ইনকাম ট্যাক্স: আদায়ের পদ্ধতি ও কিছু কথা

প্রকৌশলী আশরাফ
Published : 14 June 2012, 09:58 AM
Updated : 14 June 2012, 09:58 AM

আমাদের দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর নিয়ে সরকারের উচ্চবাচ্য খুব বেশি বছর আগের কথা নয়। দেশের উন্নয়নে আয়কর দেয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। এখন এদেশের মানুষ মোটামুটিভাবে সচেতন হয়েছে আয়কর ইস্যু নিয়ে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবি শ্রেনী। তারা সীমিত কিংবা মধ্যম মানের আয় করলেও সচেতনতায় সবচেয়ে এগিয়ে। নিম্নবিত্তের আয় নিম্ন, তাই তাদের প্রসংগে বলার কিছু নেই। উচ্চবিত্ত যারা তাদের অনেকাংশের-ই স্বভাব কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়া যায়। তাই অনেক টাকা খরচ করে তারা আয়কর উপদেষ্টা পুষলেও ক্ষতি নেই, বরং তাতে তাদের অনেক অনেক লাভ! অনেক বেশি আয়করের টাকা "সেভ" করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা বাধে যখন মধ্যবিত্তকেও যাওয়া লাগে আয়কর উপদেষ্টার খোঁজে। আমাদের দেশে আয়কর দেয়ার যে পদ্ধতি তাতেই গোড়ায় গলদ। স্বনির্ধারন পদ্ধতি, অনলাইন পদ্ধতি, আয়কর মেলা এমন অনেক পদ্ধতি যদিও আছে রিটার্ণ দাখিল করার, পরবর্তিতে হয়রানি হতে হয় প্রতি পদে পদে। আয়কর অফিসে যারা বসে থাকেন, তাদের অধিকংশই বসেই থাকেন কখন একজনকে পাবেন টাকা খাওয়ার জন্য। টাকা খাওয়া ছাড়া আয়কর সনদ পাওয়া বা অন্যকোন কাজ করানো খুবই কষ্টসাধ্য। হয়রানি তো আছেই। তাই অনেকে আয়কর দেবার ইচ্ছা মনে থাকলেও, ওপথ মাড়াতে চান না। এসব সরকারের চোখে কখনোই পড়েনা। বরং অর্থমন্ত্রী-রা সবসময় উদগ্রীব থাকেন কিভাবে নতুন নতুন ক্ষেত্রের মানুষকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা যায়। এভাবে প্রতি অর্থ বছরেই নতুন নতুন আতংক দেখা দেয়। কিন্তু আদৌ কি তার প্রয়োজন আছে?

আজকে ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর প্রদানের যে পদ্ধতিটি নিয়ে বলব তা যুক্তরাজ্যে প্রচলিত পদ্ধতি এবং অবশ্যই খুব সহজ পদ্ধতি। আমি বলছিনা পৃথিবীতে এর চেয়ে ভাল পদ্ধতি নেই, হয়ত কারো জানামতে আরো সহজ পদ্ধতি থাকতে পারে। এ পদ্ধতিতে সরকার প্রত্যেক কর্মক্ষম ব্যক্তিকে একটি আলাদা নাম্বারসহ "ন্যাশনাল আইডি কার্ড" প্রদান করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা না হলেও চলে যদি আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বারটিকেই ন্যাশনাল আইডি নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তো, সেই ন্যাশনাল আইডি কার্ডটি লিংক করা থাকে ঐ ব্যক্তির ব্যক্তিগত (নিজের পছন্দমত যে কোন ব্যাংকে) বেতন আ্যকাউন্টের সাথে। যে কোন চাকুরীপ্রার্থী চাকুরীতে যোগদানের আগে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী চাকুরীদাতা-কে সেটি প্রদর্শন করতে বাধ্য। চাকুরীদাতা তার কর্মচারীদের মাসের কর্মঘন্টার বিবরণী ও প্রতিমাসের বেতন যার যার সংশ্লিষ্ঠ ন্যাশনাল আইডি নম্বর বরাবর সরকারের কাছে জমা করে দেন। সরকার সেই বেতন থেকে যাদের বেতন কর আদায়যোগ্য সীমার মধ্যে পড়ে অর্থাৎ মাসিক ন্যুনতম আয়ের সীমার বেশি তাদের বেতন থেকে প্রযোজ্য অংশ কেটে বাকি অংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আ্যকাউন্টে জমা করে দেয়। পুরো ব্যপারটা ঘটে সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে এবং একদিনের মধ্যেই টাকা জমা হয়ে যায়, যার যার ব্যাক্তগত আ্যকাউন্টে। এই পদ্ধতির সুবিধাগুলো কি কি?

১। অবৈধ / অপরিচিত/ভিসাবিহীন ভিনদেশি কেউ নিয়োগ পাবার সুযোগ পাবেনা।
২। কেউ একাধিক চাকুরীতে যুক্ত থাকলেও তার কৃত মাসের মোট কর্মঘন্টা ও আয় সমন্বয় হয়ে যাবে।
৩। চাকুরীজীবিদের আয়কর দেয়া নিয়ে কোন চিন্তাই করতে হবেনা, কারো কাছে যেতেও হবেনা। তাই হয়রানির সুযোগই নেই।
৪। যখন কেউ বেকার থাকে, আপনা আপনি তার আয়কর দেয়াও বন্ধ থাকবে।
৫। সরকার প্রতিমাসেই জানতে পারবে, তার জনসংখ্যার কত কর্মক্ষম লোক বেকার আছে অথবা কাজ করছে। যেটা অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন!
৬। যে কারো জব এক্সপেরিয়েন্স/ইতিহাস খুব সহজেই জানা যাবে। আলাদা করে এক্সপেরিয়েন্স সনদ প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়বেনা।
৭। আয়কর বিভাগ শুধুমাত্র চাকুরিদাতাদের-কে মনিটর করবে, চাকুরীজীবিদের মনিটর করার প্রয়োজন পড়বে না। ফলে লোকবলও অনেক কম লাগবে।
৮। কোন চাকুরীদাতা যদি তার কর্মচারীদের-কে জোরপূর্বক "লেবার ল" নির্দেশিত মাসের মোট কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করান, তবে সেই চাকরিজীবীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার চাকুরীদাতাকে বাধ্য করতে পারে ওভারটাইম প্রদানে।
৯। চাকুরীদাতারা প্রদেয় বেতনভাতা নিয়ে সরকারের কাছে কোন ভুল তথ্য দিতে পারবেনা। ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠান থেকে স্বচ্ছ আয়কর বিবরণী পাওয়া যাবে।

উপরোল্লিখিত সুবিধাগুলো কয়েকটি মাত্র। পাঠক, আপনাদের জানামতে হয়ত আরো অনেক চমৎকার সব পদ্ধতি থাকতে পারে। তবু আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। যদি আপনাদের কাছে এই পদ্ধতি ভাল মনে হয়, আমরা সবাই মিলে হয়তো জনমত গড়ে তুলতে পারি। ফলে আমাদের সাধারন মানুষদেরই জীবনযাত্রা আরেকটু সহজ হবে।

বি: দ্র: আমি ইকোনোমিক্সের লোক নই। খুব ভাল ব্লগার/লেখক ও নই। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনাদের আলোচনা ও মতামত থেকে হয়তো আরো অনেক ভাল কিছু উঠে আসবে। তাতে সবারই উপকার হবে।