সেতুর কম্পিউটারাইজড ছবি দেখিয়েই বিলিয়ন ডলার কমিশন

আমিন বরিশালি
Published : 12 Feb 2012, 06:23 PM
Updated : 12 Feb 2012, 06:23 PM

এবার দুর্নীতি নিয়ে ২/১টা খুচরা গল্প। এ গল্প সবারই জানা। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো কিংবা সড়ক ও জনপথ-সওজের প্রচলিত গল্প হলো—একটা ধানি জমি ছিল। বরাদ্দ করা হলো ওখানে রাস্তা হবে। মোটামুটি টাকা কামানোর রাস্তা বের করার জন্য দেখানো হলো এখানে খাল রয়েছে। তারপর খাল ভরাট, ইট ফেলা, সোলিং দেখিয়ে পুরো পয়সা এমপি ও নির্বাহী প্রকৌশলী মিলে খেয়ে ফেলেছেন। এক ফোঁটা কাজও হয়নি। দুদক সবসময় আছেই। তারা একটু নড়াচড়া করতেই কর্তাবাবুরা খানিকটা উদ্বেগে। এক পয়সারও কাজ হয়নি। কি করা যায়! স্থানীয় চতুর সড়ক ঠিকাদার এসে বুদ্ধি দিল—স্যার একটু পরিবেশের ধুয়া তুলে দিই। নেতাকে বলেন, রাস্তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিয়ে দিতে। আলটপকা লোকজন জুটে গেল। তারা রাস্তা নয়, খাল চায়। ধানের জমিতে চাষের জন্য খাল দরকার। তাতে পরিবেশ বাঁচে, চাষীও বাঁচে।

রাতারাতি প্রজেক্ট বাতিল। এমপি সাহেব স্বয়ং হস্তক্ষেপ করলেন। নতুন পিপিপিতে (প্রজেক্ট প্রপোজাল অ্যান্ড প্রি-রিভিউ) দেখানো হলো রাস্তাটি নির্মাণের শেষ পর্যায়ে প্রবল জনমতের সহিংস আপত্তির মুখে বাতিল হলো। এই স্থানে একদা খরস্রোতা নদী ছিল। জনদাবির মুখে সেই নদীকে খনন প্রয়োজন বিধায় নতুন বরাদ্দ প্রয়োজন।

খাল কোথায়—এবার আস্ত একটা নদী খননের টাকা বরাদ্দ করিয়ে ধুরন্ধর ঠিকাদারের পরামর্শে নতুন করে টাকা খাওয়া-খাওয়ায়ির মৌজ-মাস্তি শুরু হলো।
এবার আন্তর্জাতিক গল্প। বিষয় সেতু নির্মাণ। এক বহুজাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তারা। তিন দেশের ধুরন্ধর তিন প্রেসিডেন্ট এক মনোরম নদী তীরের অবকাশ কেন্দ্রে ককটেল পার্টিতে আনন্দ-ফুর্তি করছেন। এক উন্নত গণতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট বললেন, প্রায় দেড় মাইল লম্বা একটা সেতু করেছেন সম্প্রতি। ছবি দেখালেন। বললেন, এটিতে যা খরচ তার মাত্র ৮০ পার্সেন্ট ব্রিজের নির্মাণে খরচ করেছি। বাকি ২০ পার্সেন্ট তিনি সুকৌশলে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন।

দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট উদীয়মান গণতন্ত্রের। তিনিও তার দেশের এক মাইল লম্বা ব্রিজের ছবি দেখালেন। বাহবা নিতে বললেন, আমাকে অত খরচ করতে হয়নি। ৬০ শতাংশ ব্রিজে লেগেছে। বাকিটা আমার পকেটে।
তৃতীয় জন ইউটোপিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনিই হোস্ট কান্ট্রি। প্রমোদ কেন্দ্রের জানালা দিয়ে অদূরের নদীটিকে দেখালেন। বললেন, এটি দু'মাইল লম্বা হবে। কাজ শুরু করিনি আমরা। জনগণকে সেতুর স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছি মাত্র। বলছি—এই হবে সেই হবে। রেল হবে, স্যাটেলাইট সিটি হবে।

—তার মনে তুমি তো কানাকড়িও কামাই করতে পারনি—দুই দুর্নীতিবাজ প্রেসিডেন্টের টিটকিরি।
ইউটোপিয়ার প্রধানমন্ত্রী হাসলেন। বললেন, আমি এক ধুরন্ধর ঠিকাদারকে ব্রিজের দায়িত্ব দিয়েছি। ওস্তাদ লোক। সে তো সেতুর কম্পিউটারাইজড ছবি দেখিয়েই আমাকে বিলিয়ন ডলার কমিশন তুলে দিয়েছে।