ছাত্রলীগ: বাংলাদেশের ‘তালিবান’

আমীন কাদীর
Published : 21 March 2012, 08:53 PM
Updated : 21 March 2012, 08:53 PM

আফগানিস্তানের বহুল আলোচিত ধর্মজঙ্গি 'তালিবান'দের কথা কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি। তরুণ যুবকরা জঙ্গি ও ক্ষমতারক্ষক হলে কত ভয়ংকর হতে পারে- আফগান মুলুকে তালিবান শাসন তার নানা দৃষ্টান্ত রেখে গেছে। পাড়ায় মহল্লায় ঘরে বাইরে এরা নজরদারি করেছে। কে দাড়ি রেখেছে- কে রাখে নাই- কে নামাজ পড়েছে, কে পড়ে নাই- কোন নারীর পোশাক ধর্মসম্মত হয়নি- সেসবের বিচার আচার করেছে তারা। শাস্তি বিধান করেছে তালিবানরা। তারাই ছিল সর্বেসর্বা।

'তালিবান' শব্দের অর্থ ছাত্র। তালিব : ছাত্র, বিদ্যার্থী, শিক্ষার্থী, অন্বেষক। এখান থেকে শব্দটির উত্পত্তি। সোজা কথায় 'তালিবান' সংগঠনের সঙ্গে তুলনীয় বাংলাদেশের নানা ছাত্র সংগঠন, যেমন : ছাত্রলীগ। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যথা অর্থেই তারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্যারালাল তালিবানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। টেন্ডারবাজি, নির্মাণ ঠিকাদারি, ছাত্র ভর্তি বাণিজ্য-শিক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। বন্দুকবাজি, পিস্তলবাজি সন্ত্রাস খুনোখুনিতে তারা বেপরোয়া। রামদা লগি বৈঠা কিরিচ দা বটি হকিস্টিক তাদের সাংগঠনিক প্রকাশ্য অস্ত্র। ধর্ষণ, নারী লাঞ্ছনা কোপাকুপি তাদের নানা কীর্তির অলঙ্কার। জঙ্গি বলতে যা বোঝায়- তা শাব্দিক অর্থেই প্রমাণ করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী ও সংগঠনটির নেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সঙ্গে মৌখিকভাবে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে এই বাংলাদেশী তালিবানদের স্বাধীন অস্তিত্ব- নানা অপকর্মের সার্বভৌম অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রকারান্তরে।

১২ মার্চ মহাসমাবেশের দিন ও তার আগের দিন আমরা দেখেছি এই তালিবান গোষ্ঠীর উত্কট রূপ। এই সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ একাকার হয়ে গিয়েছিল। ঢাকায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে তারা বসিয়েছিল তালিবান ক্যাম্প। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী সন্দেহে হাজার হাজার পথচারীকে হেনস্তা করেছে আফগান জঙ্গি স্টাইলে।

ছাত্রলীগ নামধারী এই মুর্খ জঙ্গিরা অনেক জায়গায় নিরীহ ঢাকাবাসীর কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছে। জানতে চেয়েছে আইডি আছে কিনা!

কিসের আইডি! ১৬ কোটি মানুষের দেশে বসবাসের জন্য আইডি কার্ড চালু হলো কবে। পুলিশের তল্লাশি কাজের একটা পদ্ধতি আছে- কিন্তু এদের কাণ্ড-কারখানা ছিল মাস্তানি-গুণ্ডামিপূর্ণ। এদের বেপরোয়া শরীর তল্লাশি, পকেটে হাত- ইত্যাদিতে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন- তাদেরকে গালিগালাজ চড় থাপ্পড় দিয়েছে এরা। এমনও বলতে শোনা গেছে- শালা, … পুত, রামদা দিয়া ফিনিশ কইরা দিমু। ডাইনে বায়ে না তাকাইয়া সোজা ঘরে যাইয়া ঢোক।

বেশি বাদ-প্রতিবাদ করার কোন উপায় ছিল না সাধারণ মানুষের। দু'হাত লম্বা রামদা, ছুরি কাঁচি হকিস্টিক নিয়ে তারা প্রকাশ্যে রাস্তায় অবস্থান করছিল। এলিফ্যান্ট রোডে এক তালিবান একাই তিনটি রামদা বহন করে কসরত দেখাচ্ছিল। অন্যরা রামদা উচিয়ে ধাওয়া দিচ্ছিল কৌতুহলী মানুষকে। কুৎসিত গালিও দিয়েছে।

এদের ভয় না পেয়ে কোন উপায় আছে! পুলিশও ছিল তাদের সঙ্গে। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। আর চাকুরির দায়ে দলবাজ উপরওয়ালার নির্দেশে পাহারা দিয়েছে এদের কদর্য তত্পরতাকে।
কাদের আশকারায়-উস্কানিতে ছাত্রলীগের এই জঙ্গি তত্পরতা! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ নৈরাজ্যের লাইসেন্স দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ-যুবলীগকে। তারা জঙ্গি তত্পরতার নানা আতঙ্ক ছড়িয়ে আসল 'তালিবান' জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছেন। কৌতুহলী সাধারণ মানুষ বাটি চালান দিয়েও বিরোধী দলীয় মহাসমাবেশে কোন জঙ্গি আলামতের হদিস পায়নি। সরকারের শত বাধার পাহাড়কে ডিঙ্গিয়ে ঢাকায় নেমেছিল লাখ লাখ মানুষের ঢল। শান্তিপূর্ণভাবে তারা এসেছে। শান্তিপূর্ণভাবে তারা ফিরে গেছে। আর ছাত্রলীগ জঙ্গিরা ঢাকা নগরী জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাজ্জব রাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ। দিন যত যাচ্ছে ততই বেসামাল হয়ে পড়ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী খোঁজার নামে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা-হয়রানি অপমান-অপদস্থ করে তারা দেশবাসীকে বিরোধী দল সমর্থক বানিয়ে ফেলছে। এটা বোঝার মতো নেতা কি দলটিতে কেউ নেই! আওয়ামী লীগে বিচক্ষণ, ধীমান নেতার কি এতোই আকাল?