ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই

আরিফ হোসেন সাঈদ
Published : 2 May 2012, 05:30 AM
Updated : 2 May 2012, 05:30 AM

কে বলেছে আমাদের সরকার নিষ্কর্মা? আমাদের সরকার জনগণের দুঃখ বুঝে না? জনগণের কথা কানে দিয়ে ঢুকে না? একটি সরকারকে জনগণের পক্ষের সরকার প্রমাণ করতে হাজারটি বিষয়ের দরকার নেই। একটি বিষয়ই যথেষ্ট। যেমন ধরুন ইলিয়াস আলীর ব্যাপারটিই। তার স্ত্রী সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন, জীবিত বা মৃত হলেও যেন সরকার ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেন। একবার ভেবে দেখুন একটি মানুষ বা একটি পরিবার কতটা নিরুপায় বা অসহায় হলে একজন মৃত মানুষের জন্য অপেক্ষা করে তার মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পেতে চায়। আমি বলব সরকার অবশ্যই মিসেস ইলিয়াসের দুঃখে মর্মাহত হয়েছেন। সেই মোতাবেক সরকারের বখে যাওয়া সন্তান হলেও কিন্তু RAB জানায়, তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল উদ্দেশ্যই ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করা। জীবিত বা মৃত সেটি ইমপরট্যান্ট নয়। খুঁজে পাওয়াই হল ইমপরট্যান্ট। RAB'এর কথা শুনে মনে হল আইনশৃঙ্খলারও ঊর্ধ্বে যে বাহিনীটি যাদের এতো চোখ রাঙানি যাদের কথা শুনে শিশুরা বিছানা নষ্ট করে ফেলে সে বাহিনীটিও এখন মিসেস ইলিয়াসের মতই অসহায়। তারাও মৃত হলেও অন্তত ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পেয়ে সান্ত্বনা পেতে চায়। তারা আর গর্ব করে বলতে চায় না বা আমাদের নিশ্চয়তা দিতে চায় না ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন। তাহলে বোঝা গেল আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা মত শক্তি আমাদের দেশে আছে যাদের কাছে আমাদের কালো বাহিনীও বিছানার শিশু। কালো বাহিনীর দম এত কম সেটি আসলে বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু কি সেই শক্তি যার কাছে সরকার এক কথায় পরাজিত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এক কথায় পরাজিত, দেশ এক কথায় পরাজিত? তাহলে আমাদের নিশ্চয়তা কোথায়?

যাক সে কথা আজ আমরা অন্তত এতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, ইলিয়াস আলী বেঁচে নেই। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান আমাদের অন্তত এটুকু নিশ্চিত করেছেন, ইলিয়াস আলী খুন হয়েছেন এবং এ কারণে মিসেস ইলিয়াস এখন বিধবা। অনিশ্চয়তা বড় খারাপ জিনিস। সেটি বড় ভয়ংকর। আজ সরকার অন্তত আমাদের এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। সেই সাথে ইলিয়াসের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকা মানুষগুলোও এটুকু জেনে স্বস্তি পেয়েছেন যে, ইলিয়াস আলী মৃত। এখন মিসেস ইলিয়াস নিশ্চিন্ত মনে সাদা শাড়ি পড়তে পারেন। সরকারের প্রথম দায়িত্ব শেষ। এখন শেষ দায়িত্ব শুধু এইটুকু খুঁজে বের করা, ব্যাস। আমরা আবার স্লোগান দিব। মার্কাটা কি ** …

এখন সরকারের জন্য পরামর্শ।

ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পেতে এখন সরকারেরই সবচেয়ে বড় সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে। প্রথমে মন্নুজান অর্থাৎ সরকারের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কৃতজ্ঞতা-বার্তা পাঠানো উচিত। তারপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈধ হেফাজতে নিয়ে মন্নুজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। যেমন, ইলিয়াস আলী কিভাবে গুম হলেন, খুন হলেন, কারা এই নীল নকশার সাথে জড়িত, সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পথভ্রষ্ট কেউ এতে জড়িত আছে কিনা। এর সাথে তার সম্পৃক্ততা কি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলেই সব তথ্য বের হয়ে আসতে পারে বলে আশা করা যায়।
তবে মন্নুজানের একটি বক্তব্য ঠিক স্পষ্ট না। তিনি কেন প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বা বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন বুঝলাম না। হয় উনার কথা বলায় সমস্যা আছে নয়তো কোন বদ মতলব আছে। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে তাই এ কাজ (গুম ও খুন) তিনি (শেখ হাসিনা) করতে পারেন না। আমরা কেউ তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দোষ দিইনি। তিনি কেন এ প্রসঙ্গ টেনে আনছেন?

এখন উনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যা বলতে হয়, নৈতিকতা নিতান্তই আপেক্ষিক বিষয়। নৈতিকতার যুক্তিতে কেউ অপরাধ করতে পারে না এ যুক্তিতে কেউ কোনদিন পার পেয়েছে? আশা করি সরকার দেশের প্রতি দেশের স্বার্থে ও মঙ্গল কামনায় মনোযোগী হবেন।

ধন্যবাদ।

আরিফ হোসেন সাঈদ
১ মে ২০১২