রাবিশ, টোটালি রাবিশ

আমীন কাদীর
Published : 20 Sept 2012, 06:51 PM
Updated : 20 Sept 2012, 06:51 PM

রাবিশ, টোটালি রাবিশ। রাবিশ একটা অর্থ মন্ত্রণালয়। টোটালি রাবিশ এই মিনিস্ট্রি। টোটালি অথর্ব, অকর্মণ্য, অকার্যকর এই মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তা। এখন দেশে অর্থনীতি মানেই লুটনীতি। উপুড় করে দে মা, লুটেপুটে খাই। অর্থমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সব সেক্টরকে অলরেডি উপুড় করে দেয়া হয়েছে। সারা দেশটাকে লুটের মাল বানিয়ে উপুড় করে দিয়েছেন মা, সোনার বাংলার সূর্যসন্তানেরা দিব্যি তা চেটেপুটে লুটেপুটে খাচ্ছে তাড়িয়ে তাড়িয়ে। চাটানীতি প্লাস লুটনীতি ইজ ইকোয়াল টু মহাজোট জমানার অর্থনীতি। চাটাদল চাটছে আর চাটছে। চাটাদলের চাটার হাত থেকে কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। তারা এরই মধ্যে শেয়ারবাজার চেটেছে। এমন চাটাই চেটেছে শেয়ারবাজারের কঙ্কালটিও নেই হওয়ার দশা। লুটপাট, নির্যাতন, টানাহেচড়া, ধর্ষণের পর কোনো বিধ্বস্ত জনপদের যে চেহারা হয়, শেয়ারবাজারের এখন সেই চেহারা হয়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদনের নামে রেন্টাল-বার্জ মাউন্টেন লুটপাট হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি; আমি পেয়েছি চোরের খনি। তার মেয়ে শেখ হাসিনার চলতি জমানায় সরকার-সাবেক আমলা-লুটেরার পিপিপি—পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে আস্ত একখানা সোনার খনি পয়দা করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক, শেয়ারবাজার, রেন্টাল বিদ্যুত্ সেকটরকে লুটের সোনার খনিতে রূপান্তরের ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তারা। জনগণের টাকায় কীভাবে সরকারি উদ্যোগে লুটের খনি বানানো যায়, তার নজির আমরা চর্মচোখেই দেখলাম। সারা দুনিয়ায় তেল উত্পাদন করা হয় মাটির নিচ থেকে; মাটির নিচের সেই খনিকে বলা হয় তেলের খনি। এই তেলের খনি প্রকৃতির দান। আর আমরা লাখ লাখ পেট্রোডলার খরচ করে তেল আমদানি করে রেন্টাল বিদ্যুত্ নামের লুটের খনিতে ঢাললাম; তারপর সরকার ও পারািরিক পৃষ্ঠপোষকতায় স্নেহভাজন লুটেরাদের সেই খনিতে নামিয়ে দিলাম; তারা সেই তেলকে টাকা-ডলার বানিয়ে লন্ডন-আমেরিকা পাচার করে নিয়ে গেল। শেয়ারবাজারকেও এমনই খনি বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। লুটেরারা নিখুঁত ও সুন্দরভাবে সবকিছু খনন করে নিয়ে গেছে। '৭৪-'৭৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের ঐতিহাসিক ঘটনা খুবই মশহুর। বাঙালির হাজার বছরের সেরা লুটারি অ্যাডভেনচার। এত সুন্দর লুটপাট দস্যু বনহুর, দস্যু মোহনরাও করতে পারেনি। এবার অবশ্য লুটেরা চক্র বাংলাদেশ ব্যাংকে যায়নি, বরং তারা বেছে নিয়েছে ঠিক তার উল্টো দিকের টাকার খনি সোনালী ব্যাংককে। আটঘাট বেঁধেই এই লুটের মাস্টারপ্ল্যান হয়েছিল। আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন করা হয়েছিল রক্ষক নামের ভক্ষকদের। খুব রাশভারি নাম। পরিচালক পর্ষদ। এই পরিচালক বাবাজিদের পরিচয় কি! মাশাল্লাহ, ব্যাংক পরিচালনায় তাদের অসীম দক্ষতা। তারা সবাই ছাত্রলীগার, নয়তো যুবলীগার, নয়তো ভিএইচপির উপদেষ্টা—না এটা কোনো ভারতীয় সংগঠন নয়, এটা হলো বিশ্ব হুলিগান পরিষদ। এরা ব্যাংকের টাকা রাহাজানিকারীদের পৃষ্ঠপোষক। তাদের শিক্ষাদীক্ষার দৌড় কতদূর! না; ব্যাংকিয়ের সঙ্গে কোনোরকম জানাশোনা না থাকলেও কীভাবে ব্যাংক-হুলিগানদের দাদাগিরি করতে হয়, তা তাদের খুব ভালো জানা। এই পরিচালক বাবাজিদের কাজ কী? সকাল-বিকাল-রাতে খালি কাজ আর কাজ। যারা সোনালি ব্যাংকের ঋণখেলাপি; কোটি কোটি টাকা মেরে যারা বিরাট-বিশাল বড়লোক, তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি। ঋণ মওকুফ-রিশিডিউলের নামে ৩০-৪০ পার্সেন্ট কমিশন খাওয়া। স্বয়ং কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জানিয়েছেন এই তথ্য। ব্যাংকের টাকা মেরে লুটপাটের কনসোর্টিয়াম এদের কায়িক মদতেই হয়ে থাকে। এই রক্ষক-ভক্ষক শ্রেণীর যোগসাজশেই ঘটল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর লুট কেলেঙ্কারি। এই লুট একমাত্র সেই বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের সঙ্গেই তুলনীয়।

রাবিশ। টোটালি রাবিশ একের পর এক ঘটনা। আর দুষ্টু অর্থমন্ত্রী লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে এই লুটেরাদের পক্ষে ওকালতি করে চলেছেন। তার প্রাজ্ঞ কণ্ঠে আমরা অনেকবার স্টুপিড, ফটকাবাজ, চিট রাবিশ কালপ্রিট, মিসক্রিয়েন্ট ইত্যাদি শব্দমালা শুনেছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে থুথু দিতে নেই, এটা করলে নিজ গায়েই পড়ে। মুহিত সেই কাজই করেছেন। এটা কত বড় স্টুপিডিটি যে, দেশের অর্থব্যবস্থাকে তিনি পুরোপুরি ফটকাবাজদের আখড়া বানিয়ে ছেড়েছেন। অনেক লমম্ফঝমম্ফ শেষে এখন দেখছি বায়তুল মাল মন্ত্রীর অধোবদন। তাও যখন তিনি সাফল্যের সঙ্গে বায়তুল মালকে বায়তুল দেউলিয়া বানাতে পেরেছেন। এখন তার খুব লজ্জা। তিনি আর মন্ত্রী থাকতে চান না।

নয় মাস ধরেই নাকি তিনি পালানোর পথ খুঁজছিলেন। মুহিতকে এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ—তিনি জনগণের মনের ভাষা প্রায় নয় মাস আগেই বুঝতে পেরেছিলেন; মহাজোট সরকারের অন্য লাজশরমহীনেরা যা এখনও না বোঝার ভান করে চলেছেন। কিন্তু তাকে পালাতে বাধা দিল কে! আগেভাগে পালিয়ে গেলেই তিনি অন্তত এই একটা ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারতেন। তাকে শিখণ্ডি বানিয়ে দেশ লুট চলছে। তিনি এখন কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারবেন না। চার হাজার টাকা লুটপাটকে বড় কোনো লুটপাট নয় বলে দাবি করে তিনি এখন মহাজোট লুটপাটের সবচেয়ে বড় সাক্ষী হিসেবে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। তিনি তো এখন সব বিশাল লুটপাটের রাজসাক্ষী। বিএনপি সরকার আসুক, শেখ হাসিনা কথিত তৃতীয় শক্তি আসুক, অন্য কোনো রাজনীতি আসুক—কেউ তাকে ছাড়বে বলে মনে হয় না।

***
প্রকাশিত: http://www.amardeshonline.com