সমস্যার যুক্তি, আইন ও নৈতিকতা প্রসূত সমাধান

aminscn
Published : 1 Feb 2016, 12:01 PM
Updated : 1 Feb 2016, 12:01 PM

যুক্তি, আইন ও নৈতিকতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর কোনো একটির মধ্য দিয়ে নয়, বরং এই তিনটিরই মধ্য দিয়ে যদি কোনো সমস্যার সমাধান বের করা হয় তবে সেটাই হবে উত্তম সমাধান।

যুক্তি অনেক সময় নৈতিকতা বিবর্জিত হতে পারে। যেমন: আমার টাকার প্রয়োজন তাই আমি অপরের টাকা নিয়েছি, এটা হলো যুক্তি। আবার এই কাজটা সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিবর্জিত। কারণ, অপরের টাকা কোনো অধিকার ব্যতিরেকে নেওয়া অনৈতিক। আবার এই কাজটা আইন বহির্ভূতও বটে। কোনো কাজ নৈতিকতা বিবর্জিত হলেও তা অনেক সময় যুক্তিযুক্ত হতে পারে। আবার বেআইনী কাজও যুক্তিযুক্ত হতে পারে।

সব আইন নৈতিকতার মানদন্ডের সাথে মিশে না। কিছু আইন আছে যেগুলো রাষ্ট্র তার ক্ষমতা বলে প্রনয়ণ ও প্রয়োগ করে থাকে, কিন্তু সেগুলো নৈতিকতা বহির্ভূতও হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বলা হয়েছিল যে, ঘাতকদের বিচার করা যাবে না। এটা আইন হলেও নৈতিকতা বিবর্জিত ছিল। কারণ এখানে একজন মানুষকে হত্যার পরেও হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না, এটা নৈতিকতা পরিপন্থী। এরকম আরো অনেক আইন আছে যেগুলো নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক।

আর যে আইনগুলো নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলো আসলে কোনো আইনই নয়, কালো আইন বলা যেতে পারে। এ আইনগুলো মানুষের মানা উচিত নয়, যদিও রাষ্ট্র জোরপূর্বক নাগরিকদের সেগুলো মানতে বাধ্য করে থাকে।

এমন অনেক আইন আছে যেগুলো যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমাণিত করা যায়। যেমন: বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে ছেলে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই আইনে যুক্তি খাটিয়ে বলা যায় যে, বিয়ে করার ইচ্ছা জাগলেই যে কেউ যে কোনো বয়সেই বিয়ে করতে পারে। এখানে আইন দিয়ে বিয়ে আটকানো যুক্তিযুক্ত নয়।

কিন্তু বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কল্যাণের জন্যেই করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাল্য বিবাহের অনেক কুফল আছে বিধায়ই এ আইন নাগরিকরা মেনে চলতে বাধ্য, এতে যুক্তি খাটবে না। তাই দেখা যায় যে, অনেক আইন আছে যেগুলো অযৌক্তিক হলেও তা কল্যাণকর।

আমরা সারাদিন অনেক সমস্যা অনুভব করি। আর এর প্রেক্ষিতেই আমরা আমাদের নৈনন্দিন নানা কাজ সম্পাদন করি। কাজটি হতে পারে শরীরের যে কোনো অঙ্গ দ্বারা, হতে পারে পঞ্চ ইন্দিয়ের দ্বারা। প্রতিটি কাজের আগে চিন্তা করতে হবে এটা অযোক্তিক কিনা, দেখতে হবে এটা অনৈতিক কিনা, দেখতে হবে এটা আইন বহির্ভূত কিনা।

যুক্তি, নৈতিকতা ও আইন এই তিনটার যে কোনোও একটি দিয়ে সমস্যার সঠিক সমাধান আসবে না কখনোই। আবার যে কোনো দুটি দিয়েও সঠিক সমাধান আসবে না। মানব জীবনের যে কোনোও সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান পেতে অবশ্যই যুক্তি, নৈতিকতা ও আইনের সংমিশ্রণ প্রয়োজন।