মন্ত্রী-এমপিদের জন্য একগুচ্ছ প্রশংসা

আমীন কাদীর
Published : 9 April 2012, 01:20 PM
Updated : 9 April 2012, 01:20 PM

মহাজোট সরকারের বিদ্যুত্-চমকানো ডিজিটাল জমানা নিয়ে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে টুকটাক যা একটু লিখছি, তা নিয়ে বেশ গোস্বা হচ্ছেন অনেকেই। অজ্ঞাত কিছু ফোনও পাচ্ছি। কিছু ফোনের ভাষা কহতব্য নয়। সংসদে মন্ত্রী-এমপিদের খিস্তির চেয়ে কম নয়। তার সঙ্গে থাকছে হুমকি-ধমকি। কর্কশ কাকস্য সে ভাষা না হয় বাদই রাখি, বরং এই ভেবে যিকঞ্চিত স্বস্তি লাভ করি—লেখাটা তাহলে কেউ কেউ কষ্ট করে পড়ছেন। আবার কেউ কেউ বজ্রকণ্ঠে বলছেন, মহাজোট সরকার এই যে একটার পর একটা ভালো কাজ করছে, সেসব নিয়ে লিখুন। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন না করে ক্ষমতা থেকে তারা যাচ্ছে না। এরা প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিচ্ছে আমাকে—আখেরে পস্তাবেন, বড় পস্তাবেন। খোদ বিরোধী নেতাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছি তুড়ি মেরে। আপনার মতো কীটপতঙ্গের জান কবজ করতে এরোসলও লাগবে না।

আমি এমনিতেই অতি ভীতু প্রকৃতির মানুষ। তদুপরি আমার এক রাজনীতিক বড় ভাই মাঝেমধ্যেই সাবধান করেন—কেউ যদি ভয় দেখায়, অবশ্যই ভয় পেয়ো। নইলে ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা আরও ক্ষেপে যায়। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভয় পেয়েছি। মহাজোট সরকার প্রাইভেট লিমিটেড কলামে এদ্দিন যা লিখেছি তাতে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিক দুঃখিত। আমি সরল চিত্তে মনের ভুলে কী না কী লিখেছি, সরি ব্রাদার। সরি। আজ তাই সভয়ে সরকারের ভালো দিকগুলো লেখার ইচ্ছেটা কিছুতেই দমন করতে পারছি না।

মহাজোট সরকারের ভালো ও ঐতিহাসিক কাজগুলোর কথা বলতে শুরু করলে তা শেষ হওয়ার নয়। দিস্তার পর দিস্তা লেখা যাবে।
তুর্কি-তরুণদের চাকরির বাজারকে তারা কী চমত্কার ডিজিটাল করেছে, দেখুন। শুনেছি, এখনকার ছেলেপেলেরা বিসিএস-সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ষোলোআনা। কেউ আর সরকারি চাকরির জন্য হাপিত্যেশ করে না। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-মাল্টিন্যাশনাল করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকরিও এখন জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। মাল্টিন্যাশনাল চাকরি করে আয় হয় কয় টাকা? তারা কীই বা এমন দিতে পারে তাদের সুন্দরী বউকে! সুন্দরী পাত্রীরা সবাই এখন পিও, এপিএস পাত্র খুঁজছে। স্মার্ট মেয়ের বাবারা এখন আগেই জানতে চান, পাত্র বিয়েতে হেলিকপ্টারে উড়ে এসে বউ তুলে নিতে পারবে কিনা! ঘোড়ার গাড়ি, মার্সিডিজ বেন্জ—এসবে চড়ে বিয়ে করতে এলে এখন আর সমাজে স্ট্যাটাসই থাকছে না। এখন ডিজিটাল বরের বাহন হলো উড়োজাহাজ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যে আকাশছোঁয়া উন্নতি, এ জন্য মাননীয় সংসদ উপনেতাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কুণ্ঠাহীন চিত্তে প্রশংসা করতে হয়।

চাকরিবাজারে কর্মসংস্থানে তিনি এক মহত্ নজির স্থাপন করেছেন। শুধু তিনি কেন, মন্ত্রী-এমপি সবাই এই মহত্ কৃতিত্বের অংশীদার। তারা তাদের দফতরে এমন কিছু অনন্য পদ সৃষ্টি করেছেন, যেটি বাগাতে সবাই হাপিত্যেশ করছে।

সংসদ উপনেতার দৃষ্টান্তটিই বলা যাক। উনার পিএইচডি ডিগ্রিধারী পিএস জানাচ্ছেন, দুই বছরের বেশি সময় আগে অতি অল্প সময়ের জন্য এক যুবক সংসদ উপনেতার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পার্সোনাল অফিসার) পদে চাকরি করতেন, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) কিন্তু নয়।

স্বল্পকালীন চাকরি শেষে যুবকটি ফোর্স রিটায়ারমেন্টে গেছেন। যুবকটি অবশ্য বীরকণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ফোর্স রিটায়ারমেন্ট নয়, তিনি ইস্তফা দিয়েছেন চাকরিতে।
ইস্তফা তো তিনি দেবেনই, কেননা ওই কিছু সময়ের শর্ট কোর্স চাকরিতে তিনি এমন বিশাল অঙ্কের বেতনভাতা-উপভাতা হাসিল করেছেন, তারপর চাকরি করে কোন শালা? কৃষিনির্ভর অতি সাধারণ বিত্তের পরিবারের তিনি সন্তান। তিন-চার বছর আগে ফরিদপুরে একটি কলেজে যখন পড়তেন, থাকতেন মেসে। ক্যারিয়ারিস্ট স্বপ্নবান যুবক। কলেজে পড়ার পাশাপাশি একটি জবরদস্ত রাজনৈতিক ডিগ্রি বাগাতে তিনি ছাত্রলীগের শরণাপন্ন হন। অচিরেই জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নামক মূল্যবান ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তাকে আর পায় কে! ওই 'ছাত্রলীগ রত্ন' সার্টিফিকেট দেখিয়ে তিনি পিও (পার্সোনাল অফিসার) নামক দুর্মূল্য চাকরি অর্জন করেন।

মহার্ঘ চাকরি। কয়েক মাস এই চাকরিটা করলেই কেল্লাফতে। অঢেল সম্পদ এসে পায়ের কাছে গড়াগড়ি খায়। চাকুরি তো নয়, আলাউদ্দিনের চেরাগ। এটা সত্যি, খুব বেশি দিন তিনি কাজটি করেননি। ত্যাগের মহত্ত্ব দেখিয়ে রাজনৈতিক সহকর্মী অন্য বেকারদের জন্য সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে এই কয়েক মাসে তার সম্পদশালী হয়ে ওঠার গল্প আলীবাবা চল্লিশ চোরকেও হার মানিয়েছে। রাতারাতি তিনি বনে গেছেন একালের রাজকুমার।

রাজপুত্র সম্প্রতি তার জাত চিনিয়েছেন জাতিকে। খ্যাতির শিখরে তুলে ধরেছেন মহাজোট সরকারের মর্যাদা। পরিণত হয়েছেন ছাত্রলীগের আইডলে। সম্প্রতি তিনি এক রাজকন্যাকে ঘরে তুলেছেন। থুক্কু! উড়িয়ে এনেছেন বাড়িতে অনন্ত অম্বরের—বাতাসের মধ্য দিয়ে। হেলিকপ্টারে চড়িয়ে

বিয়েতে ঢাকা থেকে উড়িয়ে এনেছেন দুটি হেলিকপ্টার। ১৫ হাজার লোকের ভূরিভোজ। বাদশাহি সব খানাপিনা। বউয়ের শরীরটি পরতে পরতে সাজিয়েছেন স্বর্ণালঙ্কারে। ডায়মন্ডসহ মূল্যবান জহরত। কেবল তাই নয়, আরও ছিল রঙিন আয়োজন। ঢাকা থেকে সাদা মাইক্রোবাসে করে গ্রামে গেছে বিলাত আমেরিকার পানীয়। কার্টন কার্টন বেনসন অ্যান্ড হেজেস। বর-কনের নিরাপত্তায় কোনো পুলিশ নয়, ছিল প্রাইভেট বাহিনী, বেসরকারি গানম্যান। শাহজাদা আকাশ থেকে মাটিতে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নিরাপত্তা কর্মীরা তার দু'পাশে বন্দুক উঁচিয়ে পাহারা দেন। দাঁড়িয়ে যান সুঠাম দেহের গানম্যান। কোথা থেকে কীভাবে ওই গানম্যান এলো সেটা নিয়েও আছে নানা কৌতূহল। বিয়েতে শোবিজের স্টারদের কমতি ছিল না।

কেবল কোটি দেড়েক টাকা খরচে রাজকীয় বিয়েই নয়, রাজপুত্রের প্রাডো গাড়ি একাধিক। ঢাকায় বাড়ি। এলাকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে, এখন আর আগের মানুষটি নেই—ওবাএখন দু'হাতে টাকা ওড়ান, দান-খয়রাত করেন। দামি গাড়িতে চড়ে হাত নাড়তে নাড়তে ধুলো উড়িয়ে টাকা ছড়িয়ে চলে যান।

গত তিন বছরে রাজধানী ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও জায়গার মালিক হয়েছেন তিনি। ঢাকার রামপুরা এলাকার টিভি সেন্টারের পাশে এক দাগে ৬০ কাঠা জমির মালিক, যে জমির বর্তমান বাজারমূল্য কম করে হলেও ৫০ কোটি টাকা।

ছাত্রলীগের এই সোনার ছেলের ঈর্ষণীয় সাফল্য অনুপ্রাণিত করছে সবাইকে। কেউ কেউ ব্যাপারটিকে বাঁকা চোখেও দেখতে চাইছেন। যাদের চোখ ট্যারা, নজর নিচু—তারা কখনই ভালোকে ভালো বলতে পারেন না। তাদের চোখে সবকিছুই মন্দ।

মহাজোট সরকার যে টনকে টন বিদ্যুত্ উত্পাদন করছে, তাও তারা দেখতে পান না। ফরিদপুরের এই রাজপুত্রকে নিয়েও তারা উল্টোপাল্টা বলছেন। কেউ কেউ বলছেন, সে আর তার ভাই মিলে ইয়াবার ব্যবসা করেছে। সংসদ উপনেতার পিও বলে কথা। পুলিশের নাকের ডগায় জমিয়ে ব্যবসা করেছে দিব্যি; কাউকে কোনো তোয়াক্কা-তোয়াজ করেনি। কাউকে কোন হপ্তাটপ্তা দিতে হয়নি। রাতারাতি টাকা-পয়সায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।

কিন্তু আমার যেটা মনে হচ্ছে, এসব নিছকই অপপ্রচার। মিথ্যে। ডাহা মিথ্যে। ছাত্রলীগের মতো একটি দেশপ্রেমিক ছাত্র সংগঠনের নেতা ইয়াবা ব্যাবসায় করছে, এটা বিশ্বাসই করা ঠিক নয়। এটা যারা বিশ্বাস করবে তারা রাজাকার। আর এটা যারা বলবে, তারা আলবদর—যুদ্ধাপরাধী। এটা আমার অকাট্য ফতোয়া। সোজা-সাপটা রায়। যদি কারও আপত্তি থাকে, তিনি জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা করে সত্যাসত্য যাচাই করে নিতে পারেন। একশ' পার্সেন্ট চ্যালেঞ্জ। মহাজোট জমানায় ছাত্রলীগ নিয়ে কোনো রকম নেতিবাচক কথা ভাবাও ঠিক নয়। অলওয়েজ থিংক পজিটিভ।

তাছাড়া তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, ইয়াবা ব্যবসা সে করত, তাহলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন কি তাকে ছেড়ে দিত? নরসিংদিতে চল্লিশ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালাচ্ছিল সাত-আট ডাকাত। সাহারা খাতুনের স্বাধীনতা-উত্তর সেরা আইনশৃঙ্খলা জমানায় আমরা এমন অসাধারণ নিরাপত্তায় বাস করছি—এখন চল্লিশ হাজার টাকা ছিনতাই করেও পার পাওয়া যায় না। মানুষের ধনসম্পদ-জানমান খুবই সুরক্ষিত। র্যাব দুলদুল ঘোড়ার ক্ষিপ্রতায় ঠিকই পাকড়াও করল ডাকাতদের। ক্রসফায়ারের আর কোনো বানোয়াট গল্প নয়। সবার সামনে তারা গুলি করে মারল ছয় ডাকাতকে। আয়রন লেডি সাহারা খাতুনের আমলে চুরি – ডাকাতির শাস্তি একটাই। সবার সামনে ওপেন ফায়ার। কোনো মাফ নেই। নো আচার-বিচার। সারা দুনিয়ার বিষোদ্গার সত্ত্বেও সৌদি আরবে চুরিচামারি-হত্যার জন্য হাত কাটা-শিরশ্ছেদের শক্ত-পোক্ত কানুন। তেমনি আমাদের মশহুর ক্রসফায়ারও চলবে। ফরিদপুরের ওই রাজপুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ—ইয়াবার ব্যবসা করে নাকি কয়েকশ' কোটি টাকা কামিয়েছে। নাহ! এ মিথ্যা গ্রাহ্য করা যায় না। মাত্র চল্লিশ হাজার টাকার জন্য ৬ জনের জান কবুল করে নেয় যে র্যাব— ইয়াবার অভিযোগ সত্য হলে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা নয়। র্যাব এদ্দিনে তাকে সাইজ করে ফেলত।

তাছাড়া আরেকটি প্রশ্ন—যদি সে ইয়াবার ব্যবসা করেও বা, তা দোষের কী? বিজনেস ইজ বিজনেস। ইয়াবাও যা, গরুর দুধের ব্যবসাও তা। গুলশানে বনানীতে বারিধারায় কত বড়লোকের ছেলে খাচ্ছে-দাচ্ছে ইয়াবা। পিডব্লিউডির সরকারি বাড়িতে ইয়াবার গোডাউন মিলল। তখন তো কোনো দোষ নয়। বিসিএস অফিসার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-পুলিশ কর্মকর্তারা পর্যন্ত ইয়াবা খাচ্ছে। ভার্সিটি-মেডিকেলে রমরমা ব্যবসা হচ্ছে। তা দোষের হয় না। ছাত্রলীগের এক সোনার ছেলে করল— অমনি দোষ। এ সবই একচক্ষু মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা। বিএনপি আর আইএসআইয়ের টাকা খেয়ে তারা এসব লিখছে। আমরা সব জানি। মাত্র
৫/৫০ কোটি টাকায় আইএসআই একটি দলকে কিনতে পারে : ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে লেখাতে আর ক' পয়সাই বা দিতে হয়! নেত্রীর কাছে সবকিছুর লিস্টি আছে।

উপনেতার ওই সাবেক সাগরেদ না হয় হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে গেছে। এ নিয়ে এত হৈচৈয়ের কী আছে? এ দেশে কি কেউ হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করে না! সিলেটে তো এটা ডাল-ভাত। বউকে সে গভীরভাবে ভালোবাসে বলেই নিজের সর্বস্ব উজাড় করে হীরে-জহরত দিয়েছে। এটা তো ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত হওয়া উচিত। কোন কেতাবে লেখা আছে—ছাত্রলীগ করলে, উপনেতার পিও হলে সে বউকে উজাড় করে ভালোবাসতে পারবে না? ছাত্রলীগ কোনো একটা ভালো কাজ করলেই সেটাকে মন্দ প্রমাণ করতে উঠে-পড়ে নামতে হবে! এ কেমন কথা। না হয় এই করিত্কর্মা তরুণটি রামপুরায় ৬০ কাঠা জমির মালিক হয়েছে। এতেও এমন কী মন্দ! ঢাকা শহরে আর কারও কি ২-৩ বিঘা জমির ওপর বাড়ি নেই। তার টাকা আছে। সে কষ্ট করে কামাই করেছে। সেই টাকায় বাড়ি করেছে। জমি কিনেছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কেউ কিছু করলেই কিছু লোকের চোখ টাটায়। এটা কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না। এটা যদি খারাপ হয়, তবে জিয়ার আমলে যে বারিধারায় মার্কিন এমবাসিকে বিঘার পর বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে দেয়া হলো, সেটাও খারাপ। রামপুরা থেকে বারিধারা কী এমন দূর! কেউ যদি ওই ৬০ কাঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলে—তবে বারিধারায় জিয়ার দেয়া বরাদ্দও বাতিল করতে হবে, বলে দিলাম।
ওপরে যে প্রসঙ্গটি টানলুম, অনেকেই বিলক্ষণ বলবেন, ধান ভানতে শীবের গীত হয়ে গেল। হলো তো বটেই। গল্পের গরু গাছে চড়েছে বললেও বাড়াবাড়ি হয় না। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি, কেউ কেউ সমর্থনও করবেন আমাকে। তারা বলবেন, মহাজোট জমানায় যা ইচ্ছা তাই বললে, লিখলে কোনো সমস্যা দেখি না। প্রধানমন্ত্রী তার ব্লাংক চেক দিয়েছেন সবাইকে এবং নিজেও কৌতুক-রস রঙ্গ-রসিকতার সঙ্গে ব্লাংক চেক প্রতিদিন ব্যবহার করে চলেছেন। হানাদার পাকিস্তানের কাছে এশিয়া কাপে মাত্র ২ রানে হেরে গেল বাংলাদেশের বাঘছানারা। সবাই কষ্ট পেয়েছেন এই তীরে এসে তরী ডোবায়। প্রধানমন্ত্রী হারের কারণ তদন্ত করলেন। না, না শাকিব-মুশফিকরা কোনো গাফিলতি করেনি। ওরা এবার আর বালকসুলভ চপলতা দেখায়নি। তামীমও মাস্টার ব্যাটসম্যানের মতো খেলেছে। তবে হারল কেন! এত সাগর-রুনির মতো জটিল কেস নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জয়-পরাজয় নিয়ে তিনি যেমন ছাত্রলীগের ছেলেদের সারাদেশে তদন্তে পাঠিয়ে দেন, এবার আর ছাত্রলীগকে কষ্ট দিলেন না। তিনি এবার পাঠিয়েছিলেন তার বাড়ির কাজের মেয়েকে। সে বেচারি গ্রামে গিয়েছিল। সেখান থেকে জেনে এসেছে হারের রহস্য। বাংলাদেশ হেরেছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী খেলা দেখতে গিয়েছিলেন মাঠে। তিনি যাবেনই। তিনি ক্রীড়াপ্রেমী। তার ভাই শেখ কামাল আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা। অন্য দু'ভাই শেখ রাসেল ও শেখ জামালের নামে খেলার ক্লাব রয়েছে। খেলাধুলায় সেসব ক্লাব চ্যাম্পিয়ন। সুতরাং তার মাঠে যাওয়ার ষোলো আনা হক রয়েছে। কিন্তু খালেদা গেলেন কেন? জিয়া পরিবারের কারও নামে ক্লাব আছে বলে তো শুনিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘরের এফবিআই কাজের মেয়েটি তাই তৃণমূল তদন্ত করে জানিয়েছেন, খালেদা মাঠে গিয়েছিলেন বলেই হেরেছে টাইগাররা। মোক্ষম আবিষ্কার! এমন বোম্বব্লাস্টিং খবর জাতিকে না জানালেই নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রয়ে-সয়েই বললেন, আমরা তো জিতেই গিয়েছিলাম। মাত্র ২টি রান। পাকিস্তানপ্রেমী যিনি… আইএসআইয়ের যিনি টাকা খান, তিনি মাঠে না গেলেই জিততাম।

সত্যি! এমন কথার জবাব হয় না। লা-জওয়াব। এমন বিষাক্ত স্পিন; খালেদা জিয়ার ঘায়েল না হয়ে কী উপায়! একটিমাত্র বল ছুড়লেন হাসিনা; খালেদা ক্লিন বোল্ড।
বুঝতে আমার বাকি নেই—যারা খালেদার একনিষ্ঠ অনুরাগী সমর্থক, যারা পাকিস্তান সমর্থক, তারা বলবেন, গল্পের গরু গাছে চড়ানোর এর চেয়ে জঘন্য নজির আর হয় না। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশেরই সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন বিষ কটূক্তি করতে পারেন না। রাখুন, আপনাদের এইসব কেতাবি কথা। ওইসব উচ্চমার্গের কথা অনেক আমাদের শোনা আছে। রাত ১২টায় টিভি খুললেই বুদ্ধিধরদের কেতাবি কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। রাজনীতি, ক্ষমতার লড়াই, যুদ্ধ আর প্রেমে সব জায়েজ। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো—এই কথামালার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি কেউ দেখছে না। যাদের চোখ ট্যারা, তারা কেমন করে দেখবে! রাষ্ট্রের ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এখানে কাজের মেয়ে তথা অবহেলিত গৃহকর্মীদের অত্যুচ্চ সম্মানে সমাসীন করেছেন। এটি বিরল ঐতিহাসিক ঘটনা। খোদ বঙ্গবন্ধুও এমন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেননি। তার মেয়ে হিসেবে মানুষের মর্যাদাকে তিনি আরও ওপরে তুলে ধরলেন। খালেদা কি কখনও এমন অনন্য নজির দেখাতে পেরেছেন? দিন, পারলে জবাব দিন। প্রধানমন্ত্রী হলেই একটা মানুষ কি এমন নবাবজাদা, শাহজাদি হয়ে গেল—অমনি তাকে খুব ভাব ধরে থাকতে হবে। কাজের মেয়েদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া যাবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজের মানুষ। তিনি যেমন বলেন, তেমনি করেও দেখান। অযথা ভাব ধরে থাকেন না।

আমাদের দুরন্ত সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব ৩ এপ্রিল ঢাকায় যা বললেন, মাজেজা ঠিক বুঝলাম না। তার প্রশংসা করব কিনা বুঝে উঠতে পারছি না। তিনি জ্ঞানী মানুষ। তার জ্ঞানের সীমা নেই। হাজারো কোটেশন তার মুখস্থ। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিতে এক আলোচনায় তিনি এদিন বলেছেন—আমাদের পানিতে বিষ। বাতাসে বিষ। পলিটিশিয়ানদের মুখেও বিষ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই আমাদের মুখের বিষ তীব্র হচ্ছে।

য়দুলের ভাব আর গেল না। তিনি সব সময় এক ঢিলে আনেক পাখি মারতে চান। অমর কথাসাহিত্যিক শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও তিনি টেনে এনেছেন। তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওবায়দুল বলেন, 'শরত্বাবু এক জায়গায় বলেছিলেন, শরীরের শক্তি কমতে থাকলে মুখের বিষ বাড়ে। অবস্থা দেখে মনে হয়, আমাদের রাজনীতির শক্তি কমে আসছে।'

ওবায়দুলকে ধন্যবাদ দিতে গিয়েও দিতে পারছি না। তিনি ভুজুং ভাজি করে কাকে ইঙ্গিত করলেন। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার আড়াই বছরের ফাড়া পার হতেই লাগাতার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কটূক্তির ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। খালেদাকে কেয়ারটেকার সরকার কোলে তুলে ক্ষমতায় বসাবে না—বারবার করে কথাটা বলেছেন। তার মুখ আছে, তিনি বলতেই পারেন। তিনি একজন মুরুব্বি। বয়স তার কম হয়নি। দু'বারের প্রধানমন্ত্রী। আরও একবার হওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু তার কথার জবাবে বিএনপির পিচ্চি পিচ্চি নারী এমপিরা সেই কোলে তোলার কথা কেমন করে বলে! তাদের কি হায়া শরম নেই। তাছাড়া এ কথা কে না জানে—ময়মুরুব্বিরা যে কথা বলেন, সেসব কথা রসিকতারই নামান্তর। ওটা রসপ্রিয়তার অংশ। কিন্তু পিচ্চিরা সে কথা বললে সেটা কিন্তু অমার্জনীয় বেয়াদবি। এই অপরাধের ক্ষমা নেই।

ওবায়দুল কাদেরের কথা শুনতে ভালোই লেগেছিল। শেষাংশ শুনে আর ভালো লাগল না। না, না, শরীরের শক্তি কমতে থাকলে মুখের বিষ বাড়ে—এ কথা তিনি বলতে পারেন না। এটা বলে তিনি পরিষ্কার বিএনপির পিচ্চি এমপিদের পক্ষ নিয়েছেন। আরে, শরত্বাবু বলেছেন তো কী হয়েছে? তিনি আমাদের মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি!

সর্বকালের সেরা বাঙালির তালিকায় তার সিরিয়াল কত? তিনি তো মনে হয় জিয়াউর রহমানেরও নিচে। তাই এইসব উল্টোপাল্টা কথা লিখে গেছেন। ময়মুরুব্বিদের তিনি অসম্মান করেন কোন সাহসে? আর ওবায়দুল ভাইকেও বলি, শরত্বাবু না হয় লিখেছেন। আপনি অনেক জানেন, শোনেন, আপনি না হয় তার লেখা পড়েছেনও। তাই বলে শরত্ব্যাটা যা বলেছেন, তা যত্রতত্র পাত্রে-অপাত্রে বিলিয়ে বেড়াবেন—সে কেমন কথা।