এমন জানলে মন্ত্রীই হইতাম না

আমীন কাদীর
Published : 6 Dec 2012, 05:56 AM
Updated : 6 Dec 2012, 05:56 AM

ধোঁকা ধোঁকা ধোঁকা। আমার সঙ্গে বিরাট ধাপ্পাবাজি হয়েছে। আমাকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। আমার মতো হানড্রেড পারসেন্ট অনেস্ট লোককে যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তা দুিনয়ার ইতিহাসে বিরল ঘটনা। যাদের সেবা করার জন্য আমি মন্ত্রী হয়েছিলাম, সেই সেবাধর্ম আমি অতি ঈমানদারের মতো বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করেছি। আমি বেঈমানি করি নাই। আমি ব্যবসা করেছি ব্যবসাদারের মতো। মন্ত্রিত্বও করেছি ব্যবসাদারের মতো। ব্যবসা যেমন দিয়ে-থুয়ে ভাগবাটোয়ারা করে করতে হয়। মন্ত্রিত্বও ঠিক সেই স্টাইলে ঈমানের সঙ্গে করেছি।

আমার বাসায় ওয়েব স্টার, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ সব ধরনের ডিকশনারি আছে। আমি এবং আমার কন্যারা নিয়মিত ডিকশনারি পড়ি। ডিকশনারি পড়া আমাদের অবসর বিনোদন। আমি কোনো ডিকশনারিতেই বেঈমানি শব্দটা পাই নাই। আর যদি আমার পারসোনাল ডিকশনারির কথা বলেন তবে বলব, সেখানেও বেঈমানি বলে কোনো ওয়ার্ড নাই। বেঈমানির মধ্যে আমি নাই। আর যদি কখনও কারও সঙ্গে বেঈমানি করিও বা; আমি বেঈমানিও করেছি অত্যন্ত ঈমানদারির সঙ্গে। আজকে আমার সঙ্গে যারা বেঈমানি করতেছেন; আমি সবই মনে রাখতেছি। কথা দিচ্ছি যখন সময় হবে তখন আমি তাদের সঙ্গে অতি ঈমানদারির সঙ্গে বেঈমানি করব। কেননা এই দিন দিন না, আরও দিন আছে; এই দুর্দিনকে নেব আমি কেরদানির কাছে।

যারা আমাকে শিখণ্ডী বানিয়ে পদ্মা সেতুর খালি ননী-মাখন খেয়েছেন, বখরা নিয়েছেন, কমিশনবাজি করেছেন—তারা আগামীর ইতিহাসে থাকবেন কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি থাকব। আমার ব্যবসা থাকবে। আর তাদের কমিশনলোভী লালায়িত জিহ্বা থাকবে। তাদের চান্দা খাওয়ার ক্ষুধা থাকবে। সেই বঙ্গবন্ধু আমল থেকে দেখে আসতেছি। চান্দা খায় না—রাজনীতিতে এমন কোনো পাঙ্গাশ মাছ নাই। তারা ভুলে গেছে আমি নেয়ার পার্টি না। আমি দেয়ার পার্টি। তাদের দিতে দিতে এত বেশি বেশি দিতেছিলাম; তারা মনে করছে আমারে সরকারের চান্দাবাজির ক্যাশিয়ার করলে তাদের অ্যাকাউন্টে সব টাকা ডলার পাউন্ড জমা পড়বে। ঘাটে ঘাটে টাকা নষ্ট হবে না। সেই কাজ কি আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে করি নাই? আমি কি কোনো বেঈমানি করেছি! তবে আমার সঙ্গে তারা বেঈমানি কেন করল?

ঘুষ উেকাচ কমিশন বখরা চান্দা ইত্যাদি আদায় ও ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে আমি উল্টা পিরামিড থিওরি চালু করেছিলাম। ক্যাশিয়ার হিসেবে যা ঘুষ-চান্দাপাতি জোগাড় করেছি, তার মধ্যে অতি অল্প পরিমাণ আমি রাখতাম। সামান্য কিছু তো আমার রাখতেই হবে। আমি বাড়ি থেকে, আমার ব্যবসা থেকে টাকা এনে চান্দাবাজি করার শপথ মন্ত্রিত্ব নেয়ার সময় নেই নাই। চান্দা বখরাবাজিতেও নানা টুকটাক খরচ আছে। সার্ভিস চার্জ লাগে। আমি সেই সার্ভিস চার্জ খালি কেটে রাখতাম। বাকি সব অর্থ সাচ্চা ঈমানদারের মতো উল্টা পিরামিডের উপরতলায় পৌঁছে দিয়েছি। কিছুই রাখি নাই। আমি আজও বলব, কালও বলব—যতক্ষণ আমার দেহে আছে প্রাণ—আমি বলেই যাব, আমি চোর নই। চোর ছিলাম না। আমি কিছুই চুরি করি নাই। পৃথিবীতে এমন কোনো মেশিন নাই, এমন কোনো আইন নাই যে আমাকে চোর প্রমাণ করা যাবে।

আমি সত্ স্বচ্ছ নিষ্ঠাবান। আমি নিষ্ঠা অধ্যবসায়ের একটা বিরাট দৃষ্টান্ত। এক্ষেত্রে আমার নাম গিনেজ বুক অব রেকর্ডে ওঠা উচিত। নিজের ঢোল নিজে পেটানো ঠিক না। কিন্তু এখন আর নিজের ঢোল না পেটালে আর কেউ পিটিয়ে দেবে বলে বিশ্বাস করি না। আমার আত্মজা পাকিস্তানি আর্মিদের পক্ষে, তাদের প্রেমপিরিতি ভাব ভালোবাসা নিয়া একখানা ঐতিহাসিক ছবি বানাইছিল। দেশের বড় বড় পত্রিকার সাংবাদিকদের মাল খাইয়েও ছবিটা হিট করাতে পারি নাই। সেই আমার যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। অথচ যদি তখন নিজের ঢোল নিজে পেটাতাম, তাহলে ওই দুর্দশা হতো না। ঘরের টাকা ঘরেই থাকত। আমি সবসময় বড়গলাতেই বলে থাকি—শুধু বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীতে এমন কোনো লোক বলতে পারবে না, পৃথিবীতে এমন কোনো লোক সাক্ষী হিসেবে আমার সামনে দাঁড়াতে পারবে না যে, জীবনে কারও কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করেছি। সততা-স্বচ্ছতা-বিনয়বৈশিষ্ট্য আমার বৈশিষ্ট্য। এটা নিয়েই আজীবন থেকেছি।

আপনারা অনেকে বলবেন, এই দাবি এত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করি কেমন করে। এর কারণ হলো, ব্যবসা তো আমি ২-৪ বছর ধরে করি না। এটা আমার কয়েকপুরুষের ধান্দা। আমি তো এই লাইনে ভাইসা আসি নাই। আমি রাজনীতিতে চান্দা দিতে দিতে আসছি। সেই বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে ঘাটে ঘাটে চান্দা দেয়া পার্টি আমি। পলিটিশিয়ানদের খাই আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। এই যে তাদের উল্টা পিরামিড থিওরিতে এত খাওয়ালাম—কই তাদের খাই কি তাতে কিছু মিটেছে। বরং এখন দেখা যাইতেছে যে, সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপাইয়া কেটে পড়ার তালে আছে। বিশ্বব্যাংকের টাকা আবার ভুলিয়ে-ভালিয়ে এনে আরও বড় দাঁও মারার তালে আছে।

ওদের কোনো ঈমান নাই। ওদের কাছে চান্দা বখরাই বড়। ওরা চান্দাবাজির জন্য সব ঈমান বেচতে পারে। ওদের বিশ্বাস নাই। ওরা দেখা যাবে আরেকজনকে চান্দার ক্যাশিয়ার বানিয়ে দিব্যি আমাকে কলঙ্কের ফাঁসিতে লটকে দিয়েছে। ওদের জন্য আমি কি করি নাই! চান্দার টাকা নিজে কিছুই রাখি নাই। ভেবেছি আমি ব্যবসাদার মানুষ। জীবনে অনেক কামিয়েছি। আগামীতে আরও কামাব। ওরা যখন এত আশা করে আমাকে ক্যাশিয়ার বানিয়েছে—আমার ঈমান আমি ঠিক রাখি। তাই ওদের সব চান্দার টাকা বিদেশের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছি। দেশের টাকাকে ওদের জন্য সোনা চান্দি ডলার পাউন্ড কানাডিয়ান ডলার ইউরো বানিয়ে পাঠিয়েছি। সেই বিশ্বাসের ওরা প্রতিদান রাখবে বলে মনে হচ্ছে না। ওরা তো আমার মতো ঈমানদার নয়। ওরা হচ্ছে বংশীয় বেঈমান। ওদের আমি সেই গ্রাম থেকে হাড়ে হাড়ে চিনি। ওদের বাপদাদা চৌদ্দপুরুষকে চিনি। ওরা হচ্ছে মুহুরি গোমস্তার জাত। ওরা মোটেই উচ্চবংশ নয়। টাকা দেখলেই ওদের জিহ্বা লক লক করে। ওরা একসময় ইন্ডিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। আবার সেই ওরাই পাকিস্তানি ভুট্টোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইন্দিরার সঙ্গে বেঈমানি করেছে। ওদের কাজ বেঈমানি আর বেঈমানি।

আমি জীবনে কোনোদিন হাস্যমুখ ছাড়া কথা বলি নাই। ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা লস খেয়েছি। আমার কর্মচারী লাখ লাখ টাকা মেরে দিয়ে পালিয়েছে। তারপরও আমি হাস্যমুখ কালো করি নাই। চোরা কর্মচারীকে ধরে পুলিশে দেই নাই। তারে ধরে আনার পরও নিজ হাতে পেটাই নাই। হাসি হাসি মুখে বলেছি—বাবা, ভালো হয়ে যাও। ভালো হওয়ার বিকল্প নাই। আমার টাকা মেরে আর কয় টাকা কামাবা। তার চেয়ে আমার সঙ্গে থাকলে অনেক বেশি কামাতে পারবা। আমি তোমাদের কামাবার পথ দেখাব। আমার সেই দাতা মহসীনগিরি বিফলে যায় নাই। তারা আমার পথে এসেছে। আমার কথা শুনেছে। সেই চোরা কর্মচারীই আমার কোম্পানিতে পরে এমডি-ডিএমডি পর্যন্ত হয়েছে। এমনকি আমি দাবি করতে পারি, আমার আশীর্বাদ পেয়ে মন্ত্রী-এমপি পর্যন্ত হয়েছে। এ সবই আমার হাস্যমুখের কীর্তি। আমি জীবনে হারি নাই। সেই আমার মতো লোকের আজ করুণ দশা। আজ বিশ্বচোর বিশ্বচান্দাবাজ বিশ্বলুটেরাদের পাল্লায় পড়ে অসত্ সংসর্গে পড়ে আমার হাসি মুখের হাসি আর ধরে রাখতে পারছি না। যে চুরি আমি করি নাই, যে চান্দাবাজি ধান্দাবাজি কমিশনবাজি আমি করি নাই—আমি কেবল ওদের ক্যাশিয়ারি করেছি, সেই ঈমানদার আমাকে ফাঁসিয়ে ওরা এখন দুষ্টু হাসি হাসবার তালে আছে। আমাকে ফাঁসিয়ে নিজেরা ধোয়া তুলসিপাতা থাকতে চায়। আমার অনেক শিক্ষা হয়েছে। আমি মন্ত্রী হতে চাই নাই।

আমি জানি, এইসব চোর-চোট্টার সরকারের মন্ত্রী হওয়া মানে ইজ্জত মানসম্মান সব খোয়ানো। ব্যবসা নিয়ে ছিলাম ভালো। ছিলাম দাতা। ওদের চাঁদা দিয়ে পেট ভরিয়ে রেখেছি। কিন্তুু ওই দৌড়াতে গিয়াই আমার এই হুজ্জতি। মজা করতে গিয়া এমন ফাঁসা আমি ফাঁসবো ভাবি নাই। সেই দৌড়ে চোর চোট্টা রাজনীতিবিদরাও ছিল। অনেকে বলে—বিশেষ করে বরিশাল না পটুয়াখালীর এক বেয়াদব ফটকা চান্দাবাজ আমাকে নিয়া টিভিতে খুব তামাশা করে শুনেছি। লুটেরার বংশের যুবরাজদের সঙ্গে তার এখন ওঠাবসা, তাই সে খুব ফাল পাড়তেছে। ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। আজ পাছায় ঠাণ্ডা ঠান্ডা হাওয়া পাইতেছে, তাই খুব চোটপাট। আরে বাপ—ওইসব দেইখা দেইখা আমি এই পর্যন্ত আসছি। বেশি ফাল দিও না। বিপদ দেখলে তোমার কাস্টমার যুবরাজরা দেশ ছেড়ে পালাবে। তুমি কোন দেশে গিয়া মুখ প্লাস্টিক সার্জারি করাবে, এখনই ঠিক করে রাখ। তোমার পতনের বেশি বাকি নাই। ভাবতেছ তোমার মামুরা তোমারে দুর্দিনে বাঁচাবে। হে হে…বোকার স্বর্গে বাস করছ। বিপদের দিনে মামু চাচা কোনো কাজে লাগে না। আজ আমার দশা দেখতেছ না! বিশ্বব্যাংকের প্যাদানি খাইতেছি। লন্ডন আমেরিকা কানাডার কোনো শালা-সমুন্দি কাজে আসছে না।

দৌড় দিয়া মন্ত্রী হয়েছি…তোমার এই গল্প ঠিক না। তুমি নিশ্চয়ই কোনো গাঁজাখোর ফেনসিডিলখোর যুবরাজের কাছে এই গল্প শুনেছ। আসল গল্প আমার কাছে শোন। দৌড়াতে আমাদের ঠিকই নেত্রী বলেছিলেন। প্রাচ্য দেশের শীতকালের মনোরম আবহাওয়া। আমার দৌড়াবার কথা ছিল না। আমি তো দৌড় দিবার জন্য ওই দেশে যাই নাই। গিয়েছিলাম ব্যবসার কাজে। তো ভাবলাম নেত্রী যখন বলছেন, একটু শরীরটাকে গরম করি। আস্তে আস্তে হাঁটার ভঙ্গিতেই দৌড়াতে ছিলাম। সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিল। তারা প্রাণপণে দৌড়াচ্ছিল। কারণ নেত্রীর যা স্বভাব—বড় বড় কথা বলা। তিনি বলেছিলেন—এই দৌড়ে ফার্স্ট হলে তার জন্য পুরস্কার আছে। কী পুরস্কার, আমি ঠিক শুনি নাই। শুনলে আমি কি দৌড়ে অংশ নিই!

যাই হোক, কচ্ছপের মতো দৌড়েও দেখি—দৌড় যখন শেষ—সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি ফার্স্ট। এর কারণ হলো, দৌড়ের অন্যসব নেতা চান্দার টাকা খেয়ে খেয়ে পেটে এমন তেল চর্বি জমিয়েছে— ওদের শরীরে আর বিন্দুমাত্র প্রাণশক্তি নাই। আছে ঘুষের তেল। বখরার ঘি; কমিশনবাজির থলথলে চর্বি। ওরা হারবে না কে হারবে! নেত্রীও অবাক। বললেন, আরে ভাই আপনি ফার্স্ট হইলেন কেমনে! জবাবে কী বলব? আমি বোকার মতো সহজ সরল হাসি। নেত্রী তখন বললেন, কথা যখন দিয়েছি—কথা রাখব। আমি সরকারে গেলে আপনি পুরস্কার পাবেন। আপনি যা চাইবেন তা-ই দেব।
আমি তখন ঘূণাক্ষরেও টের পাই নাই কী ফাঁসের দড়ি আমার গলায় পড়তে চলেছে।

কিছুই আমি জানতাম না তখন। দৌড়ে হারুরা আমাকে কনগ্রাচুলেশন জানালেন। আমি বোকার মতো ভাবলাম, নেত্রী যদি সরকারে যান তবে তার কাছে পদ্মা সেতুর বালু সিমেন্ট ইট সুরকির কনট্রাক্ট চাইব। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলাম। সেই মত সরকার গঠনের পর নেত্রীকে সেকথা স্মরণ করিয়েও দিয়েছি। বলেছি—ম্যাডাম আমার পুরস্কার! নেত্রী বললেন, পুরস্কার আছে। যথাসময়ে জানতে পারবেন।

আমি মনে মনে শয়নে স্বপনে যখন নিশ্চিত—সেতুর সব কনট্রাক্ট আমি পেয়েছি। কয়েকটা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বসিয়ে হিসাবপাতিও করে ফেলেছি কত কোটি টাকা নেট লাভ থাকছে।
ঠিক তখনই আমার মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। শুনলাম আমাকে সেতুর মালসামালের কাজ দেয়া হয় নাই। দেয়া হয়েছে দেশি-বিদেশি চাঁদা আদায় কমিশন আদায় বখরা আর কনসালট্যান্সির ক্যাশিয়ারগিরির কাজ। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভাবলাম এই বেঈমানকির কাজ আমি করব না। কিন্তু আমার ব্যবসায়িক অ্যাডভাইজাররা বললেন, তা ঠিক হবে না। তবে যে ঠিকাদারির কাজও হাতছাড়া হবে! আমার আমও যাবে, ছালাও যাবে। কী আর করা, অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে গিয়েই আজ আমার এই দশা। আমি আজ কসম খেয়ে বলছি—আমি নির্দোষ। আমি বলির পাঁঠা। আমি কোনো চুরি করি নাই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ইন্টিগ্রিটি, বিনয়—এই বিশ্বাস ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমি সারা জীবন কাজ করেছি। ভবিষ্যতে যতদিন বেঁচে আছি, এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। এটাই আমার অঙ্গীকার, এটাই আমার অহঙ্কার। আপনারা জানেন, 'ন্যায়বিচারের রূপ এক, আর অন্যায় বিচারের রূপ বহুরূপ। এ কারণে ন্যায়বিচারের অপেক্ষা অন্যায় বিচার করা খুব সহজ।

ভাইরে… এই মহাজনী কথা আমার না। এইটা শেকসপিয়র না সক্রেটিস বলেছে, আজ ঠিক মনে করতে পারছি না। আজ সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে অন্যদের বাঁচিয়ে দিলে সেটা ন্যায়বিচার হবে না, সেটা হবে অন্যায়। যারা অন্যায় করেছে, যারা আমাকে শিখণ্ডী বানিয়ে সব টাকা ডলার পাউন্ড লুটে নিয়েছে, তাদের রয়েছে বহুরূপ। ওরা বহুরূপী। ওদের বাঁচিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়া সহজ। কিন্তু সেটা অন্যায়। আজ তারই আয়োজন চলছে; কিন্তু সেটা ন্যায়বিচার নয়। তাই তো শেকসপিয়র বলেছেন—ন্যায়বিচার করা কঠিন। আমি সবই বুঝতে পারছি; কিন্তু কিছু করার নেই। কেননা যে বিষ মন্থন করে আমি সব সামলে ব্যবসাদারের স্বার্থ হাসিলের প্লান করেছিলাম, তা আমাকে নীলকণ্ঠ করে তুলেছে।

এই প্রহসনের রঙ্গমঞ্চে আমাকে বলি দিয়ে আরেক লুটপাটের মাস্টারপ্লান হচ্ছে; আবারও লুটপাটের মচ্ছব হবে। সেই মচ্ছবের কে বলির পাঁঠা হবে—মালদাদা না অন্য কেউ, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে শেষ কথাটা আমি আজই বলে রাখতে চাই—আমাকে ফাঁসানোর প্লান বাদ দেন। আমাকে ফাঁসিয়ে লন্ডন আমেরিকা কানাডা বসবাসকারীরা যে রেহাই পাবেন, তার কোনো গ্যারান্টি নাই। আমি ফাঁসলে সবাইকে নিয়াই ফাঁসব—কাউকে ক্লিন-ওমেন থাকতে দিব না—বইলা রাখলাম।