(ছবিসূত্র: www.grafikdesignbykiss.com)
এক সময় ক্রাইম বিটে যারা কাজ করতেন তাদের খুব কদর ছিল। যেটা এখন খুব কমই চোখে পড়ে। হাতে গোনো দুই একজন ছাড়া। কিছুদিন আগেও ক্রাইম রিপোর্টারদের দেখলে লোকে মুখে শুনা যেত উনি আমার কাছের খুব বড় ভাই। খুব ভালো ভালো রিপোর্ট করেন। এমনকি বড় বড় কর্মকর্তারাও সামনে দেখা হলে কয়েক হাত দূর দিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু সময় বদলে গেছে। যুগ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। ভালো রিপোর্টের চেয়ে বড় বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটা সেলফি তুলে দিতে পারলেই প্রভাবশালী রিপোর্টার হওয়া যায়।
পত্রিকার পাতা উল্টালে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন আর খুব বেশি চোখে পড়ে না। খবরের পেছনের খবর বলে সাংবাদিকতায় যে একটা বাক্য আছে। সেটা কেবল মুখেই। কাগজের পাতায় এর বাস্তবায়ন খুব একটা চোখে মেলে না। তাই তো মানুষ তৃষ্ণা মেটাতে সামাজিক মাধ্যমের অনেক গুজবকেই সত্য বলে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
শুধু ব্রিফিং কাভারেই ব্যস্ত সাংবাদিকরা। ঘটনার ফলোআপ চোখে পড়ে না। বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে কোট-আনকোট নিউজের খুব দাপট। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রেস ব্রিফিংয়ের বক্তব্য কেবল খবরের ভাষায় ছাপা হয়। থাকে না নিহত ব্যক্তির পরিবারে বক্তব্য। ঘটনার অনুসন্ধান বা বন্দুকযুদ্ধের চিত্রের রিপোর্টারের নিজস্ব ভাষা। কেবল কোড আনকোডেই সিমাবদ্ধ সাংবাদিকতা।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বড় বড় ইস্যু গণমাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসার পর গণমাধ্যমের চোখে পড়েছে। এরমধ্যে উল্লেখ যোগ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক সালমান এবং তাহসান মিথিলার বিচ্ছেদের রসায়ন।
এর মানে কি খবর বের করে আনতে বা খবর প্রকাশ করতে গণমাধ্যম ব্যর্থ? নাকি সাংবাদিকরা সংবাদের খোঁজে উদাসীন। সাংবাদিকরা কোনো খবর প্রকাশ বা বের করে আনতে ব্যর্থ হলে পাঠকরা এই যুগে বসে থাকবে না। সেটা প্রমাণও অনেকবার হয়েছে। তারা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। নিজেরাই খবর প্রকাশের দায়িত্ব কাধে নিচ্ছে।
পাঠকরা পত্রিকায় আর সময় ব্যয় করছে না। হাতে সময় থাকলে অনলাইন পত্রিকায় ঢুঁ মারার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর দিচ্ছে। এতে পত্রিকার পাঠক যেমন কমছে। তেমনি সাংবাদিকরা তাদের কদরও হারাচ্ছে। অনেক ঘটনায় এখন টেলিভিশন যেমন লাইভ দেখায়। তেমনি সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীরাও তাদের স্মার্ট ফোনটি ব্যবহার করে লাইভ দেখিয়ে থাকেন। একজন সাংবাদিক অথবা গণমাধ্যম কিছু বাধ্যবাধকতা অথবা নিজস্ব নীতিমালার কারণে সেখানকার সঠিক ঘটনা প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু যে ব্যক্তি ফেসবুকে লাইভ দেখাচ্ছে তার মাথার ওপর কোনো চাপ নেই। নেই নীতিমালা বা বাধ্যবাধকতা। তার চোখের সামনে যা ঘটছে সেটাই দেখাচ্ছে। সাধারণ দর্শক গণমাধ্যমের বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রাখে না। তারা সঠিক খবর জানতে চান। তাই বাধ্য হয়ে টেলিভিশনের সুইচ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাতের স্মার্ট ফোনে ফেসবুক লাইভ দেখে খবরের খোরাক মেটাচ্ছেন।