সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য নিয়ে হাবা পণ্ডিতের সাথে জ্ঞানী বলদ ও বুদ্ধিমান ছাগলের প্রতিবাদ

আরিফ হোসেন সাঈদ
Published : 3 March 2012, 03:05 AM
Updated : 3 March 2012, 03:05 AM

জ্ঞানী বলদ: স্যার কই যান?
হাবা পণ্ডিত: যাচ্ছি না কোথাও। কয়েকটা খবর পড়ে মাথা গরম হয়ে গেছে। নদীতে যাই গোসল করে মাথা ঠাণ্ডা করব।
জ্ঞানী বলদ: মাথা আমাগো আপনের থাইকা বেশী গরম। আমাগো লইয়া যান।
বুদ্ধিমান ছাগল: আমার মাথা তো গরম হয় নাই।
জ্ঞানী বলদ: তুই চুপ থাক বলদ।
বুদ্ধিমান ছাগল: স্যার তো একটার পর একটা ডুব দিয়াই যাইতাছে। ঠাণ্ডা জ্বর লাগব তো।
জ্ঞানী বলদ: ও স্যার আপনে আর কত ডুব দিবেন। শরীর খারাপ করব তো। এই বড় কাগজে কি লেহা?
হাবা পণ্ডিত: আমি ডুব দিতেই থাকব। এই কাগজে লিখা আছে সৈয়দ আশরাফের ঘৃণিত বক্তব্যের প্রতিবাদে আমি আমরণ ডুব দিব।
জ্ঞানী বলদ: স্যার এই সব কি কন। আপনের তো মাথা খারাপ। ছাগলরে চল পলাই। পাগলডা মইরা আমাগোরে ফাঁসাইয়া দিয়া যাইব।
বুদ্ধিমান ছাগল: চল স্যারেরে তুইলা আনি।
জ্ঞানী বলদ: কোন লাভ নাই। কি কুস্তীগিরের শইল দেখছস। উলডা আমরা পানি খাইয়া মরুম। চল স্যারের ভুলাইয়া ভালাইয়া তুইলা আনি।
বুদ্ধিমান ছাগল: স্যারেরে খালি কথার ভিতরে রাখুম। তাইলে ডুবানি বন্ধ হইবো। ও স্যার বিষয়ডা কি কন তো?
হাবা পণ্ডিত: আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ,ও মর্মাহত। সৈয়দ আশরাফ বলল এটি একটি সাধারণ ঘটনা! আমি আত্বহুতি দিব।
জ্ঞানী বলদ: ঘটনা খুইলা কন।
হাবা পণ্ডিত: আমরা একটি স্বাধীন দেশ। অথচ অন্য একটি দেশের সেনারা আমাদের দেশের নাগরিকদের হত্যা করছে। এটি কি মেনে নেয়া যায়! বল?
বুদ্ধিমান ছাগল: দেহ পাগলের কাণ্ড। এর লাইগা মরতে আইছে।
জ্ঞানী বলদ: গণ্ডগোল লাগছে নাকি?
হাবা পণ্ডিত: গণ্ডগোল? কিসের গণ্ডগোল? কি যাতা বলছ?
জ্ঞানী বলদ: ছাগলরে লাইনে আইতাছে। হুনলাম তারা ভারতে ঢুইকা ভারতের গ্রাম গুলাতে ডাকাতি করে। চোরাকারবারি,গরু চোর। ভাল মানুষ তো মারে না।
হাবা পণ্ডিত: কি বলছ তুমি এসব? বাংলাদেশীরা ভারতে ঢুকে ডাকাতি করে বা করেছে এখন পর্যন্ত বিশ্বস্ততা সূত্রে এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। বরং প্রায়ই ভারতীয়রা বাংলাদেশে ঢুকে পুড়িয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়ি। লুটে নিয়ে যায় সব। ভারতীয় প্রত্যক্ষদর্শীরাই এগুলোর সাক্ষ্য দিচ্ছে। আর এগুলোতে সরাসরি বিএসএফ সাহায্য করছে। তোমার কথা মত যদি ধরেও নেই তারা চোরাকারবারি,গরু চোর বা ডাকাত তাহলেও তো বিএসএফ হত্যা করতে পারে না। এর বিরুদ্ধে আইন আছে ভারত সেই নীতিমালায় স্বাক্ষরও করেছে। আর তারা যদি অপরাধ করে থাকে তার জন্য আইনি বিচার হবে। এভাবে হত্যা,নির্যাতনের দায়ে বিএসএফকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়। এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি,সীমান্ত হত্যার দায়ে বিএসএফের বিচার হওয়া উচিত।
জ্ঞানী বলদ: দেহেন এতো বড় সীমান্ত। হেই সীমান্তে কত চোরাচালান কত অপরাধ হয়। অপরাধ ঠেকানের লাইগা তো এমন দু একটা ঘটনা হইতেই পারে। তাইনা?
হাবা পণ্ডিত: না হতে পারে না। এগুলো একটি বা দুটি ঘটনা নয়। শুধু ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিএসএফ ৯৯২ জনকে হত্যা করেছে আর এই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে ৯৮৭ জন। অপহরণের শিকার হয়েছে এক হাজার বাংলাদেশী। নিখোঁজ হয়েছে দু শতাধিক আর পুশইনের শিকার হয়েছে তিন শতাধিক।১ পৃথিবীর আর কোথাও বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্রের সাথে এমন আচরণ তো দূরের কথা কোন শত্রু ভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সাথেও নেই। নেই ভারত-পাকিস্তান এমনকি ফিলিস্তিন-ইসরাইল সীমান্তেও। গত ১০ বছরে ইসরায়েলের মাটিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্তে হত্যা করা হয়েছে ৭২ জন ফিলিস্তিনিকে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্তে মারা যায় দুই পক্ষেরই মানুষ। আরও যা লক্ষণীয় পৃথিবীর অন্যতম মাদক পাচারকারী সীমান্ত আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত যেখানে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে মেক্সিকোর নিরস্ত্র মানুষ গুলি খেয়ে মরেছে,এ ঘটনা খুব বিরল এবং এমন ঘটনা ঘটলে বিচারিক তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র।২
জ্ঞানী বলদ: ঠিক আছে বুঝলাম বিএসএফ অন্যায্য করতাছে। কিন্তুক বাংলাদেশীগুলান অগো দেশে চোরাচালানি,গরু চোরাকারবারি করে কেন?
হাবা পণ্ডিত: এটি ভারত বা বিএসএফের সাজানো নাটক। ভারতের বাজারে একটি গরুর যা দাম বাংলাদেশের বাজারে তার ৩০ গুন বেশী দাম পাওয়া যায়! ভারত চাহিদার অতিরিক্ত গরু উৎপাদন করে। বেশী লাভের আশায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে গরু চোরাকারবারি করে। বাধ্য হয়ে অবৈধ পথে আমাদের গরু আনতে হয় কারণ ভারত সরকার এর সুযোগ বন্ধ করে রেখেছে। "আর এই চোরাকারবারির নেপথ্যে ভারতের রাজনীতিবিদ,প্রশাসন থেকে শুরু করে বিএসএফ পর্যন্ত জড়িত।"৩ আর এটি এখন প্রমাণিত ভারত বাংলাদেশের মাদক জগতকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে সীমান্ত এলাকায় বহু ফেন্সিডিল কারখানা নির্মাণ করে। বাংলাদেশীদের তারা শুধু ব্যাবহার করছে। আর এর নির্মম শিকার বাংলাদেশ।
জ্ঞানী বলদ: ঠিক আছে মানলাম আপনের কতা। আগের সরকারগুলার সময় কি সীমান্ত হত্যা হয় নাই?
হাবা পণ্ডিত: হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু এমন দুঃসাহস কেউ দেখায়নি। যেখানে প্রতিদিন মানুষ মারছে সেখানে তো প্রতিবাদ করছেই না উল্টো বিএসএফের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন জানাচ্ছে। যেখানে ভারতের মিডিয়া বলছে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা উচিত যেখানে ভারত সরকার বলছে তারা সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবে সেখানে আমাদের দেশের সরকার ভবিষ্যতে এমন সীমান্ত হত্যার গ্যারান্টি দিলেন। যেখানে সারা পৃথিবীর মানবাধিকার সংস্থা উদ্বিগ্ন,চিন্তিত সেখানে আমাদের সরকার চিন্তিত নয়। যে সীমান্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর সীমান্ত যে সীমান্তে সবচেয়ে বেশী নিষ্ঠুরতা চালানো হয় সে সীমান্তের হত্যা নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের সরকার তিলকে তাল না করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ লজ্জা আমি রাখি কোথায়? ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করছে না। প্রতিদিন বাংলাদেশীদের হত্যা নির্যাতন চলছেই। প্রকাশিত হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনা। এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেখা মাত্রই সীমান্তে গুলি করে মারছে। কখনও কখনও আমাদের সীমান্তে এসে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের নাগরিক। ভারত বার বার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। যেখানে জীবন মরণের প্রশ্ন সেখানে এভাবে মৌখিক আশ্বাস চলতে পারেনা। পৃথিবীর আর কোথাও এমন নজির নেই।
সরকারের এই ঘৃণিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের গণ আন্দোলন শুরু করতে হবে।
বুদ্ধিমান ছাগল: আর সৈয়দের মুখে কুলুপ লাগান দরকার।
হাবা পণ্ডিত: বিএসএফের অত্যাচার নির্যাতন যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কল্পনাতীত। হাজারো ঘটনার আড়ালে প্রকাশিত কিছু ঘটনা দেখলেই বুঝা যায়। জীবিকার সন্ধানে বাবা-মার সঙ্গে ইট ভাটায় কাজ করতে ভারতে গিয়েছিল ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানি। কাঁটাতারের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে নিজ দেশে ফেরার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে বিএসএফ সদস্যরা। ফেলানি তার স্বপ্ন নিয়ে পাখির মত ঝুলে পড়ে কাঁটাতারে। চার ঘণ্টা প্রাণ নিয়ে পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকে ফেলানি। এক সময় কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থাতেই তার মৃত্যু ঘটে।৪ জাওরানী গ্রামের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অবুঝ শিশু বিষাদকে ৭ নভেম্বর ধরে নিয়ে যায় বিএসএফের। অবুঝ শিশু বিষাদকে দেখে না মা শান্তি বালা পাগল হয়ে গেছেন।৫ আজও বিষাদকে ফেরত দেয়নি বিএসএফ। কি করেছে তারা বিষাদকে? কি অন্যায় করেছিল বিষাদ? তারপরও সরকার একে তাল বলছে। এটি কি কোন সরকারের কাজ হতে পারে! এই সরকারকে আমি কোন ভাষায় সংজ্ঞায়িত করব খুঁজে পাচ্ছিনা।
জ্ঞানী বলদ: আমি ও পাইতাছিনা। চলেন ডুব দেই। আমরণ ডুব।
বুদ্ধিমান ছাগল: আমরণ ডুব।
সুত্রঃ ১ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। ২ প্রথম আলো। ৩ Los Angeles Times. ৪, ৫ বাংলাদেশ প্রতিদিন।
আরিফ হোসেন সাঈদ
০৩/০৩/১২, নারায়ণগঞ্জ।