পাখি পালনে মানসিক প্রশান্তি

খন্দকার এনামুল হক
Published : 27 June 2012, 08:12 PM
Updated : 27 June 2012, 08:12 PM

পাখি পালনে মানসিক প্রশান্তি

ইট-পাথরের এই শহরে কালের বিবর্তনে আমরা বড্ড যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। আগে যেখানে পাখির কল-কাকলীতে আমাদের ঘুম ভাঙত সেখানে আজ গাড়ির হর্ণ রিক্সার টুংটাং শব্দ আমাদের কে মনে করিয়ে দেয় যে সকাল হল শুরু হল আরেকটি কর্মব্যস্ত দিন। কিন্তু ইচ্ছে করলেই আমরা আমাদের যান্¿িক জীবনে কিছুটা প্রকৃতির ছোঁয়া দিতে পারে। আমাদের ঘুম ভাঙতে পারে পাখির কিচির মিচির শব্দে। আমরা আমাদের বারান্দা বা বাসার ছাঁদে ইচ্ছে করলেই প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী করে বিভিন্ন কেসিং বার্ড (খাঁচার পাখি পালতে পারি) যা কিছুটা হলেও আমাদের যান্ত্রিক জীবনে মানসিক প্রশান্@ি দিবে। খাঁচায় পাখি পালনে করণীয়: খাঁচায় পাখি পালতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে কোন ধরণের পাখি খাঁচায় পোষা যায়। মনে রাখবেন সব পাখি কিন্তু খাঁচায় বন্দি অবস্থায় পালন করা যায় না। আবার কিছু পাখি আছে তাদেরকে খাঁচায় বন্দি করেই পালতে হয়। এদের কে বাইরে অন্য পাখিদের সাথে ছেড়ে দিলে এরা বেশিক্ষন বাঁচতে পারে না। অন্যান্য হিংস্র বন্য পাখি তাদেরকে মেরে ফেলে। যেসব পাখি খাঁচায় বন্দি অবস্থায় পালন করতে হয় তাদেরকে কেসিং বার্ড বলে। তাই খাঁচায় পাখি পালতে হলে কেসিং বার্ডই পালন করা উচিত। কোন মতেই বন্য পাখি পালন করা ঠিক নয়।

খাঁচায় পালন উপযোগী কিছু পাখি: মুনিয়া, লার্ভবার্ড, বাজরিগার, প্যারাকিট, ককাটেল, ফিঞ্চ, বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু, রোজেল, ক্যানারি সহ আরো বেশ কিছু পাখি আছে যা খাঁচায় যত্নসহকারে পালন করলে দীর্ঘদিন যাবত্ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। খাঁচায় পালন অনুপোযোগী কিছু পাখি: টিয়া, দেশী ঘুঘু, ময়না, ভিমরাজ সহ প্রায় সকল দেশীয় পাখি। তবে ইচ্ছে করলে টিয়া পালন করা যায় যদি বড় খাঁচা হয়। ময়না অনেকেই পুষে থাকেন তার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরের জন্য। কিন্তু ময়নার জন্য বড় খাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে ময়না বন্য পাখি।

খাবার-দাবার: সব পাখির খাবার এক নয় জাতি ভেদে এদের খাবার প্রণালীও ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কিছু জনপ্রিয় কেসিং বার্ডের খাদ্য প্রণালী বর্ণনা করা হলো: মুনিয়া: এদের প্রিয় খাবার হচ্ছে কাউন। তবে শুধু কাউন খাওয়ালে এদের ভিটামিন এর অভাব পূর্ণ হবে না। তাই এদের খাদ্য মিশ্রণের মধ্যে কাউন, চিনা, জিরা গম, কালিজিরা ধান, গুজিতিল, সরিষা দিলে ভাল হয়। তবে এই মিশ্রনে কাউনের পরিমাণটা বেশি হওয়া প্রয়োজন। তবে মাঝে মাঝে এদেরকে একটি বাটিতে কিছুটা ধূলো-বালি, ইটের গুড়ো দিলে ভালো হয়।

বাজরিগার:কাউন ই এরা বেশি খেংেয় থাকে। তবে সপ্তাহে একদিন এদের কে পালং শাক, বা কলমি শাক দেয়া উচিত সাথে মাঝে মাঝে ফলম–লও দেয়া যেতে পারে। প্রতিদিন সম্ভব হলে পাউরুটি দিন। তবে প্রধান খাদ্য হিসাবে কাউন, চিনা, গুজিতিল, তিশি, কালিজিরা ধানের মিশ্রন দেয়া উচিত। এদের খাঁচার ভিতর একটি পাত্রে গ্রিড( ইট ভাঙ্গা সুরকি, বিট লবন, ডিমের খোসা চূর্ণ) দেয়া উচিত। এতে করে ওদের ক্যালসিয়ামের অভাব পূর্ণ হবে।

লার্ভবার্ড: এদেরকে কাউন, চিনা, সূর্যমুখী বীজ, ক্যানারি সিড ইত্যাদির মিশ্রন দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ফলম–লও দেয়া যেতে পারে। গ্রিড ও দেয়া উচিত।

লাফিং ডাভ বা ঘুঘু: এদের প্রিয় খাবার হলো কাউন ও চিনিগুড়া ধান। তবে এদেরকে মিশ্র খাদ্য দিলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যেমন : কাউন এক কেজী, চিনা আধা কেজি, চিনিগুড়া ধান বা পোলার চালের ধান ১ কেজি, সরিষা আধা কেজি, জিরা গম আধা কেজি একত্রে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন গ্রীড খেতে দিতে হবে। রোজেলা, টিয়া বা ম্যাকাউ: এদের প্রধান খাদ্য হলো শস্য বীজ, যেমন: স–র্যমুখির বীচি, কুসুম ফুলের বিচি ইত্যাদি। তবে এদের খাদ্য মিশ্রনের মধ্যে সূর্যমুখির বীজ ১ কেজি, কুসুমফুলের বীজ ১ কেজি, বাদাম আধা কেজি, ধান আধা কেজি একত্রে মিশিয়ে দিতে হবে। এক বেলা ওদের কে ফল বা সবজী দিতে হবে। যেমন: গাজর, শশা, আপেল, কলা ইত্যাদি। মনে রাখবেন: এদের কে যখন খাবার দিবেন তখন হৈ চৈ করবেন না। আসেত্ম আসেত্ম শিষ বাজান এবং এদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। রাতের বেলা কখনই খাবার দিবেন না। প্রতিদিন দু'বার করে পানি পরিষ্কার করে দিন। তবে টাটকা পানি না দিয়ে ফুটানো পানি দেয়ার চেষ্টা করবেন। বিড়াল, কাক জাতীয় প্রাণী যেন ওদেরকে বিরক্ত না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ২ মাস পর পর ওদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। এ ড়্গেত্রে অভিজ্ঞ কোন পাখি পালকের সাহায্য নিতে পারেন। রোগ-বালাই হলে অভিজ্ঞ পাখি পালকের সাহায্য নিন। বৃষ্টির পানি যাতে ওদের গায়ে না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। সপ্তাহে একদিন ওদের থাকার জায়গায় পরিষ্কার করে দিন। পাখি কেনার সময় ভালো করে জেনে নিন ওদের খাদ্য প্রণালী। দেখে শুনে সুস্থ্য পাখি ক্রয় করুন। সুস্থ্য পাখি চেনার উপায় হচ্ছে পাখি খাঁচার ভিতর ঝিম ধরে বসে থাকবে না। চেচামেচি করবে এবং খাঁচায় উড়ে বেড়াবে। মনে রাখবেন পাখি পালন করতে হলে অবশ্যই আপনার ব্যস্ততম জীবন থেকে ওদের জন্য কিছুটা সময় রাখতেই হবে। নিয়মিত একটা নির্দিষ্ট সময় ওদের সাথে কাটান। ওদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। তাহলেই আপনার পাখিগুলো সুস্থ্য সবল থাকবে এবং আপনার যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্থির ছোঁয়া দেবে, পাবেন মানসিক প্রশান্ত্মিও। অনেকে মনে করে থাকেন পাখি পালন একটি অপরাধ। কারণ তাদেরকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় পালন করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন আমরা সেসব পাখিই পালন করবো যারা খাঁচায় থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই খাঁচার পাখিগুলোকে কে ছেড়ে দিলে অন্য বণ্য পাখি তাদের মেরে ফেলে। তাই কেসিং বার্ড অর্থ্যাৎ খাঁচার পাখি খাঁচায় পালন করা কোন অপরাধ নয়।

খন্দকার এনামুল হক ২৫/৩, প–র্ব নাখাল পাড়া, তেঁজগাও, ঢাকা মোবাইল: ০১১ ৯৭৩৪০১১০