সফরনামাঃ খাগড়া ছিটমহল (পঞ্চগড়)…ওরা এখন ভারতীয় নাগরিক

নওশাদ আনসারী
Published : 17 Nov 2015, 06:19 PM
Updated : 17 Nov 2015, 06:19 PM

ছোট ছোট বাচ্চারা যারা জানে তারা এখন থেকে ভারতীয় নাগরিক হতে যাচ্ছে

তাদেরকে যে ভারতীয় ভিসা দেওয়া হয়েছে

কিছুদিন পর ভারতীয় নাগরীক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া কয়েকজনের সাথে কিছুক্ষন

ছিটবাসী আমাদের চিড়া আর মুড়ি দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে
এদেরকে আপনারা যারা দেখছেন কিছুদিন পর থেকে এরা নিজেদের ভারতীয় বলে পরিচয় দিবে এবং এলাকাটিও ভারতের অংশ হবে।

বাংলাদেশ আর ভারতে মধ্যে ছিটমহল আদান-প্রদান চুক্তির ফলে এই যায়গা ভারতের হয়ে যাচ্ছে বলে ছুটে গিয়েছিলাম শিক্ষা সফরে এবং এই সফরের অংশিদার হয়েছিলেন দিনাজপুর সরকারী কলেজ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্স শেষ পর্বের ছাত্র-ছাত্রীর ও অত্র বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষিকাবৃন্দ। তবে আমাদের বিভাগীয় প্রধান এর খুব আগ্রহ ছিল চলো ওই ছিটমহলে খুরে আসি কারন কিছুদিন পর ওটা ভারতের অংশ হয়ে যাবে। সব ঠিকঠাক করে আমরা দিনাজপুর কলেজ থেকে ঠিক সকাল ৮.৪৫ মিনিটে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম (পথের মধ্যে অনেক ঐতিহাসিক যায়গা পরিদর্শন করলাম কিন্তু এখানে শুধু ছিটবাসীর কথা তুলে ধরছি, পরবর্তীতে অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শনের কথা তুলে ধরবো)।

ছিটমহল পৌঁছার আগে আমরা গেলাম পঞ্চগড় উপজেলা অফিসারের কাছে যিনি আমাদের ছিটমহলে পৌছে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করলেন সাথে দিলেন একজন গাইড। পরে আমরা সেই গাইডকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলাম ছিটবাসীর উদ্দেশ্য। খাগড়া ছিটমহল যেতে হলে আপনাকে ২/৩ কিলোঃ কাচা রাস্তা অতিক্রম করতে হবে পায়ে হেটে, তাই পাকা সড়কে বাস থামিয়ে আমাদের সেই ২/৩ কিলো পায়ে হেটে পথ অতিক্রম করতে হলো। সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে পৌঁছা মাত্র দেখা হলো শরিফুল নামীয় এক ভদ্রলোকের সাথে তিনি দেখিয়ে দিলেন এই যে পিলার দেখছেন এই পিলারের পর থেকেই ভারতের অংশ হয়ে যাচ্ছে, তারপর আমরা অভ্যন্তরে প্রবেশ করলাম, মিশে গেলাম ছিটবাসীর সাথে। একটা কথা বলতেই হয় যে খাগড়া ছিটবাসী খুবই অতিথীপরায়ন কারন কাচা রাস্তা হেটে গেলেই আপনারা এর ফলাফল দেখতে পারবেন পথের মধ্যে যাদেরই সাথে দেখা সালাম, আদাব করছেন আর জিজ্ঞেস করছেন ভাইজান কোথায় থেকে আসছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাদের সাথে অনেক কথা হলো, তারা হাসিমুখে আমাদের সাথে একদম মিশে গিয়েছিলো, তারা বললো এই প্রথম কেউ পুরো টিম নিয়ে আমাদের সাথে দেখা করতে এলো এই বলে সেখানকার মুরব্বী বিশ্বজিত রায় কেঁদেই দিলেন। পরে অনেক সমাদরে আমাদের ঘুরে ঘুরে সব দেখাতে লাগলেন। আপনারা এখন ভারতীয় হয়ে যাবেন, জায়গাটাও এখন ভারতের অংশ বলে পরিচিত পাবে, কেমন লাগছে আপনাদের? এমন প্রশ্ন করতে সীতারাণী জানালেন, কেমন লাগবে সেটা জানি না তবে একটা দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছি, খুবই ভাল লাগছে। তবে অজয় রায় নামে এক লোক জানালেন আমাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে ভিতরে, তাই এখানকার ছিটবাসী ইতিমধ্যেই তাদের সব জায়গায় আড়াই লক্ষ টাকা বিঘা হারে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন যেদিন ডাক পড়বে সবাই চলে যাবে তাদের এই জায়গা ছেড়ে। ভারতীয় দূতাবাস থেকে তাদের একটি অস্থায়ী ভিসাও দেওয়া হয়েছে ৫ বছরের জন্য। যার দ্বারা তারা আগামি ৫ বছর বিনা পাসপোর্ট টিকিটে বাংলাদেশ আসা যাওয়া করতে পারবেন।

কথা মাঝেই গীতারাণী নিয়ে এলেন চিড়া আর মুড়ি আরেকজন নিয়ে এলো চুন আর পান। আমাদের এখানে এটাই পাওয়া যায় বলে মুচকি হাসি দিয়ে বলে গেলেন সুরু বাবু। আমরাও ছিটবাসীর জন্য কিছু খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। বাচ্চাদের জন্য লজেন্স বিস্কুট তো ছিলোই। তাদের সাথে কিছু সময় ব্যায় করে খুবই ভাল। কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে আমরা সবই দেখলাম, দেখলাম যে কিছুদিন পর এই সেই এলাকা যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এখানকার মানুষরা এখন থেকে ভারতের নাগরিক হয়ে যাবে। ঠিক মনে হচ্ছিলো, আমরা ভারতে আছি, অনেক্ষন তাদের সাথে সময় ব্যায় করে পরে ফিরে গেলাম অন্য এক দর্শনীয় স্থানে…।

(চলবে)