সমাজ ব্যবস্থা উন্নয়নে আমাদের করণীয়

মুহাম্মদ আমিনুল আবেদীন
Published : 29 April 2012, 04:06 AM
Updated : 29 April 2012, 04:06 AM

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। স্রষ্টা মানব জাতিকে জ্ঞান দানের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। আর এই জ্ঞান ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করেছে মানুষ। অতীব পরিতাপের বিষয় , আজ মানুষ আবার যেন সভ্য থেকে অসভ্য হয়ে পড়ছে। সভ্যতার অপব্যবহারে মানুষ গবেষণা লব্ধ লাভজনক বিষয়বস্তু কে কুরুচিপূর্ণ করে তুলছে। মানব জীবনের প্রতিটি পরতে যেখানে চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগিয়ে চলা প্রয়োজন,সেখানে মানুষের স্বভাব যেন দিনদিন অসভ্য,অভব্য হয়ে পড়ছে।একটি জিনিসের আবিস্কার তার সুফল চিন্তা করে বহুদিন গবেষণা করে তা আবিষ্কার করেন। অথচ ব্যবহারকারীরা তার অসৎ ব্যবহারে উঠে পড়ে। তাই এক্ষেত্রে আবিস্কারকের দোষ না দিয়ে ব্যবহার কারীর দোষই প্রণিধান যোগ্য।

বর্তমান বিশ্বের অতি পরিচিত এবং সচরাচর ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র মোবাইল ফোন। আর এ যন্ত্রটিই বর্তমান সমাজে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে গত সপ্তাহের ব্লগে জামিল ভাই মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোনের কথা তুলে ধরে পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছিলেন। আমি তার আর্থসামাজিক ভয়াবহতার দিকে আলোকপাত করছি।

আমাদের দেশের ব্যাঙ্কের প্রায় পুরোটাই প্রবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের টাকা বললেই চলে। তারা বিদেশ থেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই মোবাইল ফোন। আর এই মাধ্যম অনেকের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। এতে করে ঘরে বিবাহিত বউ রেখে বিদেশে গেলে তাকে দিনরাত টেন্সন নিয়ে থাকতে হয়। কারণ মোবাইল এর অপব্যবহারে যে সব ঘটনা ঘটছে তা শুনে যার না ঘটে, সে ও মারাত্বক হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়ে। তবুও পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে তার বিকল্প উপায় নেই। মোবাইল পূর্ব সময়ে তারা চিঠি/পত্রের উপর নির্ভরশীল থাকলেও এক প্রকার স্বষ্থিতে থাকতো। মাসে ২/১ টি চিঠি আদান প্রদানে চলে যেত। এখন যুগের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে টাকা খরচ তো আছে, তথাপি এই মোবাইল শূন্য গোয়ালের সৃষ্টি করছে ঘরের বউ বাগিয়ে নিয়ে।

স্কুল /কলেজ ছাত্রছাত্রীদের কথায় আসা যাক। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর বাবা ছেলেকে পুরস্কার হিসেবে কি দেবেন, তা জানতে চেয়ে উত্তরে ছেলে একটা মাল্টিমিডিয়া মোবাইল চাইল। বাবা প্রথমে দিতে রাজি হননি। এত কম বয়সের ছেলেকে মোবাইল ফোন দিবেন, তাও আবার দামি ফোন!! তার বিবেক সম্মতি দিচ্ছিল না। কিন্তু ছেলে বোঝালো, তার বন্ধুদেরও মোবাইল ফোন আছে। তাদের বাবা মা দিয়েছেন। আর এখন তো ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই ফোন থাকে। সবারই দরকার হয়। কিন্তু বাবা হার মেনেছেন এই ভেবে যে সবার আছে আমার ছেলেকে না দিলে হয়? —–এখানেই তিনি মারটা খেয়ে ফেলেছেন। তার ছেলের বাস্তব প্রয়োজনটা না ভেবে চিন্তাটা করেছেন সবার সাথে মেলাতে। এই মেলানোর চিন্তাটাই আমাদের সমাজের জন্য কাল হয়ে যাচ্ছে।

আসলে আমরা শিক্ষিত/ অশিক্ষিত কেউ ভাবি না সমাজটা কাদের নিয়ে? আমি/আপনাকে নিয়েই তো সমাজ। তাহলে আমি আমার সন্তানকে, আপনি আপনার সন্তানকে শুদ্ধ/অসুদ্ধের শিক্ষাটা দিলেই তো হয়ে যায়। একটি শিশুর কৈশোর পার করে যৌবনে পা দেয়া পর্য্যন্ত মা-বাবার নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। সন্তান নিজের ভাল মন্দ বুঝার আগ পর্য্যন্ত তাকে সার্বিক জ্ঞান দানের সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে ধর্মীয় জ্ঞান (যে যে ধর্মের হোন না কেন? সব ধর্মে সামাজিক ও ঐশ্বরিক কল্যাণের কথা বলা আছে) দান করা সবিশেষ প্রয়োজন। তাতে সর্ববিধ উপকার হয়। আমরা ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গিয়ে কোনটাই সফল করতে পারছি না। এতে করে সমাজের অবক্ষয় তো বটে,নিজের সংসার/সমাজটাই ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ছে। তাই এখন সময়ের প্রয়োজনে আপন সন্তানকে একদিকে ধর্মীয় জ্ঞান অপরদিকে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সম্যক জ্ঞান দিয়ে তাদেরকে গড়ে তুললে সামাজিক – রাজনৈতিক সকল প্রকার শৃংখলা ফিরে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের সন্তানরাই তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তারাই তো সেখানে নেতৃত্ব, দলাদলি,সন্ত্রাস, রাস্তাঘাটের বখাটে হচ্ছে। যদি তাদেরকে আমরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করি তাহলে তারা সেই ভীতি মাথায় রেখে পথ চলবে। আর এইচএসসি পাস করার পূর্বে কোন সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন না দেয়াই উচিত। কারণ সে সময় পর্য্যন্ত তাদের হিতাহিত জ্ঞান পরিপক্ষতা পায় না। অবশ্য সামাজিক ও ধর্মীয় জ্ঞান না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ও তারা তাদের জীবন পরিচালনায় ব্যর্থ হয় তা গত কয়েক সপ্তাহের পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর আত্মহত্যার সংবাদই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অতএব,আমাদের সন্তানের ভবিষ্যত আমরা ছোটকাল থেকে সকল প্রকার চলন বলনের শিক্ষা দিতে না পারলে তার দায়ভার আমার আপনার এবং সমাজের উপর প্রভাব পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

স্রষ্টা মেয়ে পুরুষ শারীরিক ও গাঠনিক বিভেদ করেই সৃষ্টি করেছে। আমরা আধুনিকতার নাম দিয়ে সমধিকারের ঝড় তুলে যতই চেচামেচি করি না কেন তার পার্থক্য অবশ্যই মানতে হবে। কারণ যিনি স্রষ্টা তিনি ই সেভাবে সৃষ্টি করেছেন। তবে মেয়েদের শালীনতা তাদের নিজের প্রয়োজনেই প্রযোজ্য। সমধিকার শুধু তাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিচার্য। চলন বলনে মেয়েকে তার ইজ্জত আব্রু খেয়াল না করলে রাস্তা ঘাটের বিপত্তি এড়ানো সম্বব নয়।

আমার,আপনার ছেলে মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত মোবাইল,ল্যাপটপ নিয়ে কি করছে- সব সময় বন্ধু বেশে মিশে যাচাই করা উচিত। অনৈতিক কিছু দেখলে তার ভাল মন্দ তুলে ধরে বুঝিয়ে দেয়া আমাদের কর্তব্য। তাতে করে সামাজিক অপরাধ যেমন কমবে,তেমনি আসবে পরিবারে শান্তি, সামাজিক সুস্থিতি, দেশের প্রগতি।