যা বাবা এবার তুই নাকে তেল দিয়ে ঘুমা। তোর সব মামলা মাফ করে দিয়েছি। তোর আর কোন টেনশন করার দরকার নেই। লক্ষীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা তাহের ছেলে এইচ এম বিপ্লব হয়তো এখন টেনশন মুক্ত হয়ে নাক তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। কি মজা। আমি এখন বেগুনাগার মাছুম বাচ্চা। আমার নামে কোন মামলা মোকদ্দমা নেই। সত্যইতো রাষ্ট্র যখন একজন খুনীকে মাফ করে দেয়, তারতো নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমানোর কথা।
প্রথম আলো পত্রিকার প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রের সর্বাত্মক তৎপরতায় লক্ষ্মীপুরের তাহেরপুত্র এইচ এম বিপ্লব এখন প্রায় মামলামুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা খুনের সর্বশেষ মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। এ তথ্য জেনে নিহতের বাবা আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের বহুল আলোচিত আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি তাঁর সেই সাজা পুরোপুরি মাফ করে দিয়েছেন। খুনের দায়ে বিপ্লবকে আর ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে না। কিন্তু কামাল ও মহসিন হত্যা মামলায়ও বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা হয়।
বাকি থাকল ফিরোজ হত্যা মামলা, যার কেবল বিচার চলছে। সাজা হওয়া না-হওয়া, মাফ পাওয়া না-পাওয়া—সব ভবিষ্যতের হাতে। কিন্তু 'রাজনৈতিক হয়রানিমূলক' মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি তো বর্তমান। সেখানে সুপারিশ গেল এবং কমিটি বিপ্লবের নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ অনুমোদন করল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৭ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসককে এই অনুমোদনের বিষয় জানিয়েও দেওয়া হলো।
এর আগে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই জাহেদ হত্যা ও এতিমখানায় অগ্নিসংযোগের মামলা থেকে বিপ্লবের নাম প্রত্যাহার করে নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা শুরু হয় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের নেতা তাহের ও তাঁর ছেলেদের। তাহের ও তাঁর দুই ছেলে এবং স্ত্রী একে একে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। কিন্তু পালিয়ে যান বিপ্লব। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে আত্মমর্পণ করেন তিনি। আদালত তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠান। গত ঈদুল আজহার আগে কারাগার ছেড়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের কক্ষে ওঠেন বিপ্লব। এ নিয়ে প্রথম আলোয় খবর প্রকাশিত হলে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এই হলো আমাদের স্বাধীন দেশের নমুনা। রাষ্ট্র নিজেই একজন খুনীকে কিভাবে লালন করে, তা প্রত্যক্ষ করছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে বিগত সরকারগুলো কয়েকজন খুনি মাফ করেছিলো। এটা ঠিক রাষ্ট্রপ্রতি ইখতিয়ার আছে তিনি চাইলে যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। তবে এধরনের জগন্য রাজনৈতিক অপরাধীকে রাষ্ট্রপ্রতি ক্ষমা, রাষ্ট্রকে হেয় করা হয়েছে। এ ক্ষমার ইতিহাস রাষ্ট্র তার নাগরিকের কাঠগড়ায় দাড়িয়েছে।