ইসলাম কি শুধু না-বোধক শব্দই উচ্চারণ করে?

aminscn
Published : 11 Jan 2016, 08:16 PM
Updated : 11 Jan 2016, 08:16 PM

ইসলাম মানব জীবনের সবদিকে শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপিত করে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। অনেকে বলেন, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। ইসলাম শুধু 'না', 'না' আর 'না' বলে। আসলেই কি তাই? ইসলাম কি শুধু না-বোধক শব্দই উচ্চারণ করে? মোটেই না। ইসলাম হ্যাঁ-বাচক, সব কিছুকেই ইসলাম 'হ্যাঁ' বলে।

ইসলামে গান গাওয়া যাবে, গান শোনা যাবে, টিভি দেখা যাবে, নাটক সিনেমা দেখা যাবে, অভিনয় করা যাবে, ছবি আঁকা যাবে, ছবি তোলা যাবে। ইসলামে পার্টি করা যাবে, আনন্দ উল্লাস করা যাবে, পার্কে ঘোরা ফেরা যাবে, গার্ল ফ্রেন্ড অথবা বয় ফ্রেন্ড নিয়ে ঘোরাফেরা করা যাবে, যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবেন। নিজের জীবনকে উপভোগের জন্য যা যা করা দরকার এর কোনোটাই ইসলাম বারণ করে না।

ইসলাম প্রেম করতেও বারণ করে না। ইসলাম প্রেমের উপর খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রেম ছাড়া দুনিয়া টিকে থাকতে পারে না। ইসলামে প্রেম বৈধ। সবাই প্রেম করতে পারবে। যে বা যারা প্রেম করবে না তারা তো ভালো মুসলিমও হতে পারে না।

ইসলামে সেক্স বৈধ। যখন খুশি, যখন ইচ্ছে, যতোটুকু প্রয়োজন নারী পুরুষে মিলে সেক্স করুন। ইসলাম এটা নিষেধ করে না কখনোই। বরং নারী পুরুষের সেক্সের মধ্যেও আল্লাহ সোয়াব নিহিত রেখেছেন।

ইসলাম কোনো খাবার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেয় না। প্রতিটি খাবারই খাওয়া যাবে। এ বিষয়ে কেনো ইসলাম নিষেধাজ্ঞা দিতে যাবে! আপনার যা ইচ্ছে তাই খাবেন।

আপনার যেমন ইচ্ছে তেমন পোষাক পরিধান করুন। আপনি আপনার শারিরীক গঠন ও লজ্জা স্থানগুলো ঢাকতেই তো পোষাক পরিধান করে থাকেন। তাহলে বলুন তো, এ বিষয়ে কেনো ইসলাম আপনাকে আদেশ নিষেধ দিবে? কিন্তু হ্যাঁ, আপনি যদি পোষাক পরিধান করে লজ্জাস্থান ঢাকার নামে ভন্ডামি করেন, এমন পোষাক পরিধান করেন যাতে দেহের গঠন বাইরে থেকে বোঝা যায়, বাইরে থেকে দেহের কোনো অংশ দেখা যায় তবে কি লজ্জাস্থানগুলো ঢাকা হলো? আপনিই বলুন, যে পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্যে লজ্জা নিবারণ করা, এর বাইরে যদি কিছু করেন তবে তো ইসলাম আপনার পোষাকের উপর নিষেধাজ্ঞা দিবেই। আপনি মেয়ে হয়ে যদি ছেলেদের পোষাক পরেন আর ছেলে হয়ে যদি মেয়েদের পোষাক পরেন তবে তো ইসলাম 'না' বলবেই।

আপনি যদি মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক বিড়ি-সিগারেট, মদ-গাজা ইত্যাদি ইত্যাদি অখাদ্য ভক্ষণ করেন তবে তো আর আপনার দেহের জন্যে ভালো কিছু খেলেন না। তবে কেনো ইসলাম আপনার খাওয়ার উপর হস্তক্ষেপ করবে না? ইসলাম তো শরীরের জন্যে ক্ষতিকর নয় এমন খাদ্য খেতে বলে।

সেক্স করবেন নিজের স্বামী বা বউয়ের সাথে। তা না করে যদি বিবাহ বহির্ভূত ভাবে অন্য কারো সাথে করেন তবে কি আপনি মানুষ? ইসলাম আপনাকে অমানুষ বানাতে চায় না বলেই তো বিবাহ ছাড়া সেক্স করতে পারবেন না, সেটা বলে দিয়েছে। পশু আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই সেক্স করে। আর পশুরা যখন ইচ্ছা, যার সাথে ইচ্ছা করতে পারে।

ইসলামে যে প্রেমের কথা বলা হয়েছে সেটা যদি প্রয়োগ করা যায় তবে নারী পুরুষের মধ্যে এমন বন্ধন তৈরী হবে যা কেউ ভাঙতে পারবে না। ইসলাম অনেক প্রকার প্রেমের কথা বলেছে। নারী পুরুষের সেই প্রেম, যে প্রেমে তাদের কামরস নিঃসরণ হয় সে প্রেম অবশ্যই বাসর রাত থেকে শুরু হতে হবে। এটাই ইসলামের প্রেমের মূল কথা। বিয়ের আগেও নারী পুরুষ প্রেম করতে পারবে তবে তাদের উদ্দেশ্য থাকবে অচিরেই বিয়ে করা এবং বিয়ের পূর্বে তাদের মধ্যে একটা লৌহ প্রচীর থাকবে। যদি লৌহ প্রাচীর না থাকে তবে নারী পুরুষের এ প্রেমকে ইসলাম 'না' বলে থাকে। ইসলাম কেনো, মানুষের বিবেকও তো 'না' বলে।

গার্ল ফ্রেন্ড ও বয় ফ্রেন্ডের রিক্সায় ঘোরাফেরা, পার্কে পাশাপাশি বসে গল্প করা ইত্যাদি ইসলামে হালাল। যুবক স্বামী তার যুবতী বউয়ের বয়ফ্রেন্ড, যুবতী বউ তার যুবক স্বামীর গার্ল ফ্রেন্ড। আপত্তি নেই ইসলামের। তা ছাড়া যদি ভিন্ন কোনো সম্পর্ক যেমন বিবাহ হয়নি তবে তো ইসলাম 'না' বলবেই। আর ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পথে কোনো বিধি নিষেধ আরোপ করে না কখনোই।

অনুরুপ ভাবে- গান গাওয়া, গান শোনা, টিভি দেখা, নাটক সিনেমা দেখা, পার্টি করা, ছবি আঁকা, ছবি তোলা, সবকিছু। ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু মানুষ তার নিজের ভালোর জন্যে করে থাকে তার কোনো কিছুকেই ইসলাম 'না' বলে না।

ইসলাম শুধু কোনো কাজ করার উপায়টা বলে দেয়। এমন উপায় বলে দেয়, যে উপায়ে কাজটি করলে আপনি সর্বোত্তম সুফল পেতে পারেন। আসুন, ইসলামের না-বাচক শব্দকে হ্যাঁ-বাচকে রুপান্তরিত করে নিজেকে উপভোগ করি।