির তৃণমূল নেতাসহ তোফায়েল আহমেদের মতো পোড়খাওয়া নেতারা সবই টের পাচ্ছেন। কিন্তু লুটেরা-চাঁদাবাজ-কমিশনবাজ-তোলাবাজ-চাটাবাজদের দৌরাত্ম্যে কেউই সাহস করে সত্য বলতে ব্রতী নন। এতে দলটির মস্ত ক্ষতি হচ্ছে। কেমন করেই বা সাহস দেখাবেন তোফায়েল! তার মতো সিনিয়র নেতাকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলছেন—ভোলার মিয়া; ভোলার তোফায়েল মিয়া সব ভুলে যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হলোটা কি! তোফায়েল আহমেদের মতো জ্যেষ্ঠ নেতাকে এমন চটুল রসিক ভাষায় বঙ্গবন্ধুও ডেকেছেন কিনা জানি না। সে অধিকার বঙ্গবন্ধু রাখলেও তার কন্যাও রাখেন কি! আওয়ামী লীগে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মান-সম্মানও কি তবে অবশিষ্ট থাকছে না? প্রধানমন্ত্রী কঠোর ভাষা প্রয়োগেও পিছপা নন এখন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-প্রতিবাদের ঘটনায় বিরক্ত হয়ে তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘কঠোর হতে চাই না; কিন্তু কীভাবে কঠোর হতে হয়, সেটাও আমাদের জানা আছে।’
বুয়েটের অরাজনৈতিক মেধাবী ছাত্ররা নিকৃষ্ট নির্লজ্জ এক ভিসিকে চেয়ারে রেখে ক্লাসে যাবে না বলায় প্রধানমন্ত্রীর ওই স্টিম রোলারের হুমকি। ওই ভিসি তার গৃহশিক্ষক ছিলেন, তাই বলে এই নিকৃষ্টকে অপসারণ করা যাবে না। এই গোয়ার্তুমি কি একজন নেত্রীর মানায়! যত্রতত্র ভয়-হুমকি দেয়া একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য শোভনীয় নয়। তিনি আতঙ্কের মহারাজ হলে নিরীহ গোবেচারারা যাবে কোথায়! আর তিনি কঠোরতার হুমকি দিতে না দিতেই ঢাকা ও রাজশাহী ভার্সিটির হাল দেখুন। সেখানে প্রতিপক্ষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের হুলিগান ক্যাডাররা। বলতে না বলতেই গুণ্ডামি-সন্ত্রাস শুরু। আলামত মোটেই ভালো নয়। ভিন্ন মতকে এভাবে লাঠি-বৈঠা দিয়ে খুন করার উদ্যোগ সব সময় ভালো হয় না। রাজনীতিতে গুণ্ডামি শেষ কথা হতে পারে না। স্পর্ধা-অহংকার কখনোই নেতাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। সিরাজ সিকদারকে ক্রসফায়ার করে বঙ্গবন্ধু সংসদে চরম দম্ভভরে বলেছিলেন—কোথায় সিরাজ সিকদার! না সিরাজকে তিনি চির-কবর দিতে পারেননি, বরং ওই কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তিনি অপ্রতিরোধ্য নায়ক থেকে ক্রমেই অধঃপতিত অজনপ্রিয় নায়কে পরিণত হয়েছিলেন। শুনতে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়াই প্রাজ্ঞতার পরিচয়।
পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খাদিম হুসেন রাজার লেখা স্ট্রেনজার ইন মাই ওউন কান্ট্রি পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১ বইটি নিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে উদ্ধৃত আছে একাত্তরে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডার জেনারেল এ কে নিয়াজির বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, ‘এই হারামজাদা জাতি জানে না, আমি কে? আমি তাদের জাত বদলে দেব।’ খাদিম হুসেন বিদায়ের মুহূর্তে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়াজিকে বোঝাতে গিয়েছিলেন, কীভাবে যুদ্ধ মোকাবিলা করা যাবে। জবাবে নিয়াজি তাকে বলেছিলেন, ‘বন্ধু, এসব নিয়ে শঙ্কিত হয়ো না, আমি পরিস্থিতি সামাল দেব। এখন তুমি আমাকে তোমার বাঙালি বান্ধবীদের টেলিফোন নম্বরগুলো দাও।’ কেবল তা-ই নয়, তিনি তার অধীন সেনাদের বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা শুনে একজন তরুণ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও রাজা তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন।
জেনারেল টিক্কা খানের মন্তব্য শুনুন। ২৫ মার্চের রাতে খাদিম হুসেন রাজা যখন শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন, তখন টিক্কা খান তাকে বলেছিলেন, ‘এসবের কী প্রয়োজন? শেখ মুজিবকে ঢাকাতেই প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হোক।’ বেলুচিস্তানের টিক্কা কসাই একাত্তরে বাংলাদেশেও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
এ কে নিয়াজিরই আরেক সহযোগী রাও ফরমান আলী তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের সবুজ জমিন লাল করে দিতে হবে।
নিয়াজি-টিক্কা খানরাও ফরমান আলী। ’৭১-এ কী ভয়ংকর দম্ভ-অহংকার-কাঠিন্য-কঠোরতার হুমকি-ধমকি ছিল তাদের কণ্ঠে। আজ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়েও তাদের ঠাঁই মিলছে না। ইতিহাস সাক্ষ্য—দানবের দম্ভ সাময়িক। দানবের ঔদ্ধত্য-অহম কখনও চিরস্থায়ী হয় না।
লীলা আজাদ বলেছেনঃ
মহাজোট সরকারের সর্বনাশ হয়েছিল, গত নির্বাচনের ফলাফলে! নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়! একা আওয়ামী লীগ এত বেশি সিট পায় যে শেখ হাসিনার মাথা যায় আউলিয়ে! এক ঘুঁয়েমি স্বভাবটা চান্দিতে উঠে! এর কারনে দলের সিনিয়র আর মহাজোটের নেতাদের তিনি এত বেশি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন, যার রেজাল্ট সব এখন একে একে পাচ্ছেন! এখন তরী ডোবার সময়ে তোফায়েল-মেননদের মন্ত্রী করে তিনি দয়া দেখাতে চেয়েছিলেন! উল্টো চড় মারার মতো এরা যে তাকে এমন প্
রত্যাখ্যান করবেন, তা কি ভাবতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা? এখন এই প্রত্যাখ্যানে যে যত বিপ্লব দেখুন না কেন, আমি ভাবছি সম্ভাব্য করুণ সব পরিণতি-নকশার রূপরেখা বৃত্তান্ত! শেখ হাসিনা কি পরিমান প্রতিহিংসা পরায়ন হতে পারেন, তা নিশ্চয় তোফায়েলও জানেন। আওয়ামী লীগ যারা করেন-করবেন, তারা একটা বিষয় নিশ্চিত হতে পারেন, তাহলো আর অন্তত শেখ হাসিনার জমানায় মন্ত্রিত্ব বা কিছুই পাচ্ছেন না আর তোফায়েল আহমেদ! আব্দুর রাজ্জাকের মতো করুণ মৃত্যু যাতে তার হয়, শুভাকাংখীরা সে দোয়া তার জন্য করতে পারেন।
আমার ধারনা ফজলে হোসেন বাদশাদের কারনে রাশেদ খান মেননকে ওই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে! মন্ত্রিত্ব ছাড়াই এই জমানায় তিনি যা কামিয়েছেন, এ অবস্থায় তার এমন বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেবার কথা নয়। তিনি শেষ পর্যন্ত মহাজোটে থাকবেন কিনা বা থাকতে পারবেন কিনা সেটিও দেখার বিষয়। ব্যক্তিগত-পারিবারিক কারনে তার সঙ্গে অবশ্য বিএনপির নীতি নির্ধারকদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো! এখন তার ব্যাপারেও শেখ হাসিনার মাথার দুষ্টবুদ্ধিগুলো খেলাধুলা শুরু না করলে হয়!
আমাকে অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন, হাসানুল হক ইনু চরম একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন! কিন্তু আমার মতে এ অবস্থায় কিইবা করার তার ছিল? মশাল ফেলে যেদিন নৌকায় চড়েছেন জাসদের সাবেক বিপ্লবী নেতা, বিপ্লবতো তখন থেকেই ভিজে চুপসে জবজবা! মহাজোটের কারনে না হয় গত নির্বাচনে তিনটি আসন পাওয়া গেছে! আর কি কভু পাওয়া হবে? আ স ম আব্দুর রবের বিবৃতি পড়ে মজা লাগলো! শেখ হাসিনার আগের সরকারে মৎস ও পশু সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন রব ভাই। এখন ইনুর মন্ত্রিত্বে নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন! কষ্টটা তার বোধগম্য! হায়রে বিপ্লবী সব! এদের দেখানো বিপ্লবের স্বপ্নে জীবন ঝরিয়েছে কত হাজার তরুণ!
এলডোরাডো বলেছেনঃ
হাজার হাজার না হলেও শত শত তরুন এখন ও এদের দেখানো স্বপ্নে জীবন বাজী রেখে বিপ্লবের অন্ধকার , সীমাহীন পথে পথ চলছে। দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের বিপ্লবীরা (সর্বহারা পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি, পুর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি, এম এল, এম এল জনযুদ্ধ, ইত্যাদি, ইত্যাদি) সবই তো এই ইনুদের স্বীকৃতি না পাওয়া সন্তান কিংবা হতে পারে সৎভাই।
“কাস্তে-কোদাল, ঝারু-মশাল” ফেলে নৌকার পদলেহনকারী এসব লুইচ্চা বামদেরকে ঘৃনা জানাতেও জনগনের রুচিতে বাধতে পারে।
লীলা আজাদ বলেছেনঃ
আমার কোন ক্ষোভ বা দুঃখ নেই: মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা জানিয়েছেন, মন্ত্রিত্বের চেয়ে তার কাছে দল অনেক বড়। ব্যক্তি হিসেবে তার মন্ত্রী হওয়া না হওয়ায় কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, আমি দলকে ভালবাসি, আমার দলেরই দরকার। নিজের মধ্যে কোন ধরনের ক্ষোভ বা দুঃখ নেই বলেও জানিয়েছেন প্রবীণ এই নেতা। তিনি বলেন, মন্ত্রী নয়, আওয়ামী লীগের তোফায়েল হিসেবেই থাকতে চাই।
নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের পর নিজ বাসায় তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রিসভায় যোগ না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি রাজনৈতিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত নই। দ্বিতীয়ত, আমাকে কাপাসিয়া উপ-নির্বাচনের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এখন আমি সেই দায়িত্বই ভালভাবে পালন করতে চাই। তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে আমি কিছুই করতে পারবো না। কোন ধরনের হতাশা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে তোফায়েল বলেন, আমার মধ্যে কোন ক্ষোভও নেই, হতাশাও নেই।
সরকার সফলভাবে দেশ পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান যে মন্ত্রিসভা, আমি মনে করি তারা সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি সব সময় পরিশ্রম করছেন, সঠিকভাবে সরকার পরিচালনা করছেন।
নতুন মন্ত্রীদের সাফল্য কামনা করে প্রবীণ এই নেতা বলেন, যারা এখন মন্ত্রী আছেন বাকি দিনগুলো তারাই ভালভাবে কাজ করতে পারবেন এবং নতুন করে যারা যোগ দিয়েছেন তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আমার মতো একজন তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিসভায় যোগ না দিলে তাতে কিছুই যায় আসে না।
নিজেকে দলের সাধারণ কর্মী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন জানিয়ে তোফায়েল বলেন, আমি আমার দলকে ভালবাসি। মন্ত্রিত্ব থেকে দল অনেক বড়। একজন সাধারণ কর্মী থেকে আমি যদি দলের জন্য কাজ করে যেতে পারি, তবে নিজেকে ধন্য মনে করবো। দলের লক্ষ লক্ষ হাজার হাজার কর্মী, তারা এই দলকে সংগঠিত করে রেখেছে, আমি তাদের একজন। সুখে-দুঃখে তাদের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।