সেতু নয়, আগে মানসম্মান বাঁচান

মিঠু
Published : 7 July 2012, 07:39 AM
Updated : 7 July 2012, 07:39 AM

নিশ্চয় মনে আছে, ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল জাতীয়করণের কথা? স্নায়ুযুদ্ধের সেই উত্তপ্ত যুগে মিশরের পরিস্থিতি অনেকটা এখনকার বাংলাদেশের মতই ছিল। আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তা প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের সোভিয়েতের সঙ্গে অস্ত্র কেনার চুক্তি করায় মার্কিনপন্থী বিশ্বব্যাংক নাখোশ হয়ে মিশরের সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল করে। এতে আরব জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট নাসেরের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। তিনি পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে বলেন যে, সুয়েজ খাল থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তাঁর এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমা শক্তিগুলো (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) বেজায় চটেছিল এবং আরেকটা আরব-ইসরাইল যুদ্ধও বেঁধে গিয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে আখেরে প্রেসিডেন্ট নাসেরের লাভই হয়েছিল। সুয়েজ খাল তো জাতীয়করণ হয়ই, পাশাপাশি নাসের রাতারাতি একাধারে আরব দেশসমূহ, তৃতীয় বিশ্ব ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নায়ক বনে যান। এরপর আর পুঁজিবাদী শিবির কখনো তাঁকে খুব একটা ঘাঁটায়নি।

এখন মাননীয় এবং আরো কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি যে নিজেদের অর্থায়নে (প্রয়োজনে ৩২ কোটি হাত দিয়ে কিংবা একবেলা বাজার না করে) পদ্মা সেতু নির্মাণের যে কথা বলছেন, স্পিরিটের কথা ভাবলে সেটির সঙ্গে নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের খুব একটা পার্থক্য নেই। সময় ও বাস্তবতা হয়ত ভিন্ন, তবে উভয় ক্ষেত্রেই যে অপ্রতিরোধ্য জাতীয়তাবাদী চেতনা সক্রিয়, তা অস্বীকার করা যাবে না। সরকার যদি স্বীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটিই হবে দেশের সার্বভৌম অস্তিত্ব ও ভাবমূর্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত হবে এরকম যে কোনো পরিকল্পনার সংগে সংহতি প্রকাশ করা। সুয়েজ খাল জাতীয়করণে মিশরীয়রা যেভাবে প্রেসিডেন্ট নাসেরের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেভাবে পদ্মা সেতু ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো আমাদেরও দরকার। এটি রাজনীতির প্রশ্ন নয়, প্রশ্নটি দেশের মর্যাদার।