স্বেচ্ছায় প্রতিবন্ধী

Aowlad Hossain
Published : 21 Jan 2016, 07:15 PM
Updated : 21 Jan 2016, 07:15 PM

স্বেচ্ছায় দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে আত্মনিয়জিত করেন যিনি- স্বেচ্ছাসেবক।

স্বেচ্ছায় প্রতিবন্ধী হিসেবে নিজের পরিচিতি বাড়াতে মেহনত করেন যিনি- স্বেচ্ছাবন্ধী।

এরকম স্বেচ্ছাবন্ধীরা রয়েছেন আমাদের বাড়িতে,মহল্লায়,ক্যাম্পাসে ও বন্ধুমহলে, পরিচিতজন হিসেবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বত্র।

স্বেচ্ছাবন্ধীরা হয়তো নিজেরাও জানেননা যে তাদের কর্মকাণ্ড ও অঙ্গভঙ্গি কোনো এক শ্রেনীর প্রতিবন্ধীর সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। বুঝতে পারেন শুধু উনার আশপাশের সুস্থরা। তাঁরা চোখে আঙুল গুঁজে দেখিয়ে দিলেও তারা ব্যাপক উৎসাহ – উদ্দীপনার মাধ্যমে তাদের স্বেচ্ছাবন্ধীত্ব জাহির করিয়া চলেন এই ভেবে যে সুস্থরা তার কর্মকান্ডে ঈর্ষান্বিত।

কিন্তু লক্ষন বুঝে এদের সঠিক সময়ে টিকা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাগ্রহণ আমাদের ও পরিবারের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

চলুন এবার কয়েকটি স্বেচ্ছাবন্ধী রোগীর লক্ষন ও চিকিৎসা সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেই:

১. সেলফি প্রতিবন্ধী :

ইদানীংকালে সেলফি তোলা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার। কিন্তু অঘটন টা ঘটে পোজ দিতে গিয়ে। নিজের মুখকে অতি পরিচিত কোনো প্রানীকুলের সাথে মিলিয়ে পোজ দেয়াটা এখন খুবি প্রচলিত একটি ঘটনা। কখনো বানর, হনুমান, বিড়ালের ঠোঁটের ন্যায় স্বীয় ঠোঁট বাঁকা করিয়া, কখনো অপুষ্টিতে ভুগা শিশুদের মতো আবার কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর মতো মুখের ভঙ্গি করে পোজ দেয়া একটি অসুস্থতাজনিত রোগ। অল্প বয়সী নারীদের মধ্যে এ রোগের হার বেশি দেখা যায়। এটি ছেলেদের মধ্যেও ক্রমশ ধাবমান হচ্ছে।

টিকা: হুবহু জলাতঙ্ক, রানীখেত,বার্ড-ফ্লু রোগের টিকা দিন। নিয়মিত পশুর ডাক্তার দিয়ে চেক-আপ করান। সকল প্রকার ক্যামেরা এবং চিড়িয়াখানা থেকে দূরে রাখুন।

২. দিক প্রতিবন্ধী :

আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে কারোর অবস্থান সম্পর্কে জানাটা খুবি সহজ!! ফেইসবুকের কৃপায় আমরা অতি সহজেই স্বেচ্ছাবন্ধীদের অবস্থান জানতে পারি। কারন উনারা যেখানেই যে অবস্থানেই থাকেননা কেনো যাতে দিক- রাস্তা ভুলে না যান এজন্য সর্বদা চেক-ইন অপশনটা ব্যাবহার করেন। ইহা একটি দিকভুলা রোগ।

টিকা: গলায় সর্বদা মানচিত্র ঝুলিয়ে রাখুন। ট্রাফিকপুলিশে ট্রাই করুন।

৩. আন্দোলন প্রতিবন্ধী :

এই ক্যাটাগরির প্রতিবন্ধীরা কাজী নজরুল এর জন্মতারিখও ঠিকঠাক বলতে পারবেনা কিন্তু যেকোনো আন্দোলনরত দলের সাথে মিশে গিয়ে উপর্যুপরি সেলফি তুলায় মশগুল হয়ে পরে যদিও আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারনাই নাই। ভাবটা এমন যে দেশের চলমান অবস্থা সম্পর্কে খুব ওয়াকিবহাল। অথচ ২১শে ফেব্রুয়ারিতে টিভি চ্যানেলের সামনে হলুদ দন্ত প্রদর্শনপূর্বক বলেন…." ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের এই বিজয় দিবস "

টিকা: দৈনিক ৫ টি করে পত্রিকা পাঠ করান । অনলাইন পত্রিকা থেকে দূরে রাখুন। বিটিভি দেখতে বাধ্য করুন।

৪. টাইপিং প্রতিবন্ধী :

এই শ্রেনীর প্রানীরা শুধু প্রতিবন্ধীই না আস্ত একটা বিনোদন ও বটে!!! এরা বাঙলা – ইংরেজি উভয়টিই বলতে ও লিখতে পারে কিন্তু দুর্গন্ধটা ছড়ায় বাঙলা ভাষা ইংরেজি অক্ষরে লিখতে গিয়ে। সেটা পাঠকের কাছে যতটা না দুর্বোধ্য ততোধিক অশ্লীল!!! মর্মোদ্ধারে রীতিমতো সাবটাইটেল আবশ্যকীয় হয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে ঐ প্রাণীটি আর স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্যদের নিকট বিষয়টি অবোধ্যই থেকে যায়।

হুবহু কয়েকটি লেখা কপি করা হলো:
#
""kalo mag jomasa akasha akon I ajora bristy jorba.
tobo paina tomaka kuja paina tomak a pasa.
mag vanga obiram bristy jhora si bristy r maja akaki daria.
somoy kate jai bristyo thame jai ame hay tomari oppekay tobo paina tomak a kuja paina tomay pasha""

##
"cock gay moner kata bale!!!"

###
"Windows phone ea keypad capy ki baby restart many Ki dial korta hoy. Help Me."

টিকা: অনলি আদর্শলিপি।

৫. প্রাণীজ প্রতিবন্ধী :

এই শ্রেনীর লোকজন অতিমাত্রায় পশু প্রেমী হয়। সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু পশুকে নিজের সন্তান, ভাই, জানু, কলিজা প্রভৃতি সম্বোধনপূর্বক জড়িয়ে ধরে চুম্বিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে মাধ্যমটিকে মিনি চিড়িয়াখানায় পরিণত করে ফেলেন। ইহা প্রথমত একটি জটিল রোগ, দ্বিতীয়ত লোক দেখানো আহ্লাদ । এতেকরে ধীরে ধীরে প্রানীর বৈশিষ্ট্যাবলী তার মধ্যে প্রতিয়মান হতে থাকে। পরবর্তীকালে এরাই সেলফি প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়। এই রোগে আক্রান্তের হার নারীদের বেশি।

টিকা: ডিসকভারি, জিওগ্রাফি চ্যানেল নিষিদ্ধ করুন। "শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব" প্রবন্ধটি মুখস্ত করিয়ে ফেলুন।

৬. ভার্চুয়াল প্রতিবন্ধী :

জৈবযৌগে কার্বনের যেমন অপ্রতুলতা ঠিক তেমনি এই শ্রেণীর প্রতিবন্ধী ঢাকায় অপ্রতুল। আমরা গেঁয়োরা এদের "মাম্মি-ড্যাডি বয়" বলে থাকি। সারাদিন ক্লাস করে বাসায় ফিরে কম্পিউটারে গেইমস, ফেইসবুক, ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত থাকে। রাতে হরলিক্সের সাথে দুধের মিশ্রণ খায়। হরর মুভি দেখে মাম্মির কোলে লেপ্টে পরে। কিন্তু এরা আবার এতো ভিতুও না। যুদ্ধে এদের বিশাল আগ্রহ, যুদ্ধের নাম "ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স"!!! বিনোদন বলতে তার গেইমস আর মজার মজার অ্যাপস। এবং তার বন্ধুমহলও তার মতোই প্রতিবন্ধী। কারন আড্ডায় ওদের বিষয়বস্তুও থাকে ঐ গেইমস আর চ্যাট নিয়েই। এর বাইরে তারা কিছু চিন্তা ও কল্পনা করতে পারেনা। আসলে এদের জগৎটাই এমন। আসলে ওদের বাবা-মা ওদের প্রতিবন্ধী হতে বেশি অনুপ্রাণিত করে থাকে।

টিকা: প্রথমে গ্রামে, তারপর থানা শহরে, তারপর জেলাশহরে রাখাল হিসেবে নিয়োজিত করুন। আর বাবা-মাকে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ান।

৭. সিরিয়াল প্রতিবন্ধী :

"আসুন,সিরিয়াল দেখি- কূটনামী শিখি" এই মূলমন্ত্র-কে সামনে রেখে তারা জীবনকে চালনা করছেন। বাচ্চার ক্লাস, স্বামীর অফিসের টাইম ভুলে গেলেও ইনারা সিরিয়াল এর ক্ষণ ভুলেননা কখনোই। কার্টুনপ্রীয় নিষ্পাপ বাচ্চারা এদের ভয়াল দৃষ্টিপাত দেখে কার্টুন উপভোগ বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। এরা বাড়িকে "জি-বাংলা"র স্যুটিং স্পট আর পরিবারের সকলকে সিরিয়ালের একেকটি চরিত্র ভাবতে শুরু করেন। সিরিয়ালের ফাঁকে ফাঁকে পর্যাপ্ত অলংকার, মেকআপ, জামা-কাপড় পরে বাড়ির টুকটাক কাজ করেন কিন্তু মেকআপ ঠিক রেখে অতি সাবধানে। ভুলক্রমে মিস হয়ে যাওয়া পর্বটি পাশের বাড়ির ভাবির বরাতে জেনে নেন সাগ্রহে। সিরিয়াল উপভোগে তারা এতোটাই সিরিয়াস যে শান্তিমগ্নে উপভোগের নিমিত্ত্বে উনারা স্বামী সংসার, ছেলেবন্ধু,খাওয়া,গোসল বিসর্জনযোগ্য বলে মনে করেন।

চিকিৎসা : প্রতিদিন ১০টি জিন্সের প্যান্ট ধৌতকরণ , ১০ কেজি ছোট মাছ কাটাকুটি, ৫ কেজি পেঁয়াজের ববস্ত্রহরণের টার্গেট ধরিয়ে দিন। ৫ টি পত্রিকার কলাম পাঠ করান এবং ঘুমানোর পূর্বে অন্তত ৩ টি সাহিত্যবিষয়ক টক-শো দেখে ঘুমানোর আইন জারি করুন। দাওয়াই চলমান থাকবে দিনব্যাপী।

৮. মেকআপ প্রতিবন্ধী :

সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত চেহারাকে আমরা সম্মান করি ও ভালোবাসি। একে সুন্দর রাখতে আমরা সর্বদাই চেষ্টা করি। কিন্তু এক শ্রেণীর নারীরা নিজের চেহারাকে অতিমাত্রায় আকর্ষণীয় করে তুলতে আশ্রয় নেয় গাঢ় মেকআপ-এর যা তার প্রকৃত চেহারার একটি ডুপ্লিকেট "এডিট ভার্সন" উপহার দেয়। রঙের কি অদ্ভুত বদহজম তার শরীরে!!! একই নারীর মুখ ও পায়ের স্থিরচিত্র আপনার চোখের সামনে ধরলে আপনি নির্ঘাত ভয় পেয়ে যাবেন। ইহা যতটা না ভয়ানক তার চেয়ে বেশি মজার কারন একই দেহের একাধিক "থিম কালার"। এবং এতেকরে প্রতারিত হচ্ছে সহস্রাধিক বিয়েচ্ছু নিষ্পাপ বর। বিভিন্ন উৎসব ও পারিবারিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এসব রোগীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।

টিকা: সবুজ ঘাস তিন বেলা খালি পেটে। ময়দার প্রকৃত ব্যাবহার শিক্ষাদান। "বার্জার পেইন্ট"-এ যোগদান করিয়ে দিন।

পুনশ্চ :বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্ছাবন্ধীদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো কোটা,ভাতা, আশ্রম বা সাহায্যকেন্দ্রের ব্যাবস্থা করেননি কাজেই স্বেচ্ছায় বা পরিবারের কথানুযায়ী টিকা ও চিকিৎসা গ্রহন করুণ এবং প্রকৃত প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের অধিকারদানে সচেষ্ট হোন।

বি:দ্র: সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ মার্জনীয়।

মোঃ আওলাদ হোসেন
ই-মেইল: aowladlpe@gmail.com
২১শে জানুয়ারি, ২০১৬