ব্রাদার ঝানু গোয়েন্দা ও আইটি বিশেষজ্ঞ ডাকাত

আমিন কাফির
Published : 2 March 2012, 02:22 PM
Updated : 2 March 2012, 02:22 PM

মেহেরুন রুনি-সাগর সরওয়ার হত্যা নিয়ে 'তামাশা করছে পুলিশ!'—এটি একটি প্রিন্ট মিডিয়ার শিরোনাম। কিন্তু তামাশা পুলিশ করছে কোথায়—তারা তো সরকারের আজ্ঞাবহ আর্দালী মাত্র। তামাশায় মেতে উঠেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তার বেডরুম পাহারা সংক্রান্ত চটুল মন্তব্যের চেয়ে বড় তামাশা আর কী হতে পারে! তিনি তো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—বেডরুম পাহারা দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। ঘরে ঘরে বেডরুমে তিনি পুলিশ দিতে পারবেন না। কী ভয়ঙ্কর বেপরোয়া কথা। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন—বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বৈকি! অনেকে সহাস্যে বলছেন, শেখ হাসিনা অমন বলেন-ই। না, এমনটি বলে বিষয়টিকে লঘু-হাস্যরসাত্মক করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান একজন প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক অবশ্য কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনে তিনি চরম ব্যর্থ হতে পারেন। কিন্তু কর্তব্য পালনের বাধ্যবাধকতা নিয়ে পরিহাস করার অধিকার তিনি রাখেন না। এটা নিয়ে তামাশা মানে তার নেয়া শপথ নিয়ে তামাশা। এ নিয়ে তামাশা মানে প্রধানমন্ত্রীর পদকে নিয়ে তামাশা। তিনি স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পবিত্র শপথ নিয়ে ওই পদে বসেছেন। কোনো রাজার উত্তরাধিকার হিসেবে তাকে ধরে এনে জোর করে কেউ বসায়নি। এটা রাজা-গজাদের যুগ নয়। এটা গণতন্ত্র। এখানে নিজেকে মহারাজা-মহারাণী ভাবার সুযোগ নেই। এখানে আমলা যেমন পাবলিক সার্ভেন্ট, তিনিও তেমনি সবার চেয়ে দায়িত্বশীল পাবলিক সার্ভেন্ট। তিনি বেডরুম না রান্নাঘরে পাহারা বসাবেন, সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু জনগণের জানমালের সুরক্ষার দায়িত্ব তিনি এড়াতে পারেন না।

তাছাড়া এখন তার কাছে কেউ সাগর-রুনির বেডরুমের জন্য পাহারাদার চাচ্ছে না; সারা দেশের মানুষ চাচ্ছে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার বিচার। সেই বিচারের কী খবর! হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নামে পুলিশ তামাশায় নেমেছে কার নির্দেশে! কেন 'জজ মিয়া'দের সন্ধান করছে গোয়েন্দারা। ফেব্রুয়ারি ২০-২৮ তারিখ পর্যন্ত কতগুলো ছিঁচকে চোর ধরে প্রমাণ করার অপচেষ্টা চলল—বেডরুমের ওই ঘটনা নাকি নিছকই ডাকাতি! পুলিশ অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের সজাগ সতর্ক দৃষ্টির কারণে কল্প-কাহিনী ফাঁদার এজেন্ডা তারা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এই এজেন্ডার নেপথ্যে কে?

সাগর-রুনি হত্যার পরের দিনগুলোতে কারোরই মনে হয়নি এই হত্যায় সরকারের রাঘব বোয়ালরা জড়িত থাকতে পারে। এই হত্যাকাণ্ড ইস্যুটি যে এত দ্রুত সরকারের কাঁধে বোতলবন্দি দৈত্যের মতো চেপে বসবে, তাও তখন মনে হয়নি। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সবাইকে অবাক করে ওই বিস্ময়কর মন্তব্য করে যখন দায়-দায়িত্ব এড়াতে চাইলেন—রাতারাতি চিত্র পাল্টে যাচ্ছে।

এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে—হত্যার নেপথ্যে ভয়ঙ্কর কোনো রহস্য রয়েছে। কানাঘুষায় অনেক কথা শোনা যাচ্ছিল। চটুল কিছু গল্প মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। মেহেরুন রুনির নিষ্কলুষ ব্যক্তিগত জীবনেও কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা চলেছে। এখন বোঝা যাচ্ছে—এসবই ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। লাশকে কলঙ্কিত করে আসল রহস্যকে ধামাচাপা দেয়ার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। নিজের পাতা জালে সরকার নিজেই ফেঁসে যাচ্ছে। লাশ-লাঞ্ছনার ষড়যন্ত্রের পর এখন ডাকাতির গল্প ফাঁদার চেষ্টা চলছে। সরকারের এখন খারাপ দিন। এসব গালগপ্প ফেঁদে কোনো লাভ নেই। মানুষ তা বিশ্বাস করবে না। বিষয়টি গড়িয়েছে রাজনীতির মাঠেও। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ২৭ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটে বলেছেন, সাগর-রুনি সরকারের দুর্নীতির কথা জানতেন। তাদের কাছে সেই দুর্নীতির গোপনীয় তথ্য ছিল। যা প্রকাশ হলে বিদেশিরা জানতে পারত। আর এ জন্যই খুন করা হয়েছে তাদের। সত্যি বলতে কী খালেদা জিয়া নতুন কিছু বলেননি। তিনি লোক মুখে চালু কথা-কাহিনীই জনসভায় জনতার সামনে তুলে ধরেছেন। গত কিছুদিন ধরে হত্যার এই নেপথ্য রহস্য নিয়ে নানা কথা সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের হাতে এখন অনেক রকম মিডিয়া। সংবাদপত্র, টিভি তো আছেই। ইন্টারনেট আছে, ফেসবুক আছে। আর তার চেয়েও শক্তিশালী মিডিয়া হলো সাধারণ মানুষের মুখ ও কান। খালেদা যা বলেছেন; তিনি বলার অনেক আগেই তা ইতোমধ্যে মুখে মুখে সারাদেশবাসী জেনে গেছেন। এসব কথার সত্য-মিথ্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ ভাবছে না। তারা সরল সমীকরণে বিশ্বাসী। যখন দেখে কোনো হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার লুকোচুরি করে; টালবাহানা করে; পুলিশ কর্তা ও পুলিশ মন্ত্রী আগডুম বাগডুম বলে; তখন সহজে ধরে নেয়—কাজটা নিশ্চয়ই সরকারের সোনার ছেলেরা করেছে। নইলে খুনিদের ধরতে এতো গড়িমসি কেন! বিএনপি আমলেও এমনটা ভেবেছে। এখনও তেমনটাই ভাবছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার জন্য বিশেষ কোনো ছাড় নেই। পুলিশের দালাল-সরকার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য বড় জ্বালা। তারা ডাকাতির ঘটনা ফাঁদতে গিয়েও ফাঁদতে পারছে না। তাদের পেটের ষড়যন্ত্র আরেক দল ফাঁস করে দিচ্ছে। সাগর-রুনির বাড়িতে ডাকাতিই যদি হবে, তবে কী ডাকাতি করতে এসেছিল ডাকাতচক্র। এরা যে অতি উঁচুমানের ডাকাত দেখছি, তারা নিয়ে গেছে সাগরের ল্যাপটপ, মোবাইল আর কম্পিউটারের ডিস্ক। যে ডাকাতদের হাতে খুন হয়েছে সাগর-রুনি—ওই ডাকাতরা আইটি এক্সপার্ট। টাকা-পয়সা, সোনা-দানা নয়; তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডাকাতরা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে সেসব দুর্নীতির গোপন তথ্য—যা সাগর সারওয়ার জানতেন এবং সংরক্ষণ করেছিলেন ল্যাপটপে সিডিতে।

ব্রাদার ঝানু গোয়েন্দা—তোমরা 'জজ মিয়া'কে ধরতে পার; ছিঁচকে নেশাখোরদের ধরে পিটিয়ে চোর সাজাতে পার, খুনি বানাতে পার—এবার দেখি কেমন তোমাদের কর্ম নৈপুণ্য? তোমরা কি পারবে এই আইটি বিশেষজ্ঞ উঁচুদরের ডাকাতদের ধরতে? মানুষ চাঁদে গেল। আর তোমরা ছিঁচকে নেশাখোরদের নিয়েই পড়ে রইলে।