প্রতারণাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র খুলতে হবে

আরিফ হোসেন সাঈদ
Published : 11 March 2012, 09:08 AM
Updated : 11 March 2012, 09:08 AM

ব্লগার আবু সাঈদ আহমেদের ''রাজনীতিকে শিল্প ঘোষণা করা হোক" পোস্টটি পড়ে ভাল লাগল। সেই পোষ্ট থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই কিছু লিখতে বসলাম। কিছু দিন আগে একজনের সাথে বর্তমান রাজনীতি ও রাজনৈতিকদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ফাঁস হয়ে যাওয়া তাদের দুর্নীতি এসব। কথা হচ্ছিল অনেক বিষয় নিয়ে। জানতে পারলাম, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে প্রচুর অর্থসম্পদ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক তারা। তো কথার মাঝখানে একজন বললেন, রাজনীতিবিদদের ছেলেমেয়েরা সব আমেরিকা-বিলেতে আর যারা অ আ ক খ পরতে পারেননা তারাই শুধু বাংলাদেশে আছেন রাজনীতি করার জন্য।

বর্তমানে রাজনীতি যে একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে তা না বললেও চলে। ব্যবসায়ী গণ রাজনীতি করেন ব্যবসায়ীক স্বার্থে, দেশের স্বার্থে নয়। এতে অনেক সুফল পাওয়া যায়, যেমন ট্যাক্স দিতে হয় না, প্রতিদ্বন্দ্বী সব মালিকদের চেয়ে অগ্রাধিকার বা কোন প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ারই সুযোগ থাকেনা, পণ্যমান নিয়ে কোন সমস্যা হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন কেউ যদি কোন খারাপ কাজ করে তাকে ব্যবসার সাথে তুলনা দেয়া হয়। বলা হয় অমুক ব্যবসা করেন। অর্থাৎ ব্যবসা খুবই খারাপ চোখে দেখা হয়। আর কেউ যদি প্রতারণা করে বলা হয় আমার সাথে পলিটিক্স! অর্থাৎ সবাই জেনে গেছেন এখন পলিটিক্স মানেই প্রতারণা। পলিটিসিয়ানদের সবাই প্রতারক হিসেবেই চিনে। যে যত বড় পলিটিসিয়ান সে তত বড় প্রতারক।

রাজনীতিতে এখন আর কোন বুদ্ধিবৃত্তিক, দেশপ্রেমিকদের দেখা যায় না। রাজনীতিতে এখন ডনদের আনাগোনা। সেই ডনদের ইতিহাসও খুব হতাশাজনক। একসময়ের পকেটমার বা গরু চোর এখন মস্ত বড় পলিটিসিয়ান। এটাই বাস্তবতা।

শোনা যায় দলের মনোনয়ন পেতে একটাই এখন শর্ত, কয়েক কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ আর বিএনপিতে টাকার পরিমাণ নিয়ে আবার প্রতিযোগিতাও চলে। শুকুর যদি বলে ২ কোটি দিবে তবে ভকর বলে ৫ কোটি। এটাই হচ্ছে বর্তমান রাজনীতির টাকার একটি বড় উৎস। তাদের অতীত যাই হোক টাকার কাছে সব অপরাধ ধুয়ে যায়। তারা হয়ে উঠেন দেশের জনদরদি নেতা। বাংলা ছবিতে বর্তমান রাজনৈতিকদের উত্থান পর্ব থাকে। কিভাবে তারা তাদের রাজ্য পরিচালনা করেন তাও থাকে।

সবটা দোষই যদি রাজনৈতিকদের দিয়ে দিই তাহলে হবে কেমনে। আমাদের দোষও যে সমানে সমান। কোরান হাদিসে একটি কথা আছে, যে জাতি যোগ্য নেতার উপযুক্ত না যে জাতি নাকি উপযুক্ত নেতা পায়ও না। কথাটি যে সত্যি তা আমাদের দেশের দিকে তাকালে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়ে এক চায়ের দোকানে আড্ডায় শুনলাম বলা হচ্ছে, ''অমুক তো অনেক ভাল ছিল। তারে কে কইল রাজনীতিতে যাইতে? এত ভালা একটা লোক কেন রাজনীতিতে গেল?'' এটা হল গ্রামের অশিক্ষিত-শিক্ষিত চাষী ভাইদের কথা।

রাজনীতির মঞ্চ এখন হায়েনাদের দখলে। এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। আমাদের আলোচনার বিষয়ও সেটা নয়। আসুন দেখি শহরের লোকেরা কি বলেন?

আমাদের রাজনীতিতে সূর্য যে উঠার চেষ্টা করেনি তা কিন্তু নয়। কিছুদিন আগে নোবেল জয়ী ইউনুস বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে শুরু করে আমরা সাধারণ জনগণ পর্যন্ত তার ঘোর বিরোধিতা করলাম। সবার একই মত তিনি ভাল মানুষ, সম্মানিত ব্যক্তি তিনি কেন রাজনীতিতে! শুরু হল এই অপরাধী সুদখোরের পেছনে লাগা। তার পায়ে পড়ানো হল শিকল, তিনি যতই সামনে দিকে যেতে চান সবাই পেছন থেকে টানে। একপর্যায়ে রাগে দুঃখে তিনি নিজেই রাজনীতি থেকে সরে দাড়ালেন।

হয় আওয়ামী লীগ নয়তো বিএনপি, এভাবেই চক্রাকারে এই দুর্নীতিবাজদের আমরা বার বার ক্ষমতায় বসাচ্ছি। এবার আওয়ামী লীগ থেকে প্রতারিত হয়ে সেবার বিএনপিকে আবার বিএনপি থেকে প্রতারিত হয়ে আওয়ামী লীগকে। এভাবেই আমরা প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর এক কঠিন খেলা দেখি। যে খেলা মরণ খেলা। কিন্তু কি করব? আমরা যে এই খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েছি? অনেকদিন আগে আমি একটি বিতর্ক শুনেছিলাম। একজন বিতার্কিক বলছিলেন, অনেক তো দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় বসালেন, একবার না হয় এক সুদখোরকে বসিয়ে দেখতেন?

আমরা যে মরণ খেলায় নেমেছি তার জন্য প্রতারণাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র খুলতে হবে।

আরিফ হোসেন সাঈদ
০৩/১০/১২, নারায়ণগঞ্জ।