আকাল দেশের নাকাল মন্ত্রী!

মুহাম্মদ আমিনুল আবেদীন
Published : 10 May 2012, 02:59 AM
Updated : 10 May 2012, 02:59 AM

হবু চন্দ্রের রাজত্বে যেমনটি বলত তেমনটি ই হতো । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়া বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্র গুলোর রাষ্ট্র পরিচালনায় ও তেমন। তারা যা বলবে তাই আইন। প্রশাসনিক চেয়ার যার, তার হুকুম ই হুকুমত (আইন)। তাদের দেশের নাগরিক দের জন্য আইনে বিশেষ ছার রয়েছে। কিন্তু ভিনদেশী (মিস্কিন) দের জন্য আইন বিশাল কানুন। কোন ড্রাইভার যদি কোন লোক অ্যাক্সিডেন্ট করে মেরে ফেলে,তাহলে তাকে এক লক্ষ পচাত্তর হাজার রিয়াল জরিমানা, তবে আরবী মারলে দ্বিগুণ। এক আরবী ধুধু গরম রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্ট করে মানুষ মেরে একটি চেক তার বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে চলে গিয়েছে। আর রাস্তায় কোন আজনবী গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করলে দুজনকে গাড়ি ওভাবে রেখে পুলিশকে ফোন করে ডেকে কার দোষ তা নির্ণয়ের পর পুলিশ সার্টিফিকেট নিয়ে তার পর মুক্তি। যদি পুলিশ সার্টিফিকেট না নেয়া হয়, তাহলে গাড়ি গ্যারেজে নিলে ও ঠিক করে দেবে না। ধরতে পারলে গ্যারেজের জরিমানা। আর আরবীরা অ্যাক্সিডেন্ট করলে তার মোবাইল ন, দিয়ে পুলিশ স্টেশন যাওয়ার জন্য বলে চলে যাবে। সরকারী কোন অফিসে তারা গেলে তাদের কাজ সবার আগে বিনা লাইন এ করে দেবে। আর আজনবী (ভিনদেশী) রা রাস্তায় হাটলেও পুলিশ তাকে চার্চ করে। এই হল "হুকুমাতুল আরাবিয়াহ "।

আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আমরাই সরকার নির্বাচন করি। নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য গণতান্ত্রিক নেতারা ঘর,বাড়ি,মহল্লা,রাস্তাঘাট , হাট বাজার, ডোবা,নদী নালা কোথা ও যাওয়া বাদ থাকে না। রিক্সা ওয়ালা,ঠেলাগাড়ি ওয়ালা ,নায়ের মাঝি,গ্রামের মা বোন থেকে শুরু করে কেও বাদ পড়ে না। সবার কাছে দয়া চান। মুরুব্বিদের দ্বারা মাথায় হাত বুলান। কিন্তু নেতা বনে যাওয়ার পর তার সাথে দেখা/কথা বলা তো দূর, রাস্তায় দাড়িয়ে প্রিয় নেতাজী কে দেখা ও ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

আজ আমি বর্তমান সরকারের সমর্থক বলা চলে, কিন্তু সত্য বলতে কার্পণ্য করেন না এমন এক ব্যক্তিত্বের কলাম পড়ে আমার ব্লগার ভাইদের উদ্দেশ্যে কলম ধরতে ইচ্ছা হল। তাই মনের আকুতি ব্যক্ত করার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

গত সপ্তাহে লণ্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গফফার চৌধুরী দেশে এসেছিলেন। তিনি তার মাতৃভূমির বর্তমান হালচাল তুলে ধরতে গিয়ে পরিতাপের সাথে এভাবে তুলে ধরেছেন :

আমি হরতালের দিনগুলো ছাড়া যেদিনই এবার ঢাকার রাস্তায় বেরিয়েছি, সেদিনই ভয়াবহ যানজটে পড়েছি। আমার চাচা বাহাউদ্দীন চৌধুরী কিডনির গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কম্যুনিটি হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁকে গাড়িতে চেপে মিরপুর থেকে দেখতে যেতে দু'দফায় আড়াই ঘণ্টা করে যানজটে আটকে ছিলাম। প্রচণ্ড গরমে গাড়িতে বসে সিদ্ধ হয়েছি, আর ভেবেছি, মানুষ কেন এই অসহ্য অবস্থার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ায় না? বাঙালীর সেই ক্রোধ ও সাহস কোথায় গেল?

আমার অচল গাড়ির পাশ দিয়েই সেদিন এক মন্ত্রীর পতাকাশোভিত সচল গাড়ি দ্রুত ছুটে গেছে। যানজট তাকে আটকায়নি। ওয়াকিটকির সাহায্যে ট্রাফিক পুলিশকে আগেভাগে সিগন্যাল দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়িতে মন্ত্রী পরম সুখে চলে যাচ্ছেন। অন্য কোন দেশ হলে এই মন্ত্রী এত সহজে রাস্তা অতিক্রম করতে পারতেন না। যানজটে ক্ষুব্ধ, ত্যক্ত মানুষ তার পথরোধ করত। তাকে গাড়ি থেকে টেনে নামাত। যেমন একবার টেনে নামিয়েছিল ফ্রান্সের এক মন্ত্রীকে।

এই মন্ত্রীকে চিনতে আমার দেরি হয়নি। ময়মনসিং-নন্দন। পাকিস্তান আমলে আরেক ময়মনসিংহ-নন্দন এভাবে বাঁশি ফুঁকিয়ে, গাড়ির আগে পিছে পাহারা নিয়ে ঢাকার রাস্তায় চলতেন। তিনি তখন ছিলেন গবর্নর। পরে ঢাকার সদরঘাটে জনতার হাতে তাকে নির্দয়ভাবে নাকাল হতে হয়েছিল। ক্ষমতায় থাকলে এসব ইতিহাস কেউ মনে রাখে না। তখন ইতিহাসের আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রথমে ঘটে ট্র্যাজেডি, তারপর তা তামাশায় রূপান্তরিত হয়।

দুঃখ হয় বাংলাদেশের কথা ভেবে, ঢাকা শহরের অবস্থা দেখে। অবশ্য বাংলাদেশের সব শহরেরই আজ চেহারা একই ধরনের। এই চেহারা কি কোনদিন আবার পাল্টাবে, আবার সবুজ ও সতেজ হবে? মানুষ আবার তার হারানো মানবতাবোধ ফিরে পাবে? অবশ্যই একদিন ইতিহাসের চাকা ঘুরবে। ঘুরতে বাধ্য। কংক্রিটের দানবের এই কঠিন ভুজবন্ধন থেকে অবশ্যই মুক্ত হবে ঢাকা শহর। শয়তানের কাছে জিম্মি রাখা আত্মা ফাউসট আবার ফিরে পাবে। তবে তা দেখার জন্য অবশ্যই আমি সেদিন বেঁচে থাকব না। তাই গত শনিবার (৫ মে) যখন ঢাকা বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ পাড়ি জমিয়েছি, সেদিন অপসৃয়মান ঢাকা শহরের দিকে তাকিয়ে বলেছি, 'স্বদেশ, স্বদেশ করিস তোরা, স্বদেশ তো আর তোদের নয়।

আমাদের দেশের এসব নাকাল নেতা/ মন্ত্রীদের এরকম দশা আমরা কখন করতে পারব? আমরা যতক্ষণ এমন দশার সৃষ্টি করার সাহস যোগাড় করতে পারব না, ততক্ষণ এ দেশের নেতা / মন্ত্রীদের পরিশুদ্ধতা আসবেনা। মিশরের তাহরীর স্কয়ার,গাদ্দাফির গাদ্দারীর পতন, এসব কিন্তু তার ই ফলশ্রুতি। তবে আমরা সভ্যতার সাথে আমাদের এসব নাকাল নেতাদের শায়েস্তা করার নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা যত সরকারই দেখছিনা কেন সবার একি দশা। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ও অনুরূপ দেখা গেছে। তাই আমাদের নেতৃস্থানীয় সবাই একই মানসিকতার কাণ্ডারী হয়ে গেছে। নেতৃত্ব চলে গেলে এক ভাষণ,গদিতে থাকলে অন্যরূপ। এ সবের পরিত্রাণ কর্তা আমাদেরকেই হতে হবে। নইলে আসমান থেকে কোন ফেরেশতা এসে আমাদের এ জঞ্জাল দূর করবে না। তাই আসুন, সবাই মিলে পরিবর্তনের সূচনা করি যেন, নেতারা জনগণকে মানুষ ভাবতে শিখে সারাজীবন, শুধু ভোটের সময় নয়।